শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সোনার মদিনা আমার প্রাণের মদিনা

মুফতি মাওলানা মানজুর হোসাইন

অপূর্বসুন্দর এবং মুগ্ধতায় মেশানো এক নাম মদিনা তাইয়েবা। মদিনাতুন্নবী নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই হৃদয়ের আয়নায় ভেসে ওঠে এক প্রশান্তিময় শহরের ছবি। অনির্বচনীয় আনন্দে এক অপূর্ব হিল্লোল দোল খেয়ে যায় হৃদয়তন্ত্রীতে। প্রেম-ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে মন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অসংখ্য সাহাবির স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র এই শহর জিয়ারত প্রতিটি মুমিনেরই স্বপ্ন ও প্রত্যাশা। আজ আমরা জানব মদিনার ফজিলত, তাৎপর্য ও মর্যদা সম্পর্কে। যখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত প্রচার করা সম্ভব হচ্ছিল না তখন আল্লাহর আদেশে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। তখন মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। প্রিয়নবীর শুভাগমনে ধন্য হলো ইয়াসরিব নগর। ধন্য হলো তার অধিবাসীরাও। দূর হলো সব অন্যায়-অরাজকতা। ন্যায় ও ইনসাফের সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। প্রিয়নবীর পদস্পর্শে ঊষার মরুর তপ্ত বালুও যেন মুক্তায় পরিণত হলো। সবুজ সজীব হয়ে উঠল চারদিক। তখন থেকেই ইয়াসরিব নগরের নাম হলো মদিনাতুন্নবী। সোনার মদিনা।  মদিনা তইয়েবা অতুলনীয় মর্যাদা ও অগণিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নগরী। তার সবচেয়ে বড় ফজিলত ও মর্যাদা হলো, এ পুণ্যভূমিতেই সবুজ গম্বুজের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন নিখিল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর রওজা বুকে ধারণ করে মদিনা আজ চিরধন্য, চির-অনন্য। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল মদিনা। কোনো সফর থেকে ফেরার সময় মদিনার কাছাকাছি পৌঁছে তিনি উটের গতি বাড়িয়ে দিতেন এবং মদিনায় পৌঁছার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। কারণ মদিনায় পৌঁছে তাঁর হৃদয় শীতল হতো। শুধু তাই নয়, তাঁর উম্মতদের মদিনায় অবস্থানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। এই পবিত্র নগরীকে আবাসস্থল বানাতে এবং এতে মৃত্যু কামনা করতেও উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আমার রওজা জিয়ারত করবে কিয়ামতের দিন সে আমার পাশে থাকবে। আর যে ব্যক্তি মদিনায় বসবাস করবে এবং তার বিপদাপদের ওপর ধৈর্য ধারণ করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য আমি সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব। আর যে ব্যক্তি দুই পবিত্র নগরীর (মক্কা-মদিনা) যে কোনো একটিতে মৃত্যুবরণ করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে নিশ্চিন্ত করে ওঠাবেন।’ শুয়াবুল ইমান লিল বায়হাকি ও মিশকাত। তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার পক্ষে সম্ভব হয় সে যেন মদিনায় মৃত্যুবরণ করে। কেননা যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করব।’ ইবনে হিব্বান।

মদিনার ফলমূলেও রয়েছে রোগ নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য। মদিনার ধুলাবালি ও মাটি ব্যবহার করে অনেকের রোগমুক্তির ঘটনাও জানা যায়। শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘আমি নিজেও মদিনার মাটি দ্বারা চিকিৎসার বিষয়টি পরীক্ষা করেছি। মদিনায় অবস্থানকালে একবার আমার পা প্রচণ্ড ফুলে যায়। চিকিৎসকরা সর্বসম্মতভাবে এ রোগকে দুরারোগ্য ব্যাধি এবং মৃত্যুর কারণ বলে মন্তব্য করেন। এরপর আমি এই পবিত্র মাটি দ্বারা চিকিৎসা শুরু করি। আর অল্প দিনের মধ্যেই আমার পা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে।’ মুসিলমের হাদিসে মদিনার মাটিকে শিফা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মদিনায় ‘আজওয়া’ নামক এক বিশেষ খেজুর রয়েছে। এ খেজুরগুলো অনেক উপকারী। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন কোনো প্রকার বিষ ও জাদু তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। মদিনা একটি বরকতপূর্ণ নগরী। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি মক্কায় যে বরকত দান করেছেন তার দ্বিগুণ বরকত মদিনায় দান করুন।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

লেখক : খতিব, বাইতুদ দাউদ জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর