রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নির্মল সুন্দরের অভিষেক হোক

নূরে আলম সিদ্দিকী

নির্মল সুন্দরের অভিষেক হোক

নির্বাচনী খেলা, প্রবীণ ও পুরাতনদের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রিসভাটি ভেঙে দিয়ে চমকপ্রদ একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন সম্পন্ন করে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বার্তা প্রদান করতে চেয়েছিলেন তার সঙ্গে মোটামুটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল ধাতস্থ হতে পেরেছে। অন্যদিকে সফলতা এই যে, নির্বাচন ও তার পরবর্তীতে অজানা-অচেনা ব্যক্তিসমষ্টিকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের কোনো যথার্থতা প্রমাণের প্রয়োজন পড়েনি সরকারপ্রধানের। বরং প্রমাণিত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সব সিদ্ধান্তই সঠিক হিসেবে মেনে নেওয়াই এখনকার রাজনীতির একটি ডিজাইন বা স্টাইল। এর কোনো ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম হলে সেটিই বরং নাজায়েজ। রাজনীতিতে আজ যে ধারা প্রবাহিত তা হলো, শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত সব সিদ্ধান্তই অন্য সবকে কেবল মানতে হবে তাই নয়, বরং চলনে বলনে প্রতিটি পদক্ষেপেই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে হবেÑ আহা বেশ বেশ বেশ! জাঁকজমকপূর্ণ যেসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সংগঠনে, মন্ত্রিসভায় সগৌরবে বিরাজ করতেন, তারা কতটা নিষ্প্রভ, নিরর্থক ও সত্যিকার অর্থে সেটাই তুলে ধরার জন্য শেখ হাসিনা যে উদ্যত উদ্গত উদ্ধত সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন তা যেন পূর্ণায়ত পদ্মটির মতো প্রস্ফুটিত হয়ে আপন গৌরবে প্রতিভাত হলো। নির্বাচনী বিজয়টি যে শেখ হাসিনারই একক ব্যক্তিত্বের অর্জন, সবটুকু তারই প্রাপ্যÑ এ ব্যাপারটি আজকে নিশ্চিতভাবে প্রতিস্থাপিত। বলাই বাহুল্য, এ নির্বাচনে বিজয়ে আর কারও বিন্দুমাত্র অংশীদারিত্ব নেই বা ছিল না, এটিই প্রতিষ্ঠিত হলো মরুভূমির নিষ্কলুষ সূর্যরশ্মির মতো। সামাজিক অনুষ্ঠানে ও রাজনৈতিক আড্ডায় অনেকেই শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তটিকে প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করেছিলেন। বাংলার রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশে একটা গুমোট আবহাওয়ার আশঙ্কা স্বকল্পিত চিত্তে অনুভবও করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু আমি নির্বিকার চিত্তে এসব আলোচনা এড়িয়ে যেতাম এ কারণে যে, আমার ধারণা এ সিদ্ধান্তের তরঙ্গপ্রবাহে যাদের তরণী নিমজ্জিত হবে, তারা সবাই অবিচল চিত্তে সিদ্ধান্তটিকে শুধু গলাধঃকরণই করবেন না, বরং বেমালুম হজম করে যাবেন। সেখানে আমার কুৎসিত নাক গলানো নিতান্তই অনভিপ্রেত এবং অপাঙ্ক্তেয় হবে।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে টোটালিটেরিয়ান সরকারব্যবস্থার প্রবণতা প্রচন্ডভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছোট-বড় সব রাষ্ট্রেই বিরোধী দলগুলোকে ক্রমেই যেন বিবর্ণ ও নিষ্প্রভ হয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। একটা রাজনৈতিক দল প্রচন্ড প্রতাপে ছলেবলে-কৌশলে দীর্ঘদিন দেশ শাসন করবে, ৫, ১০ বা ২০ বছর নয়, অর্ধ অথবা পুরো শতাব্দীর জন্যই রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে এবং সেই কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর থাকবে, এটাই যেন আজ রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এখানে জনমতের উত্থান-পতন বা রাজনৈতিক বিরোধিতা ও বিস্ফোরণের কোনো বিবেচনাই আসে না। মনে হয় যেন ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত যারা তারা অজর অমর অক্ষয়। বিরোধী দলের বা জনগণের তো প্রশ্নই ওঠে না, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় স্বয়ং আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে তারা অনাদিকাল ক্ষমতায় থাকার ছাড়পত্র নিয়ে বসে আছেন। যারা দেশের প্রান্তিক জনতা, তারা ক্রমেই জীবন ও জীবিকার কাজে এতটাই ব্যাপৃত হয়ে উঠছেন যে, রাজনীতির আলোচনায় অনেকটাই অনাগ্রহী। নির্বাচন, রাজনৈতিক কার্যক্রম এক ব্যক্তির হাতে নির্দিষ্ট বিধায় এতে অংশগ্রহণ, এর আলোচনা ও পর্যালোচনা ক্রমেই যেন একটি নির্দিষ্ট সীমানার আবর্তে রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগে নির্বাচন এলে প্রার্থী এবং জনগণের মধ্যে যে উত্তেজনা ও উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হতো, আজকাল তা হয় না, বরং ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রার্থীদের প্রচ-ভাবে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। আরেকটি মজার বিষয়, উল্লেখযোগ্য প্রতিটি দলের সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতেই অবরুদ্ধ।

তাই আগের মতো নবীন-প্রবীণ, আতি-পাতি, ছোট-বড়-মধ্যম কোনো নেতার কাছেই মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ধরনা দিতে বা তদবির করতে দেখা যায় না। বরং সব কর্তৃত্ব নিয়ে দোর্দ- প্রতাপে দলে অধিষ্ঠিত নেতা বা নেত্রী বাদে অন্য সব নেতা বা নেত্রীÑ বাইরে থেকে তাদের যত জাঁদরেল বা প্রভাবশালীই মনে করা হোক না কেন বাস্তবে তারা সবাই আজ্ঞাবহ। এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে সবাই নিজের মনোনয়নপ্রাপ্তির জন্য ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে থাকেন। অন্যের জন্য তদবির করতে গেলে নিজের মনোনয়নের ভাগ্যেই বিড়ম্বনা এসে যেতে পারে, এ চিন্তায় তারা বিচলিত থাকেন।

এটা ঠিক, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দলগুলোয় একটি মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগে কাউন্সিলের সময়ই সাধারণত এ মনোনয়ন বোর্ডটি গঠন করা হয়। আদলে অবয়বে দলের প্রধান ব্যক্তিত্বরাই এ বোর্ডে স্থান পান বিধায় বোর্ডটির সদস্যপদ বাহ্যিকভাবে চমকপ্রদ, আকর্ষণীয় ও অতি সম্মানের। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যসংখ্যা ১২। মজার কথা হলো, এই অতি গুরুত্বপূর্ণ মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরাও তাদের অবস্থান ও অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন এবং নির্বাচনের প্রার্থীরাও বোর্ডের বাস্তবিক ক্ষমতা সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত ও অবগত বলেই তাদের কাছে ধরনা দিয়ে অনর্থক বিব্রত করেন না। একমাত্র গঠনতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার কারণেই বোর্ডটি গঠিত হয়, যথারীতি বোর্ডের সভাও হয়। আগ্রহী প্রার্থীদের প্রায় প্রত্যেককেই বোর্ডে ডেকে আগে যে সাক্ষাৎকারের প্রচলন ছিল তাও এখন বিলীনপ্রায়। যে নির্বাচনী এলাকায় গ্রুপিং সমস্যা প্রচ- প্রকট এবং অত্যন্ত জটিল, সেখানে একটা সমঝোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মনোনয়ন বোর্ডকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। তবু সেখানে প্রার্থীর যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও এলাকায় গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নটি প্রাধান্য পায় না। তাই সব ক্ষেত্রেই মূল নেতৃত্বের অন্তর্নিহিত সিদ্ধান্তটিই চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনের সময়ও কোনো যথাযথ সমঝোতার মানসিকতা তৈরি হয় না। সবাই মিলে একযোগে বা একজোট হয়ে নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন না। আমি বিস্ময়াভিভূত হয়ে ভাবী, এই বিভাজন আজ তৃণমূল পর্যায়েও যখন পৌঁছে গেছে, তখন অলৌকিক কারণেও যদি কোনো দিন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তখন দলটির অবস্থা অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? রাজনৈতিক প্রশ্নে তো বটেই, এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানেও এই বিভাজিত মানসিকতার যে উৎকট চেহারা ভেসে ওঠে, তা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কোনো ব্যক্তির হৃদয়ই তাতে আতঙ্ক এবং আশঙ্কায় কুঁকড়ে কেঁদে ওঠে। অমিত ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বও এ বিভাজন নিরসনে নিতান্তই অক্ষম ও অসহায়। এ অবস্থাটি দলটিকে ভিতরে ভিতরে ক্রমান্বয়ে শুধু দুর্বলই করছে না, আদর্শচ্যুতি, নৈতিকতার বিচ্যুতি এবং অরাজনৈতিক ভাবনার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করছে। এটা শুধু সংগঠনের জন্যই নয়, দেশের জন্যও প্রচ- উদ্বেগজনক।

অনেকেই আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং আমিও মনে মনে ভাবী, এই আত্মঘাতী সর্বনাশা অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব এবং তার একমাত্র অবলম্বন হলো, সংগঠনের তৃণমূল পর্যায় থেকে সত্যিকার গণতন্ত্রের অনুশীলন ও চর্চা এবং তৃণমূল পর্যায়ের প্রত্যেক কর্মীর যথাযথ মূল্যায়ন। এবং তাদের চেতনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, ভাবনার কণায় কণায় এ বিশ্বাসকে প্রতিস্থাপিত করা যে, সংগঠনের যে কোনো কার্যক্রম পরিচালনায় তৃণমূলে অবস্থিত কর্মীদের ভূমিকাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সংগঠনের একক নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত শেষ কথা নয়, বরং তৃণমূল পর্যায়ের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের সিদ্ধান্তের আধার ভাবতে হবে। শুধু ভাবলেই চলবে না, অনুশীলন ও চর্চায় এ চেতনাটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ কথা আজ সর্বজনজ্ঞাত, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগই স্বাধীনতা সংগ্রামের রাজনৈতিক শক্তির মূল উৎস ছিল। অযুত-নিযুত নিষ্ঠাবান, নিঃস্বার্থ উজ্জীবিত উদ্বেলিত কর্মীর কর্মোদ্যম সততা ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দলটিকে দেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব এত সুদৃঢ়ভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধ শুধুই রাজনীতিকদের নয় বা শুধু রাজনৈতিক স্লোগান ছিল না। জাগ্রত, দৃপ্ত, উদ্বেলিত জনতার হৃদয়ের অনুরণন হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতার প্রদীপ্ত বাণীটি। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রাসঙ্গিক, স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল প্রতীক বা একতার প্রতিচ্ছবি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু রাজনৈতিক নিরিখে বিশ্লেষণ করলে প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মির মতো এটি প্রতিভাত হবে যে, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্রমাগত কর্মপ্রচেষ্টা বঙ্গবন্ধুকে ওই উচ্চতায় প্রতিস্থাপিত করে। আজকের রাজনীতিতে একটা প্রবণতা অতি স্পষ্ট, স্বাধীনতার একমাত্র কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুরÑ এই ভ্রান্ত ধারণাটি প্রচার ও প্রচারণায় এত উদগ্রভাবে এসে গেছে যে, স্বাধীনতার পথপরিক্রমণে অন্য কোনো ব্যক্তিত্ব তো নয়ই, এমনকি কোনো সংগঠনেরই যেন কোনো অস্তিত্ব নেই।

আজকে তাই সময় এসেছে মূল সত্যটিকে তুলে ধরার। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং তার নেতৃত্বকে তিল তিল করে প্রতিষ্ঠিত করেছিল ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক আন্দোলন ও সুদীর্ঘ পথপরিক্রমণ। ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সংগঠন। এগুলো কোনো কল্পনাপ্রসূত বায়বীয় পদার্থ নয়। এ সংগঠন দুটির নিজস্ব আদর্শ ছিল, রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। কাগজে-কলমে তা আজও বিদ্যমান। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয় না। অগণিত ত্যাগী, নিবেদিত একনিষ্ঠ ও অনির্বাণ কর্মীবাহিনী ছিল, যারা পরিচালিত হতো সংগঠনের তদানীন্তন নেতৃত্বের অমোঘ নির্দেশে। এটা কে না জানে, বঙ্গবন্ধু নিজের মুখে যে কথাটা বলতে পারতেন না, সেই কথাটাই বজ্রনির্ঘোষে উচ্চারিত হতো ছাত্রলীগের তদানীন্তন নেতৃত্বের কণ্ঠে। ’৭০-এর নির্বাচনে যে অভূতপূর্ব বিজয়, তারও অগ্রদূত ছিলেন বঙ্গবন্ধু কিন্তু চালিকাশক্তি ছিল ছাত্রলীগ। আমি বহুবার এ কথাটি বলেছি, আমৃত্যু বলে যাবÑ বঙ্গবন্ধুকে প্রদীপ্ত সূর্যের সঙ্গে তুলনা করা হলে ছাত্রলীগ ছিল তাঁকে বক্ষে ধারণ করা দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশ। বঙ্গবন্ধুকে সাগরের সঙ্গে তুলনা করা হলে তার উচ্ছ্বসিত ঊর্মিমালা ছিল ছাত্রলীগ। বিশাল মরুভূমির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা হলে তার বিন্দু বিন্দু বালুকারাশি ছিল ছাত্রলীগ, অর্থাৎ তার অসংখ্য কর্মী।

অথচ বেদনাহত চিত্তে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সেসব প্রদীপ্ত ঘটনাপ্রবাহকে সুকৌশলে আড়াল করার চেষ্টা ক্রমাগত প্রকট হচ্ছে। যদিও ইতিহাস তার আপন স্বরূপে প্রতিভাত হবেই। তবু আজকের এহেন অপচেষ্টার প্রতিবাদ করা প্রতিটি ইতিহাসসচেতন নীতিবান মানুষের নৈতিক কর্তব্য। ছাত্রলীগকে বাদ দিয়ে তার নেতৃত্বের নাম মুছে ফেলে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অম্লান অবদানকে অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হয় না, বরং তাঁর অবমূল্যায়নই করা হয়। যার যেখানে যতটুকু অবদান আছে, সেটাকে অকপটে স্বীকার করাই গৌরবের। বরং অবমূল্যায়ন করার যে কোনো অপচেষ্টা যারা করেন বা করছেন, ইতিহাসের বিচারে একদিন তারা দন্ডনীয় হবেন।

আমি সবিনয়ে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ইংরেজরা ২০০ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়ও সিরাজউদ্দৌলার অন্ধকূপের অপপ্রচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। আজকের অবস্থা অবলোকন করে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস থেকে ছাত্রলীগ ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সব অবদানকে আড়াল করার সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রাণের নৈতিক দায়িত্ব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বৈদ্যুতিক মাধ্যমসহ সব সংবাদমাধ্যম হয়তো চাপের মুখে আজ ইতিহাস বিকৃতির ঘৃণ্য খেলায় শরিক হয়েছে। অথচ তাদেরই নৈতিক দায়িত্ব সত্যকে সামনে টেনে আনার, সব ধরনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখার।

২৮ বছর পর হলেও আগামী মার্চে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আশা করি, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত সত্যিকার প্রতিনিধিত্বমূলক নতুন ও প্রাণবন্ত নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। তারা সত্যের বার্তাবাহক হবে, লেজুড়বৃত্তির রাজনীতিকে সংহার করে সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করবে। সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক, রাষ্ট্রীয় জীবনে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক, নির্মল সুন্দরের অভিষেক হোক, জীবনসায়াহ্নে দুই চোখ মেলে আমি সেই সূর্যস্নাত আলোকোজ্জ্বল মুহূর্তগুলোকে আলিঙ্গন করে যেতে চাই।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর