বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্লান্ত রাজ্জাক পরাজিত নাকি জামায়াত নিয়ে নতুন কৌশল

পীর হাবিবুর রহমান

ক্লান্ত রাজ্জাক পরাজিত নাকি জামায়াত নিয়ে নতুন কৌশল

কয়েক দিন ধরে একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ভিতরের মতবিরোধ নিয়ে গণমাধ্যম সরব। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের নিন্দিত ভূমিকা, সেই ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং দলের নাম বিলুপ্ত করাসহ মতবিরোধের জেরে দলটির  সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগ করার পর বিষয়টি আলোচনার ঝড় তোলে। লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার পদত্যাগ আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক ও রহস্যের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক যে, জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যখন একে একে ফাঁসিতে ঝুলেছেন তখন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে ব্যারিস্টার রাজ্জাকই যেখানে তাদের বাঁচাতে তুমুল আইনি লড়াই করেছেন, একপর্যায়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার দলের জন্য চরম প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় তিনি নীরবে লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসন নিয়েছেন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চরম ভরাডুবি, সরকারি মহল থেকে আদালতের সিদ্ধান্ত এলেই জামায়াত নিষিদ্ধ হবে, এমন ঘোষণা আসার পরেই কেন তার এই বোধোদয় ও পদত্যাগ? এটা কী দেশে ফিরে এসে নিরাপদ জীবনযাপন অথবা একই সঙ্গে নতুন নামে জামায়াতকে পুনর্বাসিত করার কৌশল? ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একজন মেধাবী আইনজীবীই নন, আদালতপাড়ায় তার নামের যশ-খ্যাতিও রয়েছে। এ ধরনের একজন মেধাবী বিচক্ষণ মানুষ টানা ৩০ বছর জামায়াতের রাজনীতি করে একে একে প্রতিটি সিঁড়ি পথে দলের কাছে বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দলের নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে এসে হঠাৎ কেন তার মনে হলো, একাত্তরের ভূমিকার কারণে দেশবাসীর কাছে ঘৃণার পাত্র হয়েও স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কোনো রাজনৈতিক দল কোথাও টিকেনি, টিকতে পারে না। এখন কেন মনে হলো, একাত্তরের অপরাধের জন্য দলটির ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং রাজনৈতিক ভাবাদর্শে পরিবর্তন আনা উচিত? তিনি যখন জামায়াতে যোগদান করেন জামায়াতের চিন্তা ও আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে তার সদস্য পদ গ্রহণ করেছিলেন এবং দিনে দিনে জীবনের ৩০টি বছর দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তখন কি জানতেন না জামায়াত একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু বিরোধিতাই করেনি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে? তিনি কি জানতেন না, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি ঘৃণিত রাজনৈতিক দল? তিনি কি দেখেননি, জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষাঙ্গনগুলোতে অস্ত্রের দাপটে রগকাটা রাজনীতির প্রবর্তন করে তারুণ্যের শক্তির প্রতিরোধের মুখে বার বার ক্ষোভ ও ঘৃণার আগুনে পুড়েছে?

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেছেন, ‘আসলে আমি তো একজন মুসলিম ডেমোক্র্যাট। ইসলামী মূল্যবোধকে সবচেয়ে বড় মূল্যবোধ মনে করি, যদিও আমি মনে করি ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর মধ্যেই ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে। সুতরাং এই মূল্যবোধের প্রসার ঘটানোর জন্যই আমি মনে করেছিলাম জামায়াত উপযুক্ত ফোরাম।’ তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন জামায়াতে যোগ দেওয়ার সময় আপনার কি মনে হয়নি দলটির একাত্তরের দায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? ব্যারিস্টার রাজ্জাক তার জবাবে বলেছেন, ‘ওই সময় এটি কোনো বাধা ছিল না। কারণ ’৮৬-তে জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন করেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ’৮৬-এর নির্বাচনে বিএনপি আসেনি। কিন্তু জামায়াত আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অংশ নিয়েছে। তখন বিষয়টা বড় হয়ে ওঠেনি। ’৯০-তে আমার মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয় যে, একাত্তরের বিষয়টি নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ওই সময় আমি চীনে এক সম্মেলনে গিয়েছিলাম, সেখানে পাকিস্তান থেকে গিয়েছিলেন দেশটির প্রধান বিচারপতি নাসিম হাসান শাহ। তারা ফেরার পথে ঢাকা হয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকায় তখন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হোসেন এবং প্রধান বিচারপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিন আহমদ। পাকিস্তানের বিচারপতিরা ছিলেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে। সেখান থেকে বিচারপতি নাসিম হাসান শাহ আমাকে ফোনে ডাকলেন। উদীয়মান আইনজীবী হিসেবে তারা আমাকে বেশ সম্মান দিয়েছিলেন। বিচারপতি শাহ আমাকে বললেন, দল হিসেবে একাত্তরের বিষয়টির যদি সুরাহা করতে না পারে তাহলে জামায়াত বেশিদূর এগোতে পারবে না।’ ব্যারিস্টার রাজ্জাক সেদিন পাকিস্তানের বিচারপতিকেও বলেননি যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং বাংলাদেশের পাওনা পরিশোধ করা উচিত। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেছেন, ‘নব্বই দশক থেকে বিশেষ করে ’৯৪ সালে যখন গোলাম আযমের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়, তখন থেকেই তিনি দলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে একাত্তর প্রশ্নে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় তোলেন এবং ২০০১ সালে লিখিতভাবে সে বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সহযোগিতায় ক্ষমা চাওয়ার বিবৃতির খসড়া তৈরি করে দিয়েছিলাম।’ একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার রাজ্জাক মিসরের সন্ত্রাসবাদী ধর্মান্ধ সংগঠন ব্রাদারহুড যেভাবে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি করে পরিবর্তন এনে ক্ষমতায় এসেছে এবং তুরস্কে একে পার্টির ইতিহাস তুলে ধরে এরদোগানের ক্ষমতাসীন হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। জামায়াত এখানে যেভাবে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে, এরদোগান সেভাবেই তুরস্কে ক্ষমতায় এসেছেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক দলে সংস্কারের কথা বললেও জামায়াতকে একটি সন্ত্রাসবাদী দল না বলে বার বার উদার গণতন্ত্রী মুসলিম দল হিসেবেই তুলে ধরতে চেয়েছেন। তার গোটা সাক্ষাৎকার পাঠ করে কোথাও মনে হয়নি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতার কারণে অভিশপ্ত জামায়াতে ইসলামীর মতো দলে তিন দশক সক্রিয় ভূমিকা ও নেতৃত্বে থাকার কারণে কোনো আত্মগ্লানি ও অনুশোচনায় ভুগছেন। বরং এই দল করার আত্ম অহংকার আছে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চেয়েছেন, জামায়াত সন্ত্রাসবাদী দল নয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত তার দৌড়ঝাঁপের কথা যেমন উঠে এসেছে, তেমনি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে ওঠাবসাকালে তিনি জামায়াত সম্পর্কে যে উচ্চ ধারণা দিয়েছেন সেটি প্রাধান্য পেয়েছে এবং কর্মপরিষদে নেওয়া দলের সংস্কার প্রস্তাব মজলিশে শূরায় নাকচ হয়ে যাওয়া এবং দল থেকে দু-একজনের বহিষ্কার বা দলত্যাগ নিয়ে তিনি বিচলিত হননি। এমনকি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়া নেতাদের রক্ষায় যে লড়াই করেছেন তা নিয়ে তার অহংকারও রয়েছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক যদি মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্য, বিশ্বাস রেখে একটি উদার গণতান্ত্রিক ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মুসলিম রাজনৈতিক দলের কথা চিন্তা করতেন এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন তাহলে তিনি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিতেন না। তিনি যদি মনেই করতেন তার চিন্তা, মেধা দিয়ে দলকে সংস্কারের পথে নিয়ে আসতে পারবেন তাহলে প্রথমেই দলের যেসব শীর্ষ নেতা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আল-বদর বাহিনীর মতো পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর সংগঠন হিসেবে নজিরবিহীন বর্বরতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের দলের নেতৃত্বে রেখে এবং একাত্তরে অমার্জনীয় অপরাধের জন্য ক্ষমা না চাওয়া দলটিতে যোগ দিতেন না। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে, পাকিস্তানের প্রতি হৃদয় নিসৃত প্রেম ও একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা সঠিক ও যথার্থ মনে করেই দলটিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি তার সাক্ষাৎকারে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে একুশের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র, বাংলাভাইসহ জঙ্গিবাদের উত্থানের সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতাকে অস্বীকার করেছেন। তিনি যদি মনেপ্রাণে চাইতেন জামায়াত একাত্তরের অপরাধের জন্য জাতির কাছে মাফ চেয়ে দলে সংস্কার এনে উদার গণতন্ত্রী মনোভাব নিয়ে সন্ত্রাসবাদের পথ পরিহার করে রাজনীতি করুক, তাহলে তার প্রস্তাব গ্রহণ না হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে পদত্যাগ করতেন। এখন লন্ডনে নির্বাসিত জীবনের ব্যক্তিগত দহন ও অসহায়ত্ব আর অন্যদিকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে একের পর এক আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শক্তিক্ষয়ের মধ্য দিয়ে জামায়াত নামক অভিশপ্ত দলটির করুণ পরিণতি ঘটার কারণে নিজের অবস্থান নিরাপদ করতেই পুরনো দাবি তুলে পদত্যাগ করেছেনÑএ কথা বললে কি বাড়িয়ে বলা হবে? এ কথা বললে কি অসত্য বলা হবে? ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একাত্তরের নিন্দিত ও কুখ্যাত জামায়াতের ভূমিকার দায় নিয়েই তিন দশক বিশ্বস্ততার সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতি করেছেন। আজ শেখ হাসিনার সরকারের রাজনৈতিক কৌশল ও নির্বাচনী গণরায় নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দান এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী যখন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে ঠিক তখন শেষ বিপদের আলামত টের পেয়েই ব্যারিস্টার রাজ্জাক জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেছেন, নৈতিকতার উচ্চ আসন থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার দল জামায়াত ও তার নিজের রাজনৈতিক কর্মকা- এবং আজকের বাস্তবতায় তার পদত্যাগের প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক পদক্ষেপ বা রণকৌশলের কাছে একজন পরাজিত, অসহায়, ক্লান্ত, অবসন্ন, কাপুরুষ জামায়াতি হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর এবং ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে জামায়াত-শিবিরের ভয়াবহ সন্ত্রাস এবং সহিংসতা গোটা বাংলাদেশ দেখলেও ব্যারিস্টার রাজ্জাক তা দেখেননি। তিনি সন্ত্রাস আর জামায়াত যে পায়ে পায়ে হাঁটে এটা স্বীকার করতে এখনো নারাজ। এ কথা সত্য মুক্তিযুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া যে ছেলেটি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে, একাত্তরের অপরাধের দায় সে নিতে পারে না। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে, জেহাদের কথা বলে, ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়ে, ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও আল্লাহর আইন চাই’ এই স্লোগান তুলে কোমলমতি তরুণদের জামায়াতের মতো অভিশপ্ত দলে সম্পৃক্ত করেছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাকের মতো মেধাবীরাই। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করা রাজনৈতিক শক্তির ব্যর্থতাও এখানে যে, সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে তাদের আটকে রাখতে না পারা। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেছেন, তিনি আর রাজনীতিতে ফিরছেন না। বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক দলেও নিজেকে যুক্ত করছেন না, তবে সিভিল সোসাইটিতে ভূমিকা রাখবেন। সেখানেই তিনি কাজ করবেন। যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়া মীর কাসেম আলীর পুত্রসহ তিনি যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতেন সেটি যেমন স্বীকার করেছেন, তেমনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তুরস্কের এরদোগানের একে পার্টির মডেলে ইসলামপন্থি রাজনীতি নিয়ে আগামী দিনে তরুণরা এগিয়ে আসবে। সেটি জামায়াতের উপজাত দল হবে কী না, সেটিকে সময়ের দাবি বলে মূল্যায়ন করেছেন। এখানে সন্দেহ থেকেই যায়, পশ্চিমা পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা এক সময় জামায়াতের কার্যালয় পর্যন্ত ছুটে আসতেন এবং তাদের নিজেদের দুয়ার ব্যারিস্টার রাজ্জাকদের জন্য খুলে রেখেছেন। ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়া যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানরা গেলে জামাই আদর দিতেন, সেই তাদের প্রেসক্রিপশনেই কি ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ ও আগামীতে জামায়াতকে নতুন বোতলে পুরনো মদের মতো পুুনর্বাসনের নীলনকশার অংশ রাজ্জাকের পদত্যাগ? দলে সংস্কার বিতর্ক, নাকি শেখ হাসিনা সরকারের রণকৌশলের কাছে পরাজিত জামায়াতিদের দল থেকে বিদায়Ñ এই প্রশ্ন থেকেই যায়। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বার বার তুরস্কের এরদোগানের একে পার্টির কথা নিয়ে এসেছেন। তার নেতা জামায়াতের আমির ও যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী দুবার এরদোগানের তুরস্ক সফর করেছিলেন। তাদের রাজনীতির পথে সেখানে এরদোগান সফল হলেও এখানে তারা ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ এখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও বীরত্বের উত্তরাধিকারিত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে নানা মত-পথের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তো বটেই, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ঐক্য সুসংহত। জামায়াত থেকে পদত্যাগ করে ব্যারিস্টার রাজ্জাক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় জামায়াতকে সংস্কার করে বা ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দল করার যে কথা বলছেন এমনকি ক্ষমতায় আসার যে স্বপ্ন দেখছেন, তার চেয়ে বড় প্রহসন আর কিছু হতে পারে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ রাজনৈতিক শক্তির পতন ঘটিয়েছিল এটি যেমন সত্য তেমনি সেটিও সত্য সেদিন ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক দলগুলো পাকিস্তানের সঙ্গেই অবস্থান নিয়েছিল। কেউ শান্তি কমিটিতে, কেউ আল-বদর বাহিনীতেÑপার্থক্য এটুকুই। কেউ স্বাধীনতাবিরোধী, কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধী, পার্থক্য এটুকুই।  আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট এবং একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানের বিশ্বস্ত সংগঠন জামায়াতে ইসলামীতে দল নিষিদ্ধের মুখে যে নাটক শুরু হয়েছে এর শেষ দৃশ্য দেখার বাকি অনেক দূর।  শেষ দৃশ্য সহসাই রচিত হবে এমনটা মনে হচ্ছে না।  গভীরভাবে এটি পর্যবেক্ষণের বিষয়।

 

            লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর