বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাকসুতে দেউলিয়া ছাত্র রাজনীতি পরাজিত : ছাত্রীদের বীরত্ব জয়ী

পীর হাবিবুর রহমান

ডাকসুতে দেউলিয়া ছাত্র রাজনীতি পরাজিত : ছাত্রীদের বীরত্ব জয়ী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বলা হতো জ্ঞানের মন্দির, মুক্তচিন্তার লালনভূমি। এখন আর তা কেউ বলে না। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কথাটা মানুষ ভুলে গেছে অনেক বছর আগেই। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুকে বলা হতো সেকেন্ড পার্লামেন্ট। জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বটতলা থেকে আন্দোলন সংগ্রামে গতিপ্রবাহ নির্ধারণ হতো। জাতির ভাগ্য নির্ধারণের ঘোষণা আসত এখান থেকে। সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশে বার বার ডাকসুর নেতৃত্বে এই বটতলার ডাকে গোটা বাংলাদেশের তারুণ্য জেগেছে। ষাটের দশকে এখান থেকে রেনেসাঁ বা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে। গণজাগরণ ঘটেছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের গৌরবময় যৌবনে উত্তাল সংগ্রামের ভিতর দিয়ে ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে জাতির জীবনে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এসেছে। লৌহমানব-খ্যাত সেনানায়ক আইয়ুব খানের পতন ঘটেছে। বিসুবিয়াসের মতো জ্বলে ওঠা তারুণ্যের আগুন গণআন্দোলন ও গণসংগ্রামের ঢেউ তুলেছে। ফাঁসির মঞ্চ থেকে সেদিন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হয়ে লাখো মানুষের সমাবেশে ডাকসু ভিপি তোফায়েলের কণ্ঠে জনগণের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। এখান থেকে ডাকসু ও ছাত্রলীগ মিলে গঠিত স্বাধিকার স্বাধীনতার পথ ধরে তরঙ্গের মতো সারা বাংলার মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের জায়গাটি আস্থা-বিশ্বাসের পরম আশ্রয় হয়ে উঠেছিল। সত্তরের নির্বাচনে জনগণ তাঁকে ব্যালট বিপ্লবে বাঙালি জাতির ভাগ্য নির্ধারণের একক নেতৃত্বের মঞ্চে বসিয়েছিল। ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সেই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দূরে থাক, স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুর পর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা যুব ও ছাত্র নেতারাই কার্যত মানুষের নয়নের মণি ও বঙ্গবন্ধুর শক্তির উৎস হয়ে উঠেছিলেন। ডাকসু ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এখান থেকেই স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বের গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ, আদেশ ও ডাক সেদিন গোটা জনগণ চিন্তা-চেতনা ও হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছিল।

এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আ স ম আবদুর রবের হাত ধরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল। সেদিনের ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক অকালপ্রয়াত আবদুল কুদ্দুস মাখনকে বীর বাঙালি ভালোবেসে চার খলিফা বলে ডেকেছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পল্টনে লাখো মানুষের সমাবেশে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভা থেকে স্বাধীনতার ইশতেহারই পাঠ করা হয়নি, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন রাষ্ট্রের পিতা বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়েছে সারা বাংলায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাকিস্তানের পতন ঘণ্টাই বাজেনি, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারা বাংলায়। ডাকসু একদিকে রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, নাজিম কামরান চৌধুরীসহ ষাটের দশকের অসংখ্য নেতার যেমন জন্ম দিয়েছে, তেমনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনীর চার প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের মতো নেতার জন্ম দিয়েছে। মস্কো ও পিকিংপন্থি ছাত্রনেতাদের মধ্যে কাজী জাফর আহমদ, কমরেড ফরহাদ, হায়দার আকবর খান রনো, ছাত্রলীগের মাজহারুল বাকী, ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, আবদুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলীসহ অসংখ্য নেতার জন্ম দিয়েছে। জন্ম দিয়েছে মোস্তফা জামাল হায়দার, সাইফুদ্দিন মানিক, নুরুল ইসলাম নাহিদসহ একদল বামপন্থি নেতা।

একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যা অভিযানে এই বিশ্ববিদ্যালয় টার্গেটের শিকার হয়। এমনকি হায়েনারা একাত্তরে সব আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার চিহ্নও মুছে ফেলে। তাদের আক্রমণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাও রেহাই পাননি। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই ক্রান্তিকালেও বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ছাত্রলীগের ভাঙনের মধ্য দিয়ে অতিবিপ্লবী জাসদের আবির্ভাব সরকারবিরোধী অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তারুণ্যকে তাদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগানে টেনেছিল। তিয়াত্তর সালের ডাকসু নির্বাচনে জাসদকে ঠেকাতে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ মিলে লেনিন-গামা প্যানেল দিয়েছিল। রাজনীতির সৎ ও সাহসী পুরুষ আ ফ ম মাহবুবুল হকের বিজয় ঠেকাতে সেদিন ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে ডাকসুকে প্রথম কলঙ্কিত করেছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর এক কঠিন দুঃসময়ে তাঁর আদর্শের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করা ছাত্রলীগ ওবায়দুল কাদের ও বাহলুল মজনুন চুন্নুর নেতৃত্বে আদর্শিক চেতনায় ছাত্রলীগের পুনর্গঠনই করেননি, সারা দেশে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেছিলেন। সেদিনও সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল শিক্ষাঙ্গনে কোনো অবস্থান করতে পারেনি। ছাত্রলীগ, জাসদ ও ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিযোগিতামূলকভাবে ছাত্র রাজনীতির গৌরবের উত্তরাধিকারিত্ব লালন করেছিল। যদিও সেদিনের জাসদ ছাত্রলীগ সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ফাঁসিতে তাদের নেতা কর্নেল তাহের বীরউত্তমকে হারালেও মুজিববিদ্বেষী ছিল।

সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সময়ও ডাকসু নির্বাচন তিনবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্না ও আক্তারউজ্জামান প্রথম দুবার ভিপি ও জিএস হয়েছিলেন। পরের বার আক্তারউজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন বাবলু বাসদ থেকে ভিপি-জিএস নির্বাচিত হন। সেনাশাসক এরশাদের ’৮৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে শক্তিশালী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিষদের প্যানেল থেকে তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ভিপি, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. মুশতাক হোসেন জিএস নির্বাচিত হন। নব্বইয়ের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে আমান উল্লাহ আমান ভিপি ও খায়রুল কবীর খোকন জিএস নির্বাচিত হন। তারপর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাকসুসহ সব ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এরশাদ পতন আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে যায়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে এরশাদ সরকারের পতন ও সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশে শিশু গণতন্ত্রের নবযাত্রা হয়। পরে নব্বই-উত্তর সেই ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক শাসনামলের ধারাবাহিকতায় ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করার মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজের গণতান্ত্রিক অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়নি, ছাত্র রাজনীতিকে অসুস্থ ধারায় পতিতই করা হয়নি, জাতীয় রাজনীতিতেও আদর্শিক, কমিটেড নেতৃত্ব তৈরির পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। তার পর থেকে ডাকসুকে আর সেকেন্ড পার্লামেন্ট বলা হয়নি।

গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় গণরাজনীতি থেকে ছাত্র রাজনীতি রাজদুর্নীতি ও প্রতিহিংসার বিষাক্ত বাতাস, ক্ষমতার লোভ-মোহ, মূল্যবোধহীন ভোগবিলাসের পথে নিতে নিতে প্রাণহীন করে দেয়।

নব্বই-উত্তর গণতন্ত্রের যাত্রাপথে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সমঝোতার রাজনীতির যে ধারা চালু হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে সেই পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ, প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে শান্তি সমাবেশ থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাকে দলের শীর্ষ নেতাদেরসহ পৃথিবী থেকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষমতার রাজনীতি পাকাপোক্ত করার উচ্চাভিলাষ মাঝখানে অবিশ্বাসের  স্থায়ী বন্দোবস্তই করেনি, ভোটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পথটিও রুদ্ধ করে দেয়। গোটা গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ও দলীয় আগ্রাসনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আটকে দেশকে বিভক্তির চোরাবালিতে ডুবিয়ে দেয়। মাঝখানে ওয়ান-ইলেভেনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেও আরেক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি এখনো তার চড়া মাশুল গুনছে।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। নেতা-কর্মীদের নামে মামলার পাহাড়। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড লন্ডনে নির্বাসিতই নন, আইনের চোখে একুশের গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত এক পলাতক আসামি। বিএনপি তো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, তার মিত্রশক্তি একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের শক্তিকেও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শীর্ষ নেতারা ফাঁসিতে ঝুলেছেন। দলের মধ্যে এখন মতবিরোধ প্রকট হলেও সামনে নিষিদ্ধ হওয়ার পালা। এর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সংবিধানপ্রণেতা ও প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিস্ময়কর ফলাফলে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে মাত্র নয়টি আসন পেয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ফলাফল গ্রহণ করেনি। নতুন নির্বাচন চেয়েছে এবং সংসদে যোগদান না করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সরকারবিরোধী কোনো গণআন্দোলন গড়ে তুলবে বা সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে এমন রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখে বিএনপিকে দেখা যাচ্ছে না। বিবৃতি আর প্রেস ব্রিফিংনির্ভর দলে পরিণত হয়েছে শক্তিশালী বিএনপি।

ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর মুজিবকোট গায়ে পরে মহান নেতার আদর্শের রাজনীতির কথা বলে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হলেও সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মনসুর সংসদে যোগ দিয়েছেন। রাজনীতি তাঁকে যে যন্ত্রণা ও নিঃসঙ্গ পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছিল, তা কাটিয়ে উঠে নিজেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা তাঁকে দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন।

নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট অভিযোগ করেছে আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরেছে একই অভিযোগ টিআইবিও করেছে। সরকারও নাকচ করেছে অভিযোগটি। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে বা ইভিএমে ভোট হলে ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কোনো সুযোগ থাকবে না বলে মন্তব্য করে রীতিমতো বিতর্কের ঝড় তুলেছেন। তার এ বক্তব্য একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে। প্রচ্ছন্নভাবে যেন তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সত্যিই নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে। যদি তাই হয়, তার এ বক্তব্যের কারণে তার পদত্যাগ করা উচিত। অবসরে যাওয়া ব্যক্তিরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনে আসবেন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবেন। আরাম-মর্যাদা ছাড়তে চাইবেন না। আবার আগুনে ঘি ঢেলে যাবেন, তা তো হতে পারে না। যদি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েই থাকে এবং তিনি সেটি বিশ্বাস করে থাকেন বা জেনেও ব্যবস্থা নিতে পারেননি তাহলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তির লোভ পরিহার করে তাকে পদত্যাগ করে বিদায় নেওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার কখনো বিপ্লব কখনো সমঝোতার কথা বলছেন। কিন্তু অসন্তুষ্ট হয়ে সুযোগ-সুবিধার লোভ ছেড়ে যাচ্ছেন না। মাঝখানে নির্বাচন ও মানুষকে বিভ্রান্তির জালে আটকে দিচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সুনামগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা কিংবা ভোটের দিন, ভোটের পর গণনার সময় কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।’ তিনিও যেন স্বীকার করছেন, আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছিল। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থেকেও একেকজনের অতিকথন ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য গোটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের হৃদয়-মন অস্থির-অশান্তই করে দিচ্ছে না, প্রাণহীন পরিবেশেরও জন্ম দিচ্ছে।

শাহাদাত হোসেন নির্বাচনী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র পরিদর্শন বা মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলার চেয়ে হাওররক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। এটা কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব বা কর্তব্যে পড়ে না। হাওররক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, প্রকৌশলী বা জনপ্রতিনিধিরা যেতে পারেন। এমনকি দুর্নীত দমন কমিশনের প্রতিনিধিরাও দেখে আসতে পারেন, সেখানে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কিনা। একটা তুঘলকি কাজকারবার চলছে সবার মধ্যে।

আমাদের জন্ম শেখ মুজিবের উত্থানকালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জমানায়। আমাদের ছাত্র রাজনীতির পাঠ সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের জমানায় ছাত্রলীগের পতাকাতলে মহান মুজিবের নামে। আমাদের আন্দোলনমুখর তারুণ্য পথ হেঁটেছে, জেল খেটেছে এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। তখন থেকে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি যে তালিম নিয়েছিলাম, নব্বইয়ের গণতন্ত্রের নবযাত্রায় সেটিকে পেশার তারে জড়িয়েছি। আমাদের সময়ে আর্থিক টানাপড়েন ছিল। কিন্তু প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা ছিল। কাজের আনন্দ ছিল। আদর্শিক মূল্যবোধের মনোবলে একটা অবাধ স্বাধীনতা ছিল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভঙ্গুর হলেও সরকার ও বিরোধী দল দুই চাকার ওপর নির্ভর করে চলেছে। আমরাও মনের আনন্দে সংসদ থেকে রাজপথ, রাজপথ থেকে রাজনীতির অন্দরমহলে খবরের জন্য নিরন্তর ছুটেছি। আজকালকার মতো চতুর্মুখী চাপ ছিল না। ক্ষমতাবানদের নানামুখী দম্ভ ও দাপট এত তীব্র ছিল না সবখানে। পঁচাত্তর-উত্তর দীর্ঘ সময়ে এবং ২০০১ সালের পর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতার বাইরে তখন গভীরভাবে দেখেছি, কারা আওয়ামী লীগের প্রেমে অন্ধ, কারা আওয়ামী লীগবিদ্বেষী, কারা মুজিব-অন্তঃপ্রাণ, কারা মুজিববিদ্বেষী। গত ১০ বছর ধরে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও তার জোট শরিকরা ক্ষমতায়। আর ক্ষমতার ছায়াতলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সুযোগসন্ধানীদের এত ভিড় এত বন্দনা তোষামোদ দেখি আর বিস্মিত হই। জিয়ার অনুসারীদের কপালে জোটে স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, মুজিববিদ্বেষী পায় একুশে পদক। মাঠের ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা যেমন সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্যে অস্থির, কোণঠাসা, তেমনি সমাজের যেখানে যাই এত নব্য আওয়ামী লীগার কেউ বিত্ত-বৈভব গড়েছেন, কেউ নানা শ্রেণি-পেশা থেকে ক্ষমতা ও সম্পদকে উপভোগ করছেন। আর আওয়ামী লীগ বন্দনা করছেন। বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। ১০ বছরের নাবালক নব্য আওয়ামী লীগারদের চেহারা দেখে। যাক, এটি আওয়ামী লীগের ব্যাপার। শুদ্ধি অভিযান চালাবে কিনা, নকলের স্রোত থেকে আসল সোনার সন্তানদের খুঁজে নেবে কিনা, সেটি তাদের দলীয় ব্যাপার।

আমরা দীর্ঘদিন থেকে ডাকসু নির্বাচন চেয়ে অনেক লেখালেখি করেছি। অসংখ্য রাত টকশোয় কথা বলেছি। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ডাকসু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হচ্ছে। নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। সাধারণ ছাত্ররা হাই কোর্টে রিট করেছেন। সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মনসুর ও জিএস ডা. মুশতাক হোসেন আলাদা রিট করেছেন। উচ্চ আদালত নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন টালবাহানা করেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার উদার মনোভাব নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন করেছে। নব্বইয়ের পর বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত শাসনামল থেকে যখন যারা ক্ষমতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তাদের দলীয় জমিদারি ব্যবস্থার প্রবর্তন করে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাস ও হলছাড়া করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু সূর্যের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার তাপ না দিলে নিজেদের অস্তিত্বও বালির বাঁধের মতো ভেঙে যায়। ১০ বছরে ছাত্রদল একদিকে অছাত্র, বয়স্ক নেতৃত্ব রাখায়, অন্যদিকে ক্যাম্পাসছাড়া হওয়ায় ক্যাম্পাসে সংগঠন শক্তিশালী করা দূরে থাক, এতটাই দুর্বল হয়েছে যে, হলে হলে প্যানেল দিতে পারেনি। কিন্তু অন্যদিকে ছাত্রলীগের হলগুলো হয়ে উঠেছিল শক্তিশালী দুর্গ। ক্যাম্পাসে ছিল তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। সেই সুবাদে ভোটের লড়াইয়ে ছাত্রলীগ ছিল এগিয়ে। বাম গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল নির্বাচনকে মুখরিত করে তুললেও ছাত্রলীগের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্যানেল উঠে এসেছিল। কিন্তু সোমবারের ডাকসু ভোটের দিন যত অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, ডাকসুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কুয়েত মৈত্রী হলে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি বহু আশার ডাকসুর নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। ছাত্রলীগের প্যানেলে সিল মারা বস্তাবন্দী ব্যালট পেপার ছাত্রীরা তোপের মুখে উদ্ধার করেছে। তাদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কবি অধ্যাপক সামাদ প্রক্টরকে নিয়ে ছুটে গেছেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা যখন উদ্ধার করা ব্যালট পেপার তাদের গাড়ির ওপর ঢেকে দিচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, তারা যেন তাদের অভিভাবকের বুকে দায়িত্বের ভারী পাথর তুলে দিয়েছিল। সেই উচ্চশিক্ষিত দলকানা নীতিহীন ব্যর্থ প্রভোস্টকে অপসারণ করে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ করে পরে ভোট হয়েছে। সেই ভোটে ছাত্রলীগ পরাজিত হয়েছে। অব্যাহতি পাওয়া প্রভোস্ট ড. শবনম জাহান শিক্ষকসমাজের কপালে কলঙ্ক এঁকেছেন। ছাত্রছাত্রীদের আস্থা-বিশ্বাস হারিয়েছেন। উচ্চশিক্ষা আর রূপ থাকলেই যে নীতিমান সুন্দর মানবিক মানুষ হওয়া যায় না সেটি প্রমাণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হলগুলোতে ভোটদান ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী সব ছাত্র সংগঠনের নেতারা অনেক অভিযোগ তুলে অনিয়মের কথা বলেছেন। শামসুন্নাহার হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন। মেয়েরা যে বীরত্ব, প্রতিবাদ দেখিয়ে সুষ্ঠু ভোট আদায় করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছে তাতে এ কথা বলাই যায়, ছাত্রীরা ডাকসু নির্বাচন ঘিরে যা করতে পেরেছে অতি উৎসাহী দলকানা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের যে নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ তার বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী ছাত্রীরা তাদের আবাসিক হলে প্রতিরোধ প্রতিবাদের দুর্গ তুলে যেভাবে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে তাতে বলা যায়, ডাকসুতে ছাত্ররা নয়, ছাত্রীরাই জিতেছে। পাঁচটি ছাত্রী হলের চারটিতেই ছাত্রলীগকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্যানেল বিজয়ী হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনে দেউলিয়া ছাত্র রাজনীতি ছাত্রীদের বীরত্বের কাছে পরাজিত হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ছাত্রলীগ ছাড়া সব ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ শুনতে শুনতে বলেছেন, তিনি বিব্রত। তার কিছু করার নেই। কেবল প্রয়োজনীয় জায়গায় সব অভিযোগ তুলে ধরতে পারবেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান একদিকে বস্তাভর্তি ব্যালট বাক্স উদ্ধার ও প্রোভিসি মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করে কী সুন্দরভাবে বলেছেন, আমি খুব আনন্দ অনুভব করছি। উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করি। তদন্ত কমিটির ফলাফল কী আসে তা দেখার অপেক্ষায়। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, আইয়ুব-ইয়াহিয়ার আমলেও এমন ভোট হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ছাড়া সব প্যানেল বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি দেখার অপেক্ষায়। তবে ভিসির বক্তব্য শুধু হৃদয়ে আঘাতই করেনি, ঘোর বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। তেমনি তদন্তে অনিয়ম বেরিয়ে এলে বোঝা যাবে।

তারুণ্য একবার দ্রোহ করলে কী হয়, সেটি আমরা কোটা সংস্কার থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুলছাত্রদের অভূতপূর্ব আন্দোলনে দেখেছি। এবার দেখলাম ডাকসুতে তার পরিণতি।

এমনটি না হলে আসলে ফলাফল কী হতো? তবে শেষ পর্যন্ত ডাকসুর ফলাফলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী শোভনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদকও বিজয়ী হয়েছেন। কোনো প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের নেতা নন, কোনো জনপ্রিয় ছাত্রনেতা নন, তবু নুর আজ ডাকসু ভিপি। এটাই সত্য। আর এটা ডাকসুর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র নুর কোটা সংস্কার আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে নিজে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। আন্দোলনের সময় তার ওপর হামলা, গ্রেফতার, কারাবরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ মেনে নেয়নি। ডাকসুর ভোটযুদ্ধে ব্যালট বিপ্লবে ছাত্রীরাই বিশেষ করে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে তার বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল কুৎসার জবাব ব্যালটেই দিয়েছে। দেশের ছাত্র রাজনীতির দেউলিয়াত্বের পরাজয় ও ছাত্রীদের বীরত্বের বিজয় ঘটেছে ডাকসুতে। রোকেয়া হলসহ সবকটি ছাত্র হলে ছাত্রলীগ জিতেছে একচ্ছত্র। ডাকসুতে জিএস পদে গোলাম রাব্বানী ও এজিএস পদে সাদ্দাম হোসেনসহ দুটি বাদে সব কটিতে ছাত্রলীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের সামনে সাধারণ ছাত্ররাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বিজয়ী দুই পক্ষকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। ডাকসুতে গণতন্ত্রের বসন্তের সূর্য তবু ২৮ বছর পর উদিত হয়েছে। ক্যাম্পাসকে এখন পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমে সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতির চর্চা, মেধা, সৃজনশীলতার বিকাশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার দায় এখন ডাকসু ও হল সংসদের। খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোর চ্যালেঞ্জ। এখান থেকেই অতীতে জাতীয় নেতারা এসেছেন। এসেছেন বরেণ্য আমলা, ব্যবসায়ী, শিল্পী-সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক, লেখক-বুদ্ধিজীবী ও বিখ্যাত সব খেলোয়াড়। ডাকসুতে বন্ধ্যা গণতন্ত্রের যে দুয়ার খুলেছে তা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ুক। ভিপি নুরকেই প্রমাণ করতে হবে সামনে তিনি নেতা। তার বিরুদ্ধ সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার বহন করেন কিনা।

ক্ষমতার দম্ভ ও নিপীড়ন পরাজিত হয়েছে ব্যালটে। তাই সেদিনের প্রতিবাদী নির্যাতিত মাথা নত না করা নুর আজ ডাকসুর ভিপি। সকল প্রতিবাদ বিক্ষোভ শেষ হয়েছে। নুরকে বুকে টেনে ছাত্রলীগ সভাপতি ও পরাজিত ভিপি প্রার্থী শোভন যে সৌহার্দ্যরে নজির স্থাপন করেছেন তাতে বলা যায় তিনি নেতা। শোভন গণতন্ত্রের শোভা।

 

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর