রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষ সিংহ নয় গাধাকে পছন্দ করে

নঈম নিজাম

মানুষ সিংহ নয় গাধাকে পছন্দ করে

ফেনীর এক সাবেক এমপির অডিও শুনলাম সামাজিক গণমাধ্যমে। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একজন নারী সাংবাদিক রিকশায় বসা ছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন, একটি দামি গাড়ি থেকে নেমে এক ড্রাইভার রিকশাচালককে মারছেন। নারী সাংবাদিক মারার কারণ জানতে চান। এতে ক্ষুব্ধ হন ভিতরে বসা গাড়ির মালিক। তিনি নিজেকে এমপি পরিচয় দিয়ে খারাপ ব্যবহার করেন সেই নারী সাংবাদিকের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, তার কত বিশাল ক্ষমতা তাও প্রকাশ করেন বার বার। এমনকি অর্থবিত্তের বর্ণনাও দেন। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বিষয়টি সামাজিক গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। এরপর এ নিয়ে আরেকজন স্থানীয় সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষমতাবান ব্যক্তিটি নোংরা কথাবার্তা বলেন সংশ্লিষ্ট নারী সাংবাদিক সম্পর্কে। তিনি কী কী করতে পারেন তার অশ্লীল বর্ণনাও দেন। বোন আমার ক্ষমা করে দিও। আমাদের সামাজিক অবস্থান আজ এখানেই দাঁড়িয়েছে। দাহ, রক্তক্ষরণ, কষ্ট নিয়েই আমরা বেঁচে থাকি। তবু কিছু বলি না। তুমি একাই প্রতিবাদ করে চলেছ। সেই প্রতিবাদে সাড়া দিই না যদি আমি কিছু হারাই সেই কারণে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাবই কষি আমরা সবাই। চারপাশের কাণ্ডকীর্তি কেবলই রক্তক্ষরণ তৈরি করে। বিশ্বাস কর ভণ্ড আর হিপোক্রেট ও লেবাসধারীদের একটা যুগ চলছে। এই লেবাসধারীরা এখন সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। তাদের না আছে অতীত, না বর্তমান। জনগণের কাছেও অনেকের কোনো অবস্থান নেই। অসহায়ত্ব নিয়েই অনেক কিছু দেখতে হয়। সবকিছুর মূল্যায়ন করতে হয়। সমাজে অজানা-অচেনা মানুষরাই এখন সততার প্রতীক। সেসব কাহিনী শুনে বাহবা দিতে হয়। সেদিন একজন বললেন, জানেন অমুক খুব ভালো লোক। আমি জানতে চাইলাম, সততার সংজ্ঞা কী? জবাবে জানলাম, তিনি মানুষ হিসেবে সৎ, কারণ জীবনে কোনো সুযোগ পাননি। চেয়ার পাননি। অতীতে ভালো-মন্দ কিছু করার সুযোগ পাননি। আমি বললাম, একটু অপেক্ষা করুন, দেখুন, জীবনে প্রথম এখন সুযোগ পেয়েছেন। সুযোগ পাওয়ার পরই দেখা যায় কে কতটা সৎ, আর কত দিন তা থাকেন। সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত সবাই ভালো থাকেন। নীতি-আদর্শের বড় বড় বুলি আওড়ান। এ মানুষগুলোই আবার সুযোগ পেয়ে নিজের মাঝে এক ধরনের কৃত্রিমতা তৈরি করেন। কথাবার্তা, চালচলনের ভাবচক্কর দেখান প্রথম প্রথম। তার পরও বেরিয়ে আসতে থাকে তার মুখে একরকম, ভিতরে আরেকরকম রূপ।

আমাদের এ সমাজ এক কঠিন সময় পার করছে। ক্ষমতার দাপট দেখাতে পছন্দ করে এখন একদল মানুষ। আরেকদল যারা ক্ষমতা পায় না তারা চলে আরেক তালে। মানুষকে বোঝার কেউ নেই। জীবন এখন অনেক ক্ষেত্রে মূল্যহীন। পত্রিকায় দেখলাম পুত্র খুন করেছে বাবাকে জমি লিখে না দেওয়ার কারণে। এমন পুত্রসন্তানের কী দরকার। আবার ঐশী খুন করেছিল বাবা-মা দুজনকেই। এক হৃদয়হীন কৃত্রিম সমাজে আমাদের বাস। কৃত্রিমতা, হিংসা, বিদ্বেষ শুধু রাজনীতিতে নয়, আজ সমাজের সকল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ঝরে পড়ছে আবেগমাখানো সময়গুলো। একটা সময় ছিল, চিঠি ছিল আবেগ প্রকাশের একটা জায়গা। পত্রিকায় পত্রমিতালি নামে একটি বিভাগ ছিল। পত্রমিতালিতে আগ্রহীরা নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতেন। চিঠি আসত। বন্ধুত্ব তৈরি হতো নতুন করে। এখন বন্ধুত্ব অনেক পরের কথা, সংসার জীবনেই আপন-পর থাকে না। চিঠিতে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের ভাব প্রকাশের দিনগুলো শেষ হয়ে গেছে। সাহিত্যমূল্যের সেই চিঠি ও প্রেমপত্রের যুগ আর নেই। পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথনও এখন কেউ পড়ে না। সুনীলের নীরার কথা কারও মনে পড়ে না। বুদ্ধদেব গুহর মাধুকরীর কুর্চি আর সমরেশের সাতকাহনের দীপাবলিরা এখন নিখোঁজ ইমেইলের ভিড়ে। শরৎ পড়ে এখন আর চোখে জল আসে না কারও। ডিজিটাল দুনিয়া মানুষের আবেগ কেড়ে নিয়েছে। বিনিময়ে মানুষকে করে তুলছে হৃদয়হীন। ইট-পাথরের নাগরিক জীবনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। সেদিন ফোনে কথা হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখক বুদ্ধদেব গুহর সঙ্গে। তিনি বললেন, ঢাকার মানুষ কি আমাকে জানে? জবাবে বললাম, একটা সময় ছিল আপনার লেখা মাধুকরী, বাবলী, একটু উষ্ণতার জন্যসহ বিভিন্ন উপন্যাস ঘরে ঘরে ছিল। এখন অনেক কিছু বদলে গেলেও সাহিত্য শেষ হয়নি। বইমেলায় বিশাল ভিড়। আপনার পাঠক পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। প্রকৃতি নিয়ে লিখে দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়া মানুষ বুদ্ধদেব গুহ। বুদ্ধদেবকে সেই কথা বললেও তরুণ সাংবাদিকদের এক আড্ডায় প্রশ্ন করেছিলাম, তোমরা কি বুদ্ধদেব পড়? দুজন মাত্র উত্তর দিল পড়েছে। বাকিরা লেখকের নাম শুনেছে। বই পড়েনি। কিছুই বলার নেই।

আগে আফসোস হতো অনেক কিছু নিয়ে। এখন হয় না। বই এখন আর কেউ পড়তে চায় না। সবাই মোবাইল টেপে। রেস্টুরেন্টে বাবা-মা, পরিবার-পরিজন সন্ধ্যার পর খেতে যায়। সবারই চোখ মোবাইলে। কোনো পারিবারিক আলাপ নেই। ফেসবুক আপডেট দেখছেন সবাই। অর্থনীতির পরিবর্তনের ঢেউ মানুষকেও বদলে দিচ্ছে। অতি আধুনিক সাজতে গিয়ে সমাজে অসংগতি তৈরি করছে। সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বাবা-মায়ের। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হবে। চলার পথে পারিবারিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছি। একাত্তরে আমাদের বাড়ি ছিল মুক্তিযুদ্ধের ঘাঁটি। সমাজকে রক্ষা করতে পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ব্যক্তিজীবনে অপরিহার্য। সমাজে সংসারে এখন জটিলতা বাড়ছে। সামাজিক অপরাধও বাড়ছে। আবেগ এখন মূল্যহীন। পরিবার থেকেই শিক্ষার প্রসার বাড়াতে হবে। সন্তানকে জানাতে হবে কোনটা অন্যায়, কোনটা খারাপ। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে ডোপ টেস্ট অপরিহার্য। চাকরিতে ডোপ টেস্ট অবশ্যই করতে হবে। চিরতরে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তেই প্রতিরোধ আসতে হবে সমাজ ও পরিবার থেকে। বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। ছোটবেলায় আমরা ঘুম থেকে উঠে কোরআন শিখতে যেতাম। ধর্মের সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক চিন্তার কোনো বিরোধ নেই। আর উগ্রবাদে শুধু ইসলাম ধর্মের লোকেরাই যুক্ত হয় তা নয়; সব ধর্মের লোকের মধ্যেই উগ্রবাদী রয়েছে। গালাগাল শুধু মুসলমানদের করে লাভ নেই। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা সব ধর্মের জন্যই প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ যে কোনো ধর্মেই তৈরি হতে পারে। আজকাল আধুনিকতা নিয়েও বিতর্ক হয়। ব্যভিচার আর আধুনিকতা এক কথা নয়। সমাজে বেড়ে যাওয়া ব্যভিচারই সংসার জীবনকে তছনছ করে দিতে পারে। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতন হতে হবে আকাশ সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার সম্পর্কে। বাস্তবতাকে পাশ কাটালেই প্রকৃতি রুদ্ধ হয়ে ওঠে। বাস্তবতাকে পাশ কাটানোর খেসারতই পুরান ঢাকায় আমাদের দিতে হচ্ছে। নিমতলীর ট্র্যাজেডির পর সচেতনতার দরকার ছিল। বন্ধ করা উচিত ছিল কেমিক্যাল গোডাউনগুলো। পরিবেশ অধিদফতর, রাজউক, সিটি করপোরেশন, শিল্প মন্ত্রণালয় কেউ দায় এড়াতে পারে না। লম্বা কথা বলে শোক প্রকাশ করলেই চলবে না। আবাসিক এলাকায় এভাবে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কতকাল আমরা চলব?

সিস্টেমগুলো তৈরি না হওয়াটাই সমস্যা। আর সমাধান নিয়ে আমরা করি রাজনীতি। এখন রাজনীতি থেকে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, আর্থিক খাত কোনো কিছু বাদ যায়নি। সব বিষয়ে এত বেশি রাজনীতি করলে সংকটের নিরসন করা দুরূহ। এ কারণে একদিকে নদীর উচ্ছেদ হয়, আরেকদিকে দখল হয়। একটা ওয়াকওয়ে তৈরি করলেই ফের দখল হবে না- এ কথাটা কাউকে বোঝানো যায় না। আর্থিক খাতকে আমার মাঝে মাঝে সোমনাথ মন্দির মনে হয়। একজন ব্যবসায়ী বললেন, একটি লিজিং কোম্পানিতে মাত্র ৫০ লাখ টাকা রেখেছিলেন। এখন গেলেই বলে ভাই সময় দিন। ভাগ ভাগ করে নিন। ব্যাংক নিয়ে নানারকম আলোচনা শুনি চারদিকে। ভিন্নমতের ব্যবসায়ী হলেও তার প্রতি সম্মান রাখতে হবে। একজন ব্যবসায়ী তিল তিল করে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার অধিকার কারও নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, আইন মানছে কিনা। ব্যবসা করতে গিয়ে কেউ আইনের শাসনের বরখেলাপ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু ব্যক্তি-গোষ্ঠীর হাতে ব্যাংকিং খাতকে জিম্মি রাখা যাবে না। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পতন হলে ধসে যাবে এ খাতটি। কিছু কিছু খাতে অতি আওয়ামী লীগারদের বাড়াবাড়ি দেখছি। কারও কারও কথায়-কাজে মনে হয়, যা খুশি তা করার অধিকার অর্জন করেছেন। ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর। মানুষের মনে ক্ষোভের অনল তৈরি হলে সমস্যা। তিল তিল ক্ষোভ অনেক সময় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। একজনকে ওঠাতে গিয়ে দশজনের সর্বনাশ করলে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়। এ অস্থিরতা আওয়ামী লীগ করতে পারে না। জনগণ এই বিশাল রায় দিয়েছে কোনো অসংগতি তৈরির জন্য নয়। সত্যিকারের মানুষদের মূল্যায়ন করতে হবে। ভুল করলে সংশোধন করা যায়। ভুলের মাঝে বসবাস, আত্ম-অহংকার দীর্ঘমেয়াদের জন্য ভালো নয়। আজকাল কিছু নেতার কাণ্ডকীর্তির সমালোচনা বাড়ছে। সেই নেতারা তা বুঝতে পারেন কিনা জানি না। তবে এ নিয়ে হুমায়ুন আজাদের একটি উপমা মনে পড়ছে। একবার টিভির পর্দায় এক অভিনেত্রীর সঙ্গে কবি শামসুর রাহমানকে অনুষ্ঠান করতে দেখে হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘শামসুর রাহমান বোঝেন না কার সঙ্গে পর্দায় আর কার সঙ্গে শয্যায় যেতে হয়।’ আশা করি অনেক নেতা সাবধান হয়ে উঠবেন। আমি সবার মঙ্গল কামনা করি। সারা জীবন এই দিন থাকলেই ভালো। না থাকলে সর্বনাশ। একজন অভিনেত্রী তার দুঃখ- দুর্দশার কথা বলার জন্য কয়েক দফা দেখা-সাক্ষাৎকে ঘিরে মন্ত্রণালয় ছাড়তে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ক্যাবিনেটের তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায়। এ কারণে মানুষ অনেক কিছু স্বাভাবিকভাবে নেয় না।

জানি অনেক কথা বলে লাভ নেই। কারণ বাংলাদেশে এখন হুলুস্থূল যুগ চলছে। ১৬ ডিসেম্বরের আগে বঙ্গবন্ধুর শক্তি ছিল সাধারণ মানুষ। ’৭২ সাল থেকেই বুদ্ধিজীবীরা আওয়ামী লীগার হতে শুরু করেন। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আবার অনেকের চেহারা বদলে যায়। ২০০১ সালের পর কারা তখনকার সরকারের অন্যায়-অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন? লিখেছিলেন? একটু হিসাবের খাতা খুললে অনেকের নেগেটিভ চেহারা দেখা যাবে। এখন সবাই বড় বড় কথা বলছেন। ২০০১ সালের পর আমরা টকশোর জন্য লোক পেতাম না আওয়ামী লীগের পক্ষে। বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতেন হাতে গোনা। ধানমন্ডি সুধাসদনে কারা যোগাযোগ রাখতেন? সেই হিসাব একজনই জানেন। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগে এসে হুলুস্থূল তৈরিকারীদের জানার কথা নয়। এখন তো লোকের অভাব নেই। ২০১৪ সালের গ্রুপও এখন পুরনো। এবার ভোটের আগে-পরে নতুন আরেক গ্রুপের জন্ম হয়েছে। এখন সময়টা তাদের। এখন চারদিকে তাকালে হাসি-আনন্দের পাশাপাশি কান্নাকাটিও দেখি। জীবনের পথচলায় হয়তো আরও অনেক কিছু দেখব। ’৭১ সালে আমরা গ্রামে ভয়ে ভয়ে থাকতাম। বাড়ির কিছু সদস্য মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার কারণে গ্রাম থেকেই পালানোর প্রস্তুতি থাকত ২৪ ঘণ্টা। তখন কিছু মানুষ এ ঢাকা শহরে আরাম-আয়েশে দিনযাপন করেছিলেন। সেসব মানুষের জীবনরহস্য একদিন হয়তো বের হবে। আরও বের হবে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপি-জামায়াতকে তোষামোদ করা মানুষদেরও। আওয়ামী লীগ এখন সবাইকে ধারণ করছে, করুক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু হিসাবের এক চালে ভুল হলে এর খেসারত গোটা জাতিকে দিতে হয়, সমস্যা সেখানেই। একজন বললেন, এখন আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে কারা ঠাঁই পায় জানেন? বললাম- কেন সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ? জবাবে তরুণ বন্ধুটি বললেন, আপনি ব্যাকডেটেড হয়ে উঠেছেন। ম্যানেজ করতে পারলে এ কমিটিগুলোয় যে কেউ ঢুকতে পারে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ করার কোনো দরকার হয় না। হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসার ঘটনা উপকমিটিগুলোয় বেশি। অবশ্য এতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ দেশে এখন সবাই আওয়ামী লীগ। একসময় যারা মিল্লাতে চাকরি করতেন তারাও এখন বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে কান্নাকাটি করা লেখা প্রকাশ করেন। সেসব লেখা আওয়ামী লীগাররাই প্রকাশ করে দেন। বড় অদ্ভুত সব! চারপাশে অনেক কিছু দেখছি। আরও দেখব। বেশি বলতে চাই না। বেশি বললে চারপাশের মানুষ নারাজ হয়। তার পরও না বলে পারি না অনেক কিছু। আবার হুমায়ুন আজাদের কথায় আসি। হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, ‘মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ করে।’ আমারও তাই মনে হয়। সময়কে আমার স্যালুট। ভালো থাকুক দেশ। সবকিছুর নিয়ন্ত্রক আমলাতন্ত্র দক্ষতা, মেধা-মননে এগিয়ে চলুক। সবারই মঙ্গল কামনা করি। শুধু আমরা সাধারণ নাগরিকরা আর নিমতলী, চকবাজার দেখতে চাই না। সড়কে নেমে চাই না বিশৃঙ্খলায় জীবন হারাতে। এক দিনে সব ঠিক হয়ে যাবে তা মনে করি না। শুধু দেখতে চাই চেষ্টাটা হচ্ছে। মানুষ স্বাপ্নিক কথা শুনতে পছন্দ করে আবার বাস্তবতার সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলতে পছন্দ করে।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

 

সর্বশেষ খবর