দুনিয়ার যেসব দেশ থেকে মানব পাচারের ঘটনা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের স্থান সে তালিকায় প্রথম কাতারে। প্রতিবছর এ দেশ থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ পাচার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। পাচারকারীদের লোভনীয় চাকরির ফাঁদে পা দিয়ে বিপুলসংখ্যক নারী বিদেশে পাচার হওয়ার পর ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। লোভনীয় চাকরির নামে বিদেশে পাঠিয়ে যুবকদের দাস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ সাম্প্রতিক সময়ে মানব পাচার চক্রের চোখ পড়েছে আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া এবং মৌরিতানিয়ার দিকে। চক্রের খপ্পরে পড়া নরনারীদের সেখান থেকে সাগরপথে পাচার করা হচ্ছে ইউরোপের স্পেন ও ইতালিতে। এর বাইরে মানব পাচারের জন্য চক্রের পছন্দে রয়েছে ইউরো-এশিয়ান দেশ জর্জিয়া, তুরস্ক, এশীয় দেশ ইরান এবং আফ্রিকান দেশ লিবিয়া। মানব পাচারে পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করছে কয়েকটি এয়ারলাইনসের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এয়ার এরাবিয়া, মালিন্দ এবং ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসের কোনো কোনো অসৎ কর্মকর্তা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের কিছু লোককে ‘হাত’ করে নেয়। তারাই বলে দেয় কোন কাউন্টার দিয়ে পাচারের লোকদের ঢুকানো হবে।
চক্রটি ই-ভিসার সুবিধায় ইউরোপে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের প্রথমে জর্জিয়া পাঠায়। এরপর তাদের তুরস্ক হয়ে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে পাঠানোর জোর চেষ্টা চালায়। বিকল্প হিসেবে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সবকিছুই হয় চুক্তির ভিত্তিতে। বাংলাদেশি দালাল চক্রের সঙ্গে তুরস্ক ও জর্জিয়ার কিছু নাগরিক জড়িত। প্রতিবছর বিদেশে পাচারের সময় বিপুলসংখ্যক নর-নারীকে উদ্ধার করা হলেও জনসচেতনতার অভাবে পাচারের ঘটনা কমছে না। বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে মানব পাচারের ফলশ্রুতিতে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দিতে দ্বিধায় ভোগে। দেশের সুনামের স্বার্থে মানব পাচারের বিরুদ্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।