রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্ষমতায় না থাকলে আদর্শহীনদের দখলে যেত না দলটি

নঈম নিজাম

ক্ষমতায় না থাকলে আদর্শহীনদের দখলে যেত না দলটি

আমি অবুঝের মতো একি করেছি, আমারই অজান্তে হৃদয়েরও প্রান্তে, তোমার মূর্তি কেন গড়েছি, একি করেছি...। হৈমন্তী শুক্লার গান দিয়েই শনিবার সকালটা শুরু। চ্যানেল আই খুলতেই দেখি হৈমন্তী শুক্লা। ঢাকা ও উত্তরা ক্লাবে এর আগে অনেকবার তার গান শুনেছি সামনাসামনি। অসাধারণ গলা এই জীবন্ত কিংবদন্তির। গানটা শুনতে শুনতে মনে হলো মাঝে মাঝে বুঝদার মানুষ অবুঝের মতোই কাজ করে। সবকিছু যখন নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন অজান্তেই ভুল হয়ে যায়। ঢাকা সিটির ভোট দেখে তাই মনে হয়েছে। কোনো দরকার ছিল না এত ভোট দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণার। আরও কম দেখালেই বা কী হতো! মানুষের চোখে দেখা নিয়ে কাহিনী বানানোর সুযোগ অনেক কম। এ ভোটেও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো কোনো বিষয় ছিল না। আওয়ামী লীগ বিশাল একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে দলটির। প্রতি কেন্দ্রে ৫০০ কর্মী রাখা কোনো বিষয় ছিল না। কিছু টাকা না হয় খরচ হতো। কিন্তু তাদের কেউ সংগঠিত করেনি। কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য খরচও হয়তো দেয়নি। খরচ না পেলে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা মাঠে যায় না। কেন্দ্র-খরচ বিরোধী দলে থাকলেও কর্মীরা চায়। আর কর্মী না গেলে সমর্থক কীভাবে যাবে ভোট দিতে? এখন সবার মাঝেই নতুন একটা ধারণা এসে গেছে, ভোট নিয়ে নেতা-কর্মীদের দরকার নেই। পুলিশ আর সিভিল প্রশাসন থাকলেই চলবে। মাঝে তো নির্বাচন কমিশন একটা আছে। মনিটরিং করার জন্য রয়েছে সরকারের অন্য সব প্রশাসনিক যন্ত্র। তারাই বাকিটা সামাল দেবে। কিন্তু এ সংস্কৃতি রাষ্ট্র, সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। আমাদের চিরচেনা রাজনীতি বদলে যাচ্ছে, বদলে গেছে। এ রাজনীতি এখন আর কর্মীবান্ধব নয়। দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নয়। সবাই মোসাহেব আর তোষামোদকারী খোঁজেন। সভাসদে সত্য বলার মানুষ কেউই রাখেন না। এতে সুবিধা অনেক। চাটুকাররা কোথাও কোনো খারাপ কিছু দেখে না। তাদের একমাত্র কাজ, আহা বেশ বেশ। এ চাটুকাররাই সব সময় সর্বনাশ করে দেয়। ক্ষতি করে দলের, দেশের। চাটুকারিতার ইতিহাসের পরিণতি বড়ই নিষ্ঠুর। মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস দেখার দরকার নেই। বাংলাদেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসই বলে দেয় অনেক কিছু। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্র এখন টের পাচ্ছেন চাটুকারদের ওপর নির্ভরশীলতার পরিণাম। আন্দোলনের দিন ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন আর বিরিয়ানি খাওয়ার কথা মানুষ ভুলে যায়নি। শত্রুজ খুঁজতে বের হতেন তাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। কতরকমের ভবন আর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রশাসনও ছিল নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু দেখা গেল সবকিছু উড়ে গেল ধুলোর মতো। এমন দিন সব সময় থাকে না। প্রশাসন কারও আপন নয়। তারা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে যা খুশি তা করে। কিন্তু যাওয়ার আগে সর্বনাশ করে দিয়ে যায়।

আমাদের মনে রাখতে হবে, একটা আদর্শের ওপর ভর করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা, ভোটাধিকার জানতে প্লেটো আর অ্যারিস্টটল পড়ার দরকার নেই। তাদের কোটেশনও খোঁজার দরকার নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী বড় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতাই আমাদের গাইডলাইন। আর শেখ হাসিনার আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস সামনে আনলেই চলে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ন্যায়বিচার, বৈষম্য দূর করা আর শেখ হাসিনার আন্দোলন ছিল ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য। মানুষকে তার ন্যায্যতা দিতে হবে। সহনশীল বাংলাদেশের মানুষ সব সময় একরকম থাকে না। তাদের প্রতিবাদী হতে শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আর ভোটের জন্য মাঠে নামিয়েছিলেন তার কন্যা। সিটি ভোট নিয়ে মানুষ হাসি-ঠাট্টা করে। এত বড় বিজয়ের পর এর দরকার ছিল না। ডাকসু নিয়ে সমস্যা বাড়াচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন করে সংকট তৈরির দরকার নেই। একটা ভোট হোক না, সমস্যা কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান ইসির মতো আচরণ করলে মানুষ ব্যথিত হবে। সাধারণ ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হবে। সমাজে হতাশা বাড়বে। ডাকসু নিয়ে সবার প্রতি সমান আচরণ করতে হবে। বিনা ভোটে বিজয়ী ঘোষণার সংস্কৃতি সবসময় ভালো হয় না। আর চিরদিন একই নীতি চলতে পারে না রাষ্ট্র ও সমাজে। মানুষ বাস্তবতা দেখে সামনে যায়। দল ও সমাজে বৈষম্য তৈরি হতাশা ও ক্ষোভের জম্ম দেয়। সমাজে কিছু তোষামোদকারী তৈরি করে আগামীর বাংলাদেশের কী হবে? আমাকে একজন বললেন, আপনারা অহেতুক লেখালেখি করেন। কথা বলেন। এখন কোনো বিষয়ে কিছু বলে লাভ নেই। দেশটা একদল মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে, যাদের বাস আরেক জগতে। এ কারণে এবার ভোটের পর পুরনোরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। ত্যাগী কর্মীরা হয়েছেন অভিমানী। নবাগতরা সব বুঝে নিচ্ছেন আপন মহিমায়। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা করছেন উল্লাস। পুলিশ ও সিভিল দুই প্রশাসনই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। পেশাজীবীরা সব দেখে বলছেন, আহা বেশ বেশ বেশ। মাননীয়রা তোয়াজ করছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। অবুঝের মতো অথবা বুঝেশুনে আত্মমর্যাদার কথা ভুলে গেছেন সবাই। আমি বললাম, জীবনে সবাইকে একরকম হতে হবে এর কোনো মানে নেই। অভিমানী ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার একটা ঘটনা মনে পড়ছে। সৈয়দ আশরাফ মাত্র দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। একটি টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার পাশে। আশরাফ ভাই তার সঙ্গেই কথা বলছিলেন। এ সময় সৈয়দ আশরাফকে ফোন করেন একটি সংস্থার প্রধান। জানালেন, কিছু বিষয়ে কথা বলতে চান। উত্তরে সৈয়দ আশরাফ বললেন, আমি নির্বাচিত এমপি, এলজিআরডি মন্ত্রী ও একটি দলের সাধারণ সম্পাদক। কোনো নির্দেশ, আদেশ, পরামর্শ থাকলে আমার দলীয় প্রধানই আমাকে দেবেন। আমি জেনে নেব। শুনে নেব। আপনার আসার দরকার নেই। জানি না এখন এই ব্যক্তিত্ব নিয়ে কথা বলার কেউ আছেন কিনা। যত দিন যাচ্ছে, ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলার মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এখন ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলা কেউই পছন্দ করে না। নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির এ যুগটা একটু অন্যরকম। শ্বাস এখানে পরিণত হয় দীর্ঘশ্বাসে! আমরা সেই দীর্ঘশ্বাস নিয়েই হয়তো একদিন চলে যাব। নতুন প্রজম্মের মিডিয়া কর্মীরা বেড়ে উঠছে। তারা এ জগতের সঙ্গে মিলেমিশে কীভাবে চলবে জানি না। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলা, কথা বলার বিষয়গুলো চলে যাবে জাদুঘরে।

কিছুদিন আগে নাঙ্গলকোট থেকে একজন ফোনে বললেন, ভাই, আনিসুর রহমান মিঠুর লেখা পড়েছেন? জবাবে বললাম, মিঠু আবার কবে লেখক হলো! ফোনকারী রাজনৈতিক বন্ধুটির জবাব- আরে ফেসবুকে লিখেছে, পড়ুন। কুমিল্লার রাজনীতিতে আনিসুর রহমান মিঠুকে দীর্ঘদিন থেকে জানি। পরিশ্রমী, ত্যাগী কর্মী আওয়ামী লীগের। দুঃসময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল। এখন মহানগরীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একসময় আফজল খান ও মুজিবুল হকের কাছের কর্মী ছিল। এখন আ ক ম বাহারের সঙ্গে জেলার রাজনীতিটা করে। আমার সঙ্গে সম্পর্কটা দীর্ঘদিন থেকেই ভালো। তার স্ত্রী লিপি অসাধারণ একটি মেয়ে। আমার পুরো পরিবারে লিপি ভীষণ জনপ্রিয় নাম। মিঠুর ফেসবুকে লেখা আমি কয়েক দফা পড়লাম। আপনারাও পড়তে পারেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর দীর্ঘশ্বাস থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। মিঠু লিখেছে, ‘কুমিল্লা শহরের এবং এ জেলার রাজনৈতিক কর্মীদের একটা অনেক বড় অংশ আমার প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা, সাহসিকতা, উদারতা, শ্রম, অর্থ ও সময় ব্যয়ের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। আমার বিশ্বাস আমার পরিশ্রমের সুফল ভোগ করে কেউ বড় নেতা, কেউ মন্ত্রী হয়েছিলেন। আমার মনে করায় কিংবা বিশ্বাসে ভুল থাকতে পারে, কিন্তু অসততা নেই। ১৯৮৭/৮৮/৮৯ সালে ১৫ আগস্ট পালন করা ছিল প্রায় অবৈধ।

শহরব্যাপী পোস্টার থাকত- “মহামুক্তির মহান দিবস-ঐতিহাসিক ১৫ আগস্ট”। সে দিনে, ভবিষ্যতে কোনো দিন মেয়র কিংবা এমপি, মন্ত্রী হওয়ার চিন্তা থেকে নয় বরং আদর্শিক কারণে মনে হতো, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অবিবেকী হত্যার বিচার করা সম্ভব না হলে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান বৃথা হয়ে যাবে। এ দেশে আমার জম্ম বৃথা হয়ে যাবে। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর, জনগণের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি আশা করেছিলাম, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করবেন এবং আমি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাব। কিন্তু খালেদা জিয়াও এরশাদের মতোই দেশ চালাতে লাগলেন। পাঁচ বছর হরতাল, অবরোধ, মিছিল, আন্দোলন, অসহযোগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সর্বোপরি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে বার বার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, সে সরকার ছিল আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো সরকার। সে সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। জামায়াত, জাতীয় পার্টি এবং ছোট ছোট ইসলামী দলগুলো ইসলামী ঐক্যজোট হয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে হারিয়ে দেয়। শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অধ্যায়। সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ, ক্রসফায়ার, হাওয়া ভবন, ২১ আগস্ট ইত্যাদি। আমি ছিলাম তখন কুমিল্লা আওয়ামী লীগের জন্য এক কথায় অনিবার্য। ২০০১ সালের প্রথম গ্রেফতার আমি ও আমার অত্যন্ত কাছের সহযোগী মুন্না ও শরীফ। সেদিনই প্রথম মিছিল শুরু হয় শহরে। এর আগে আওয়ামী লীগ হরতালের দিনেও অফিসের বাইরে বের হতো না। পাঁচ বছর পর খালেদা সরকার আবার একদলীয় নির্বাচন করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করল, আমরা রাজপথে শক্ত অবস্থান নিলাম জীবন বাজি রেখে। সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিল, ১/১১ এলো। এ সময় আমি প্রথমবারের মতো আমেরিকা যাই। নেত্রী গ্রেফতার হলে আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতারা চর্থায় বাসে আগুন লাগায়, সিএসবি টিভি তা ভিডিও করলেও প্রচার করতে পারেনি, বাহার রায়হানের ক্যামেরা নিয়ে যায় আর্মিরা। ২০০৭ সালে আমি আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে কঠিন শীত-বরফের মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছিলাম। আমি এবং তিনজন কর্মী প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীনকে জাতিসংঘের সামনে লাঞ্ছিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। যা টের পেয়ে পুলিশ গোপন রাস্তা দিয়ে তাকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়। তারপর ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচন হলো। আমরা রাত-দিন পরিশ্রম করলাম। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার প্রতিটি আসনে আমি ও আমার কমিটির প্রতিটি কর্মী দিন-রাত কাজ করলাম। এবারে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করল। দলের বেকারদের চাকরি দিল। দেশের জন্য অনেক অনেক ভালো কাজের উদ্যোগ নিল। কিন্তু আমরা অপ্রয়োজনীয় হতে শুরু করলাম দেশব্যাপী। আমাদের প্রজম্মের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই অবহেলার শিকার হলাম। নেতাদের পরিবারের সদস্যরা যাদের রাজনৈতিক কোনো ভূমিকা ছিল না কোনো দিন, তাদের দাম নেত্রীর কাছে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। এটা এক বিরাট রহস্য। এখন মনে হচ্ছে জীবনের ত্রিশ বছরের বেশি সময় অপচয় করে ফেলেছি! সবকিছুই এখন অর্থহীন মনে হয়। কিন্তু আমি এখন বিশ্বাস করি দল ক্ষমতায় না থাকলে আমি এবং আমার মতো যারা আছেন দেশব্যাপী তারাই এখন দায়িত্ব নিয়ে মাঠে থাকত। যেহেতু দল ক্ষমতায় সেহেতু আমাদের এখন আর দরকার নেই। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় দল ক্ষমতায় না থাকলে ভালো হতো। অন্তত আদর্শহীন কর্মীদের দখলে যেত না দলটি।’

রাজনৈতিক কর্মীদের কষ্টের জায়গাগুলো আমি বুঝতে পারি। প্রিয় মিঠু, মন খারাপ করো না। সরকারে থাকলে এক, বিরোধী দলে আরেক নীতিই চলছে আমাদের দেশে। সুবিধাবাদীরা সবসময় ভালো থাকে। তারা সময় বুঝে রাজনীতি করে। তাদের কোনো সমস্যা নেই। এ সুবিধাবাদীদের দিকে কারও চোখও নেই। ওয়ান-ইলেভেন ওদের দেখে না। বিএনপি আমলে ওরা সুখে শান্তিতে থাকে। প্রতিপক্ষরাও জানে এ আকাইম্মারা থাকলেই ভালো। কারও উপকার-অপকার কোনো কিছুতেই লাগবে না। ক্ষমতার রাজনীতি ওদের জন্যই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একদল মানুষের জম্ম কাজ করার জন্য। আরেক দল মানুষের জম্ম ভোগ করার জন্য। আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীরা কষ্ট পায়। কিন্তু তারা আদর্শচ্যুত হয় না। তারা খারাপ সময়ে এক হয়ে ওঠে। কাজ করে দলের জন্য। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কখনো কখনো মেলায়। কিন্তু কিছু নেতার স্বার্থপরতা অবাক বিস্ময়ে হজম করে। কখনো কখনো ক্ষোভের কথা, কষ্টের কথা শেয়ার করে। বাস্তবে তারা খোলস বদল করতে পারে না। আর পারে না বলেই ক্ষমতার রাজনীতি তাদের করা হয়ে ওঠে না। আর করলেও মূল ক্ষমতার ভাগীদার হতে পারে না। সত্যিকার কর্মীদের ইমেজ সংকট খোঁজে দল। নিত্যনতুনদের ইমেজের দরকার হয় না। কারণ ইমেজ শব্দটা তৈরির সুযোগও ওরা পায়নি। ইতিহাসের এ নিষ্ঠুরতা নিয়েই কাজ করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব সবারই থাকা দরকার। সমাজকল্যাণ করতে কেউ রাজনীতিতে যোগ দেয় না। সব হিসাব মিলবে তা বলছি না। কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতিতে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ছুড়ে ফেলা হবে, আর উড়ে এসে জুড়ে বসারা সব দখল করে নেবে- তা মেনে নেওয়া যায় না।

 

            লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর