মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পরিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন নবীজী

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

পরিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন নবীজী

ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির সূচনাতেই বৈচিত্র্যময় ভাষা সৃষ্টি করেছেন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আসমান-জমিন, দিন-রাত, মানুষ ও জীব-জন্তুর মতো ‘ভাষা’ সৃষ্টির কথাও বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘দয়াময় আল্লাহ, শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ। শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা।’ (সূরা আর-রহমান : ১-৪)। অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘তার আরও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা রুম : ২২)। আল্লাহতায়ালা তার প্রত্যেক সৃষ্টিজীবের জন্য ভাষা নির্ধারণ করেছেন এবং তার শুদ্ধ চর্চার মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছেন। কেননা প্রত্যেক ভাষাই রাব্বুল আলামিনের অন্যতম নির্দশন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে প্রত্যেক ভাষাভাষীর কাছে তাদের মাতৃভাষায় পয়গম্বর পাঠিয়েছেন। যেন তারা স্বজাতিকে ডাকতে পারেন তাদের সৃষ্টিকর্তার দিকে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি সব রসুলকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষীর কাছে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের আমার বাণী স্পষ্টভাবে বোঝাতে পারে।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪)। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক জাতির মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করে স্বজাতির নিজস্ব ভাষায় আসমানি কিতাবগুলো নাজিল করেছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রধান চারটি আসমানি কিতাবের মধ্যে হজরত মূসা (আ.)-এর প্রতি ‘তাওরাত’ হিব্রু ভাষায়, হজরত ঈসা (আ.)-এর প্রতি ‘ইঞ্জিল’ সুরিয়ানি ভাষায়, হজরত দাউদ (আ.)-এর ‘যাবুর’ ইউনানি ভাষায় এবং শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ‘কোরআন’ আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা হজরত সুলায়মান (আ.) কে অন্যান্য প্রাণীর ভাষা শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানব জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সব প্রাণীর ভাষা বুঝতে পারতেন। এটা ছিল তার প্রতি আল্লাহর প্রকাশ্য অনুগ্রহ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, হে লোকসকল, আমাকে পাখির ভাষা শেখানো হয়েছে এবং আমাকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব।’ (সূরা নমল : ১৬)। কেননা আল্লাহতায়ালা মানব জাতির পাশাপাশি অন্যান্য সৃষ্ট জীবকেও ভাষা শিখিয়েছেন। মানুষের মতো আকাশের ফেরেশতা, জিন ও অন্যান্য সৃষ্টি তাদের নিজ নিজ ভাষা ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে নিরন্তরভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা প্রকাশ করে মর্যাদা বৃদ্ধি করছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করেনÑ ‘তুমি কি দেখ না, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যারা আছে, তারা এবং পাখিগুলো তাদের পাখা বিছিয়ে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তার যোগ্য ইবাদত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে জানে এবং মানে।’ (সূরা নূর : ৪১)। আল্লাহতায়ালার অন্যতম সৃষ্টি নিদর্শন হচ্ছে মাতৃভাষা। মায়ের যেমন হক রয়েছে তেমনি রয়েছে মাতৃভাষার হকও।  ভাষার সঠিক যত্ন নিতে হবে। শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে হবে। ভাষার অপব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।  শুদ্ধ ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা নবীদের সুন্নত।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর