শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম

সময় ক্ষেপণ নয়, এখনই স্থানান্তর করুন

আগুনে পোড়া লাশের মিছিল দেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের হৃদয়কে ব্যথাতুর করেছে। শুক্রবার সারা দেশে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের কান্না বাতাসকে ভারি করে তুলেছে। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় উচ্চারিত হয়েছে একই ধরনের আর্তস্বর। নিমতলীর পর চকবাজারে কয়েক শ পরিবার যে ট্র্যাজেডির শিকার হলো তার প্রধানতম কারণ ঘিঞ্জি জনপদে কেমিক্যাল বা দাহ্য পদার্থের গুদাম বা দোকানের অবস্থান। নিমতলী ঘটনারই প্রায় হুবহু পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বুধবার রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টায়। দায়িত্বহীনভাবে ফেলে রাখা বিপজ্জনক সব কেমিক্যাল নিমতলী স্টাইলে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে মহল্লার পাঁচটি বিশাল অট্টালিকা। কেড়ে নিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণ। রাজধানীর চানখাঁরপুল-সংলগ্ন নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জন প্রাণ হারান। আহত হন অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকান, কারখানা, আর অসংখ্য মানুষের অজস্র স্বপ্ন। উভয় ঘটনাস্থলের পাশে ছিল বিপজ্জনক কেমিক্যালের গুদাম। দাহ্য পদার্থ ছিল চারপাশজুড়েই।  নিমতলীর ঘটনার পর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল পরবর্তী তিন মাসের মধ্যেই রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ সব এলাকা থেকে কেমিক্যালের বাণিজ্য সরিয়ে তা জনবসতিহীন ফাঁকা এলাকায় নেওয়া হবে। গড়ে তোলা হবে আলাদা কেমিক্যাল পল্লী। কিন্তু তা নয় বছরেও বাস্তবে রূপ পায়নি। বাংলাদেশে প্রতিটি মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের পর প্রতিশ্রুতির বহর উন্মোচিত হয়। যেসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটে তার ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে শম্বুকগতি যে কী বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপুল প্রাণহানি তারই প্রমাণ। আমরা আশা করব, চকবাজার ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকার জনপদ থেকে কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তর অচিরেই শুরু হবে। এক কিংবা দুই মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবেÑ এমনটিই দেখতে চাই আমরা।

সর্বশেষ খবর