বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা সমস্যা

আর কতকাল বোঝা বইতে হবে

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা কবে তাদের স্বদেশে ফিরে যাবে এ বিষয়টি সংশয়ের ঘেরাটোপে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রতিবেশী দেশের ১১ লাখেরও বেশি বিপদাপন্ন নাগরিককে আশ্রয় দিলেও তা নিজেদের জন্যও ঘোরতর সমস্যা সৃষ্টি করছে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে কোনোভাবেই এত বেশিসংখ্যক বিদেশিকে দীর্ঘদিন ধরে রাখা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে হাজার হাজার গাছপালা নিধন করতে হয়েছে। পাহাড় টিলার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের নিরাপত্তার জন্যও সৃষ্টি করছে হুমকি। অথচ এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি এখন নানা শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানজনকভাবে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের প্রমাণ করতে হবে, তারা রাখাইনের বাসিন্দা ছিল। অথচ মিয়ানমারে বংশ পরম্পরায় অবস্থান করলেও দীর্ঘসময় ধরে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত ছিল রোহিঙ্গারা। তাই তাদের পক্ষে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রমাণ করা এমনিতেই কঠিন। তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে, নাগরিকত্ব, ক্ষতিপূরণ ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার ছাড়া রোহিঙ্গাদের বড় অংশই স্বদেশে ফিরে যেতে চায় না। মিয়ানমারও এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা না দিয়ে কালক্ষেপণ করছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলও দুই ভাগে বিভক্ত। চীন, রাশিয়া, ভারতের মতো দেশগুলো রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে নিছক বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে দেখছে। পশ্চিমা দেশগুলো এটাকে বৈশ্বিক সংকট বললেও মিয়ানমারে তাদের স্বার্থ থাকায় বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যেতেই ব্যস্ত। বেশির ভাগ দেশ অবশ্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানজনকভাবে প্রত্যাবাসন সমর্থন করার কথা বললেও সেখানে ফেরার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশেই তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার পক্ষে। এ জন্য বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগেও দ্বিধা করছে না। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পড়েছে ত্রিশঙ্কু অবস্থায়। এ অবস্থা মোকাবিলায় সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও তৎপর হতে হবে। বিশেষত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অভিন্ন বন্ধু দেশ চীনের ওপর এ ব্যাপারে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর