সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণকারীরাই মুসলিম

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

মহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণকারীরাই মুসলিম

‘মুসলিম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ আত্মসমর্পণকারী। আর পারিভাষিক অর্থে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আইন পালনকারী। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পূর্ণ মুসলিম সে পুরুষ বা নারী যার জবান ও হাত থেকে অন্যান্য পুরুষ বা নারী নিরাপদে থাকে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)। হাদিসের অর্থ হচ্ছে শরিয়তের হুকুম ব্যতীত যে কোনো মানুষকে যে কোনো রকমের কষ্ট দেওয়া ইসলামবিরোধী কাজ। এতে মানুষ পূর্ণ মুসলিম থাকে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মুসলিম সে ব্যক্তি যে, নিজের জন্য যেটা কল্যাণকর মনে করে অন্যের জন্যও সেটা কল্যাণকর মনে করে। (আহমাদ, মিশকাত)। মানুষকে কষ্ট দেওয়া সদাচরণবিরোধী কাজ, যার পরিণাম জাহান্নাম। জুবায়ের ইবনে মুতঈম (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)। কেননা সম্পর্ক ছিন্ন করাই হচ্ছে আদর্শ নষ্ট করার মূল। প্রকৃত মুসলমান না থাকার পরিচায়ক। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভ্রাতা। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, আর তাকে দুশমনের হাতেও সোপর্দ করতে পারে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভ্রাতার প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেয়, এর বদৌলতে মহান আল্লাহ মহাপ্রলয়ের দিন তার কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহপাক মহাপ্রলয়ের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুসলিম মুসলিমের ভ্রাতা। সে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না, তার সঙ্গে মিথ্যা বলতে পারে না। আর তাকে অপমানও করতে পারে না। প্রত্যেক মুসলিমের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্ত অপর সব মুসলিমের ওপর হারাম। (তিনি বুকের দিকে ইশারা করে বলেন:) আল্লাহভীতি এখানে। কোনো ব্যক্তির খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে তার মুসলিম ভ্রাতাকে হেয় প্রতিপন্ন করে। (মুসলিম, তিরমিজি)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতাকে ধোঁকা দিও না, পরস্পর শত্রুতা পোষণ করো না, পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, একজনের দামের ওপর অপরজন দাম করো না। মহান আল্লাহর দাসগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে থেকো। এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তাকে নির্যাতন করতে পারে না। হেয় মনে করতে পারে না এবং অপমান-অপদস্তও করতে পারে না। তাকওয়া এখানে। নিজের বক্ষের দিকে ইশারা করো এ বাণীটি তিনি তিনবার বলেন। কোনো ব্যক্তির খারাপ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে তার মুসলিম ভ্রাতাকে হেয় মনে করে। সব মুসলিমের রক্ত, ধন-সম্পদ এবং মান-সম্মান অপর সব মুসলিমের ওপর হারাম। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি)।       

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর