রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মৃত্যুকূপগুলো সরিয়ে নিন

আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়

রাজধানীর পুরান ঢাকার ১০টি থানা এলাকাই বিপজ্জনক কেমিক্যালের বিস্ফোরণ ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্তত ৫ হাজার মৃত্যুকূপের সঙ্গে সহাবস্থান করছেন রাজধানীর প্রায় ২০ লাখ মানুষ। চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের উৎস কী তা নিয়ে অনভিপ্রেত বিতর্ক থাকলেও ওই এলাকায় নানা ধরনের কেমিক্যালের গুদাম থাকায় মাত্র আধা থেকে এক সেকেন্ডের মধ্যেই যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্পর্কে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। নয় বছর আগে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে বিপুল প্রাণহানির পর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করেছে পুরান ঢাকার জনবসতিতে কেমিক্যালের গোডাউন ও দোকানের সহাবস্থান কী বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডস্থলের আশপাশেই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ তিন শতাধিক কারখানা ও কেমিক্যাল গুদাম। মহল্লায় দেয়ালের সঙ্গে দেয়ালের ঠেস লাগিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। চাপা-সরু অলিগলির অভাব নেই। এসব অলিগলির বাঁকে বাঁকে গড়ে তোলা হয়েছে বৈধ-অবৈধ কয়েক শ কেমিক্যাল কারখানা, গুদামঘর, দোকানপাট। শুধু চকবাজার নয়, পুরান ঢাকার ১০টি থানা এলাকায় গজিয়ে ওঠা কারখানাগুলোয় অবাধে বছরের পর বছর ধরে চলছে বিস্ফোরক ও কেমিক্যালের খোলামেলা বিপণন। লালবাগ, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী ও সূত্রাপুর অর্থাৎ পুরান ঢাকাজুড়েই চলছে এ বিপজ্জনক খেলা। বেশির ভাগ কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিকসহ দাহ্য পদার্থ ও নানা ধরনের জ্বালানি তেল। এসব কারখানার মধ্যে সিটি করপোরেশনের দায়সারা গোছের ট্রেড লাইসেন্স আছে বড়জোর হাজারখানেকের। বাকিগুলোর কোনো কাগজপত্রই নেই। নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তের মধ্যে ১২৩ জনের প্রাণহানির পর পুরান ঢাকার সব কেমিক্যাল গোডাউন ও দোকান নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নয় বছরেও তা শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নেও যারা নয় বছর কাটিয়ে দেন কুম্ভকর্ণের ঘুমে, তাদের রাষ্ট্রীয় অর্থে পোষার কোনো যৌক্তিকতা আছে কিনা ভাবতে হবে। চকবাজার হত্যাকাণ্ডের দায় তাদের ওপর কেন চাপানো হবে না ও কেন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা আনা হবে না-এ প্রশ্নে প্রতিটি মানুষকে সোচ্চার হতে হবে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর