শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইতিহাস

তৈমুরের আক্রমণ

ফিরুয শাহের বংশধরগণ যখন গৃহবিবাদে জড়িত এবং তাদের নীতির ফলে সাম্রাজ্যের ধ্বংস যখন অনিবার্য, তখন সমরকন্দের অধিপতি আমির তৈমুর এক বিরাট তুর্কি সেনাবাহিনী নিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। তৈমুর ছিলেন তুর্কি চাঘতাই বংশীয় তুরঘাই-এর পুত্র। তার পূর্বপুরুষগণ ধর্মীয় দিক থেকে সামানী বৌদ্ধ ছিলেন। তৈমুরের পিতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তৈমুর ‘লঙ্গ’ খোঁড়া ছিলেন। এ জন্য তিনি ইতিহাসে তৈমুরলঙ্গ নামে পরিচিত। তেত্রিশ বছর বয়সে তৈমুর চাঘতাই তুর্কিদের নতুত্বপদ লাভ করেন। এ সময়ে তার মনে পৃথিবী জয়ের বাসনা জাগরিত হয়। পারস্য, আফগানিস্তান ও মেসোপটেমিয়া অধিকারের পর তিনি ভারতের দিকে অগ্রসর হন। তৈমুরের ভারতবর্ষ আক্রমণের কারণ সম্ভবত তিনটি। প্রথমত, ভারতবর্ষের বিপুল সম্পদ তাকে এ দেশের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। দ্বিতীয়ত, রাজ্য জয়ের আনন্দ। অনেকের মতে, তার সামরিক প্রতিভা তাকে এ দেশ আক্রমণে উৎসাহিত করেছিল। এতদ্ব্যতীত, এ সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আক্রমণকারীর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তৃতীয়ত, দিল্লির শাসকদের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পৌত্তলিকদের প্রতি উদারতা তার অসহ্য ছিল। অনেকের মতে, পৌত্তলিকতা ধ্বংস করাই ছিল তার আক্রমণের উদ্দেশ্য। ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমভাগে তিনি তার পৌত্র মুহম্মদকে ভারত অভিযানে প্রেরণ করেন। মুহম্মদ ছয় মাস অবরোধের পর মুলতান অধিকার করেন। ১৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু নদী অতিক্রম করে তৈমুর ডিসেম্বর মাসে দিল্লীর দ্বারে উপনীত হন। মাহমুদ শাহ ও তার মন্ত্রী মল্লু ইকবার বিরাট সৈন্যবাহিনী সংগ্রহ করে তাকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, কিন্তু পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অতঃপর তৈমুর বিজয়ীর বেশে দিল্লিতে প্রবেশ করেন।

প্রচুর অর্থদে র বিনিময়ে তিনি নাগরিকদেরকে জীবননাশ হতে অব্যাহতি দিতে রাজি হলেন। কিন্তু সৈন্যগণ অর্থ সংগ্রহ করতে চেষ্টা করলে তাদের আচরণে বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে হিন্দুগণ বাধা প্রদান করে। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে তৈমুর ব্যাপক হত্যার আদেশ দেন। তার আদেশে দিল্লি এক রক্তাক্ত কসাইখানায় পরিণত হয়। তৈমুরের সৈন্য কর্তৃক দিল্লি লুণ্ঠন সেই রক্তাপ্লুত নগরীর দুর্ভাগ্যের ইতিহাসে এক চরম হৃদয়স্পর্শী ঘটনা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর