শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারত ও চীনের অবস্থান

ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারত ও চীনের অবস্থান

বাংলাদেশ, ভারত ও চীন এশিয়া মহাদেশের তিনটি দেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও চীনের সম্পর্ক এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত সভ্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্যের শক্তিশালী কেন্দ্র ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত দেশ। দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সম্পর্কের কারণেই এ অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে সার্ক ও বিমসটেক গঠিত হয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলো বাংলাদেশ ও ভারত। সভ্যতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও চীনের অবস্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করা যাক।

আমরা জানি ৫ হাজার বছরের ভারতীয় সভ্যতা বিশ্ব সভ্যতার শক্তিশালী কেন্দ্র। চীনা সভ্যতাও প্রাচীন সভ্যতা। প্রাচীনকাল থেকেই ভারত ও চীনের লোকজন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াত করে আসছে। চীনা নৃগোষ্ঠীর এক বিরাটসংখ্যক লোক ভারতে বসবাস করছে এবং ভারতীয় সমাজের সঙ্গে মিশে গেছে। অন্যদিকে ভারতে সৃষ্ট ও বিকশিত বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতি চীনা সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে এবং কনফুসিয়াসের মতবাদের সঙ্গে সহাবস্থান করে সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এ অঞ্চল থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা গিয়েছিলেন, তারা মূলত সভ্যতা, ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ভূমিকা রাখার জন্যই গিয়েছিলেন। চীন থেকে যারা এসেছেন বেশির ভাগই নালন্দা ও তক্ষশীলায় শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য এবং পর্যটক হিসেবে এসেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রায় ১৫০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। এর পরই ১ হাজার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মিসরে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। এর পরপরই ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত হয় বলনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে উল্লেখ্য, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ বছর থেকে খ্রিস্ট-পরবর্তীকালে মৌর্য-গুপ্ত শাসনের সময় ভারত জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক শক্তিতে বিশে^ শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করেছিল। সপ্তদশ ও অষ্ঠাদশ শতাব্দীতে ভারতের মোগল শাসনের সময় ভারত ও চীন দুটি দেশই পৃথিবীর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শীর্ষ পর্যায়ে ছিল। এরপর অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে এ অবস্থান দখল করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। এ দুটি দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎকর্ষতা সাধনের ফলে শীর্ষ পর্যায়ে চলে যায়। ভারত, চীন, আরব-পারস্য, ইউরোপীয় সভ্যতাসহ পৃথিবীর সব সভ্যতা পরস্পরকে প্রভাবিত করেছে। সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও জনশক্তিতে যে দেশ যত শক্তিশালী সে দেশ তত বেশি পৃথিবীতে সমাদৃত। সে বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং এশিয়ার ভারত, চীন ও জাপান গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, সৌদি আরব, ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলসহ অন্য দেশও এগিয়ে চলেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ হয়েছে, বিগত বছর ৯টি দেশ ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি করেছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত অন্যতম। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ ২০৩৩ সালে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ২৪তম অবস্থানে যাবে। এ সময় পৃথিবীর প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও জার্মানি। অবশ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থা স্যামুয়েলের মতে ২০৫০ সালে ভারত পৃথিবীর মধ্যে অর্থনৈতিক শক্তিতে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করবেÑ জনশক্তি, গবেষণার উৎকর্ষতা ও গণতন্ত্রের জন্য। এখানে উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশ এ উপমহাদেশের সভ্যতার অংশীদার। ভৌগোলিক নৈকট্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদৃষ্টির কারণে ভারত আমাদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফেরার পথে দিল্লিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর যে এত মিল তা হলো আদর্শের মিল। আমরা উভয়ে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা জানি জাতিরাষ্ট্র মানবসভ্যতার মূল্যবোধ এবং দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করেই প্রতিষ্ঠিত হয়। সে লক্ষ্যেই ১৯৭২ সালের সংবিধান চার মূলনীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশকে পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠিত করে সব বিষয়েই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। তিনি এ লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করা এবং সাহায্য-সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবে ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ২৫ বছরের বন্ধুত্ব ও মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করেন; যার লক্ষ্যই ছিল অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নানা চড়াই-উতরাইর মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংযোগ, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, মহাকাশ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এ সম্পর্ক জোরদার ও সম্প্রসারিত করার জন্য সেনাপ্রধানসহ সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কয়েকবার ভারত সফর করেছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৭৫-পরবর্তীকালে চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শুধু বৃদ্ধি পায়নি, সামরিক ক্ষেত্রেও সম্পৃক্ততা অনেক গুণ বেড়েছে। বিগত দিনের সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়, চীন ও পাকিস্তানের হয়ে ভারতকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়। বর্তমানে পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের তুলনায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও বলেছেন, বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে গেছে। সে অবস্থায় ভারতকে মোকাবিলা করার জন্যই অনেকে চীনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে বলছেন। চীন দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে। কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেও বিনিয়োগ চলছে। ভারতও বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বিনিয়োগও সম্প্রসারিত করছে। এজন্য তিনটি বিশেষ অঞ্চল রামপাল, ভেড়ামারা ও মিরসরাইয়ে বিনিয়োগের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ভারতীয় বিনিয়োগও ব্যাপক রূপ নেবে। বাংলাদেশের অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়নে ভারত ও চীন উভয়ই সহায়তা করছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২৪ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিন কিস্তিতে ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা দিয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আরও ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতিসহ মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ চলছে। প্রসঙ্গত, একসময় ইউরোপ-আমেরিকার সম্পদশালী কনসোর্টিয়াম-ভুক্ত দেশ এবং প্রাচ্যের জাপানের কাছ থেকে মূলত আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও বিনিয়োগ আসত, বাজেট তাদের সাহায্যের ওপর নির্ভর করত। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা স্বনির্ভর হয়েছি এবং দেশ এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটিসহ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা স্বনির্ভর হয়েছি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রশংসিত হচ্ছে। যে কটি দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ভূ-রাজনীতিতে বিশেষ করে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে বিশেষ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত জাতিরাষ্ট্রের মূল্যবোধের ভিত্তিতে ’৭২ সালের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক নির্বাচনে মহাজোটের জয়লাভ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারেও ঐকমত্য সৃষ্টি দ্রুত প্রয়োজন। আজ বিভিন্ন মহলের বিবৃতিতে এটি স্পষ্ট। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরাই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে। আশা করা যায়, এর ভিত্তিতেই গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিবে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট, গণফোরামসহ অন্য দল মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা। উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ ও ’১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা ও নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য যে আগুনসন্ত্রাস ও অন্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছে, যার ফলে সাংগঠনিক শক্তি অনেক দুর্বল হয়েছে যা নির্বাচনের সময় প্রমাণিত হয়েছে। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যেভাবে এগিয়ে এসেছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ভারত সরাসরিভাবে সমর্থন জানায়। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের পরপরই সরকারকে অভিনন্দিত করে। চীন এক সপ্তাহ পর অভিনন্দিত করে, অপেক্ষা করছিল বিকল্প কিছু দাঁড়ায় কিনা। এবার তড়িঘড়ি করে ভারতের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো থেকে প্রমাণিত হয় বর্তমান সরকার অনেক স্থিতিশীল। অবশ্য অনেকেই প্রশ্ন করেন এবং প্রশ্ন উত্থাপন করা স্বাভাবিক যে গতবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ ছয় মাস পর সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। এখানে উল্লেখ্য, এসব দেশ বিভিন্ন অঞ্চলে ও দেশের সঙ্গে সম্পর্কের এজেন্ডায় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো থাকে, তবে বিভিন্ন সময় বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করি। এবার নির্বাচনের পর দ্রুততম সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা মূলতপক্ষে সহিংসতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায় এবং সহযোগিতার আশ^াস দেয়। এ দেশগুলোর প্রভাবিত জাতিসংঘ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে সহযোগিতার আশ^াস দেয়। ওআইসি মহাসচিব, রাষ্ট্রদূতরাও সাহায্য-সহযোগিতার আশ^াস ব্যক্ত করেছেন। ভূ-রাজনীতিতে ভারত ও চীন প্রভাবশালী দেশ হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তবে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ গণতান্ত্রিক দেশসমূহের অতি উত্তম সম্পর্ক রয়েছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছে। এ ছাড়া উন্নয়নশীল ও উন্নত প্রায় সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। সে কারণে ভূ-রাজনীতিতে ভারত অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। বিগত দশকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় প্রতিযোগিতায় ভারত যে চীনের থেকে এগিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। সাম্প্রতিকালে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে ভারত ও চীনের প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব থেকে তা দৃশ্যমান হয়েছে। মালদ্বীপের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে ভারত, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে মালদ্বীপে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে জোরদার করেছে। যেখানে চীন ভারতকে সতর্ক করে দিয়েছিল। সেখানে মালদ্বীপে ইবরাহিম সোলিহ প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করলেন যে ভারত গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে এবং এ কারণে গণতান্ত্রিক শক্তির জয় নিশ্চিত করছে। একইভাবে শ্রীলঙ্কায় চীনাপন্থি বলে পরিচিত মাহিন্দা রাজাপক্ষের অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। চীন বিআরআইর (ইজও) নামে যে কর্তৃত্ববাদী পরিকল্পনা করেছে, সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কায় ও মালদ্বীপে সাম্প্রতিককালে তাদের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াড গঠন করা হয়েছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌপরিবহন কোনো অবস্থাতেই বাধাগ্রস্ত না হয় তা এ জোট নিশ্চিত করতে চাইছে। প্রসঙ্গত, এ অঞ্চল দিয়ে পৃথিবীর নৌপরিবহনের তিন ভাগের দুই ভাগ হয়ে থাকে। চীন একদিকে নিজ দেশে কট্টরপন্থিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা পাকিস্তানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। আলোচনা থেকে এটা স্পষ্টÑ সভ্যতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, উন্নয়নের স্বার্থে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্য নয়, বৃহৎ গণতান্ত্রিক ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সর্বাত্মক সম্পর্কই বাংলাদেশ ও ভারতসহ এ অঞ্চলকে সমৃদ্ধিশালী ও উন্নত অঞ্চলে পরিণত করবে; যার ফলে গণতন্ত্র, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর