মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস

মুফতি শামছুল হক সাদী আল-হাবীবী

সাধারণত দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দুনিয়ার প্রতি লোভ-লালসা, অভাব-অনটন, মদ ও নারী ইত্যাদি নানাবিধ কারণে হয়ে থাকে। মিশকাত শরিফে আছে, প্রিয় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দুনিয়ার মুহাব্বত সব গুনাহের মূল। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা মা-ইদাহ্র ৯০-৯১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা/পূজার বেদি এবং ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কর্ম, কাজেই তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং মহান আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা কী এখনো নিবৃত্ত হবে? সূরা ক্বসাসের ৭৭ নম্বর আয়াতে আছে, পৃথিবীতে অনর্থ বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় মহান আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীকে/ সন্ত্রাসীকে পছন্দ করেন না। সূরা আল-আরাফের ৫৬ নম্বর আয়াতে আছে, পৃথিবীকে সংশোধন করার পর তাতে অনর্থ/ফাসাদ/সন্ত্রাস সৃষ্টি কর না। মহান আল্লাহকে ভয় ও আশা সহকারে ডাক। সূরা আল-আরাফ ১৪২ নম্বর আয়াতে আছে, সংশোধন হতে থাক এবং হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের পথে চল না। আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাঈন ২য় খণ্ড-এর ৩৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হাদিসে আছে, মহান আল্লাহ্ মদকে লানতপ্রাপ্ত বা অভিশপ্ত করেছেন। আর অভিশপ্ত করেছেন মদ পানকারীকে, মদ সরবরাহকারীকে, মদ বিক্রেতাকে, মদ ক্রেতাকে, মদ প্রস্তুতকারীকে, মদ প্রস্তুতের ব্যবহারকারীকে, মদ বহনকারীকে, যার নিকট মদ বহন করা হয় তাকে এবং মদের মূল্য যে ভক্ষণ করে তাকে। হাদিস অনুযায়ী সব মাদকদ্রব্যই মদ বলে গণ্য এবং সব মাদকদ্রব্যই হারাম। মিশকাত শরিফ ২৬৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হাদিসে আছে, আমার পরে পুরুষদের জন্য (খারাপ) নারী থেকে অধিক ক্ষতিকারক কোনো কিছু রেখে যাচ্ছি না।

দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দূর করার উপায় : ১। দুনিয়ার লোভের স্থলে আখিরাত বা পরকালীন জীবনকে অন্তরে বসানো তথা পরকালে জবাবদিহিমূলক জীবনযাপন করা। নিজের মনকে বোঝানো রে মন! পরকালে আদালতে আখিরাতে আমাকে আমার মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আমার যৌবন ও জীবনের হিসাব দেওয়া লাগবে। এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী এবং এর আরাম-আয়েশ বিষাক্ত। এক কথায় মহান আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে হক্কানি আলেম-উলামা, পির-মাশাইখের সান্নিধ্য, তাবলিগি জামাতে সময় লাগানো, মরণের পরে কী হবে, আত্মার ব্যাধি ও প্রতিকার, ফাজাইলে সদাকাত, জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা ইত্যাদি গ্রন্থাদি পাঠ করা সহায়ক ও উপকারী। ২। দুর্নীতি সন্ত্রাসের খারাবির বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। ৩। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বৈধ কর্মসংস্থানের সংখ্যা বাড়িয়ে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ৪। সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের ওপর জোর দেওয়া। ৫। সরকারিভাবে ইসলামী আইনের মাধ্যমে এগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ৬। পুরুষদের চোখের ও মনের পর্দা করা, নারীদের পুরোদেহের ও মনের পর্দা করা। শিক্ষার সর্বস্তরে কোরআন-হাদিস তথা ইসলামের ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। ৮। ধনীরা মন খুলে/স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিয়মিত সহিহ পদ্ধতিতে যথাযথস্থানে জাকাত, ফিতরা, সদকাহ দেওয়া।

লেখক : পেশ ইমাম ও খতিব, দারুল আমান জামে মসজিদ, রহিমনগর  বাজার, রূপসা, খুলনা।

 

 

 

সর্বশেষ খবর