মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ন্যায়বিচার না হলে মানুষের হক নষ্ট হয়

মাওলানা আবদুর রশিদ

সমাজে দুর্নীতি চেপে আসার একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে ন্যায়সংগত বিচার না করা। ন্যায়সংগত বিচার না করলে মানুষের হক নষ্ট হয়, যা কিয়ামতের দিন পরিশোধ করতে হবে। জেনেশুনে অন্যায় বিচার করলে পরিণাম হবে জাহান্নাম। না জেনে ন্যায়সংগত বিচার করলেও হবে জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন, ‘যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।’ সূরা মায়েদা, আয়াত ৪৪। আল্লাহ পরের আয়াতে বলেন, ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই জালিম।’ সূরা মায়েদা, আয়াত ৪৫। এর পরের আয়াতে তিনি বলেন, ‘যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।’ সূরা মায়েদা, আয়াত ৪৭। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যাকে মানুষের মাঝে বিচারক নির্ধারণ করা হলো তাকে ছুরিবিহীন জবেহ করা হলো।’ আহমাদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত। এ হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচার করা কাজটি সবচেয়ে কঠিন বলে ইঙ্গিত করেছেন। কারণ, বিচার হক হলে অনেক লোক অসন্তুষ্ট হবেন, বিচার না-হক হলে পরিণাম হবে জাহান্নাম। হজরত বুরাইদা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতি। আর দুই প্রকার বিচারক জাহান্নামি। প্রথম প্রকার : যে বিচারক সৎ উপলব্ধি করে এবং তদনুযায়ী বিচার করে সে জান্নাতি। দ্বিতীয় প্রকার : যে বিচারক সৎ উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু তদনুযায়ী বিচার করে না সে জাহান্নামি।

তৃতীয় প্রকার : যে বিচারক সত্য উপলব্ধি করতে পারে না। অজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচার করে সেও জাহান্নামি।’ আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বিচারক যতক্ষণ পর্যন্ত হক বিচার করে আল্লাহ ততক্ষণ তার সঙ্গে থাকেন। আর যখন না-হক বিচার করে আল্লাহ তখন তার কাজ তার ওপর সম্পন্ন করেন।’ ইবনে মাজাহ। হজরত আবু বাকরা (রা.) বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘অবশ্যই যেন কোনো বিচারক রাগান্বিত অবস্থায় দুজনের মধ্যে বিচার না করে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেয়ামতের দিন ন্যায় বিচারকের প্রতি এমন বিপদ ঘনিয়ে আসবে যে, বিচারক দুঃখ করে বলবে, হায়! আমি যদি একটি খেজুরের ব্যাপারে দুজনের মধ্যে বিচার না করতাম। (আহমাদ, মিশকাত)। ন্যায়বিচারকের অবস্থা যদি এরূপ হয় তাহলে অন্য বিচারকের অবস্থা কেমন হবে?

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর