শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

দানের উপকার বখিলের শাস্তি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

দানের উপকার বখিলের শাস্তি

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো মহাক্ষতির মুখোমুখি হয়। আমি তোমাদের যেসব রিজিক ও সম্পদ দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। যদি তা না কর, তাহলে মৃত্যুর সময় তোমাকে বলতে হবে- হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছু সময় দেননি কেন? তাহলে আমি আমার সব সম্পদ আপনার পথে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ সূরা মুনাফিকুন, আয়াত ৯-১০। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের মুখোমুখি করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৫।

মানুষের কল্যাণে দান-সদকাহ করার ব্যাপারে আল কোরআন এভাবেই নির্দেশ দিয়েছে। বলেছে উৎসাহের কথা। ওপরের দুটি আয়াতে দান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন দেখুন দান করার প্রতিদান সম্পর্কে কী বলেছেন আল্লাহ। ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও ভালো। আল্লাহ তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭১। ‘যারা নিজের ধনসম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, ব্যয় করার পর সে অনাগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং মানুষকে কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৬২। আল্লাহ আরও বলেন, ‘শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ দান করার বিনিময়ে ক্ষমা ও সম্পদ বৃদ্ধি করার ওয়াদা করেন। বস্তুত আল্লাহ সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৬৮।

দান-সদকাহের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একটি খেজুর দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সদকাহ কবরের আজাব বন্ধ করে দিতে পারে। আর কিয়ামতের দিন বান্দাকে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা করে দেবে।’ তাবারানি, বায়হাকি। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জীবিত থাকা অবস্থায় এক টাকা দান করা, মরণের পর এক হাজার টাকা দান করার চেয়ে বেশি কার্যকর।’ আবু দাউদ, মিশকাত।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, দান করলে আল্লাহ বান্দার সম্মান বৃদ্ধি ছাড়া কমান না। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন।’ মুসলিম।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন যায় না যে দিন দুজন ফেরেশতা পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে না, তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকে এবং বলে, হে আল্লাহ! আপনি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম বিনিময় দিন। দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস ও বরবাদ করুন।’ বুখারি, মুসলিম।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর খুব কাছে থাকেন, বেহেশতের কাছে এবং মানুষের প্রিয় হন। আর দূরে থাকে ভয়াবহ দোজখ থেকে। অন্যদিকে কৃপণ অবস্থান করে আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশতের বিপরীতে এবং মানুষের শুভ কামনা থেকে দূরে। অথচ দোজখের একেবারে কাছে। জাহেল দাতা বখিল আবেদের চেয়ে আল্লাহর কাছে অবশ্যই প্রিয়।’ তিরমিজি।

আসুন! আমরা সবাই কৃপণতা ভুলে যার যার সামর্থ্যানুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানবতার কল্যাণে বেশি বেশি দান-সদকাহ করি। আল্লাহ আমাদের দাতা হিসেবে কবুল করুন। জান্নাত আমাদের কাছে এনে দিন। জাহান্নাম দূরে সরিয়ে নিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর