মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিমান এবং দুর্নীতি

চোর-মহাচোরদের সামাল দিতে হবে

বিমান আর দুর্নীতি যেন অবিচ্ছেদ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। দুর্নীতির রাঘববোয়ালরা সহস্র আরব্য রজনীর থিপ অব বাগদাদের মতো বিমানে জেঁকে বসায় লোকসান এ সংস্থার নিয়তির লিখনে পরিণত হয়েছে। যে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ বিদেশে কর্মরত বা অবস্থান করে সে দেশের জাতীয় বিমান সংস্থার হতশ্রী অবস্থা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাইয়ের প্রবক্তারা বিমানকে জাতীয় অপমান আর লোকসানের প্রতীক বানিয়েছেন নিজেদের অপকর্মের মাধ্যমে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও বেরিয়ে এসেছে বিষয়টি। তারা বলেছেন, বিমানের আটটি খাত সুস্পষ্টভাবে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়মের উৎস। দুদক চিহ্নিত খাতগুলোর মধ্যে আছে বিমান কেনা ও বিমান লিজ খাত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিং, গ্রাউন্ড সার্ভিস সিস্টেম, কার্গো এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট খাত এবং বিমানের ফুড ক্যাটারিং খাত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ-সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়ে দুদক কমিশনার বলেছেন, এ খাতগুলোয় ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। বিশেষ করে বিমান কেনা ও লিজের ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। একইভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিংয়ের ক্ষেত্রে জিনিসপত্র কিনতে গিয়েও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। গ্রাউন্ড সার্ভিসের কথা উল্লেখ করে দুদক কমিশনার বলেছেন, এখানেও দুর্নীতি শিকড় গেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেলে দেখা যায়, ইমিগ্রেশন শেষ করে যাত্রী বেল্টে পৌঁছার আগেই লাগেজ পৌঁছে যায়। কিন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। লাগেজ পেতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কার্গো এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট খাতেও দুর্নীতি হচ্ছে। দুদকের অনুসন্ধানে বিমানের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টিকিট কাটতে গেলেই বলা হয় টিকিট নেই। আবার কারও রেফারেন্স বা বিশেষ কেউ গেলে টিকিট পাওয়া যায়। জাতীয় বিমান সংস্থার সেবা বাড়াতে এবং লোকসানি থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে দুর্নীতির উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। বিমানবন্দরগুলো যাতে সোনা ও মাদক চোরাচালানের ঘাঁটি হওয়া থেকে সরে আসতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ক্ষেত্রের চোর-মহাচোরদের নিবৃত্ত করা জাতীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর