বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মামলার জালে কৃষক

এ অনাচার বন্ধ হোক

হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ লোপাটের হোতাদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আদৌ কোনো মাথা ব্যথা আছে কিনা সন্দেহ। এ ব্যাপারে তারা মুখে কুলুপ এটে থাকলেও সরব কৃষকদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে। এ পর্যন্ত হাজার হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করার কৃতিত্বও দেখিয়েছে ব্যাংকগুলোর করিৎকর্মা কর্মকর্তারা। সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তারা যেন মামলা না করে অর্থ আদায়ে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তার পরও জনপ্রতি গড়ে ৩০ হাজার টাকা ঋণের জন্য সারা দেশের প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৫ কৃষকের নামে এখনো সার্টিফিকেট মামলা ঝুলছে। এদের মধ্যে আবার ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে ১১ হাজার ৭৭২ জন কৃষকের নামে, যারা অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা না করার নির্দেশনা প্রতিপালনের বদলে গত ডিসেম্বরেই নতুন করে মামলার জালে জড়ানো হয়েছে ৪০২ কৃষককে।

দি পাবলিক ডিমান্ড রিকোভারি অ্যাক্ট অনুসারে সরকারি ৬ ব্যাংক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের টাকা আদায়ের জন্য সার্টিফিকেট মামলা করতে পারে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের বিরুদ্ধে করা সার্টিফিকেট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৫টি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৬২টি। এক বছরের ব্যবধানে মামলা কমেছে মাত্র ৯ হাজার ১৭৭টি। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য জোগান দেয়। তাদের জন্য ফসল ফলায়। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা কিংবা অতি বৃষ্টিতে ফসলহানি হলে তাদের পক্ষে ব্যাংক ঋণ শোধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাংক থেকে গড়ে ১০ হাজার টাকার ঋণ পেতে উৎকোচ হিসেবে অন্তত ১০ শতাংশ যে কর্তাদের পকেটে রেখে আসতে হয় তা ওপেন সিক্রেট। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ লোপাটকারীদের সম্পর্কে কুম্ভকর্ণের নিদ্রায় থেকে যারা কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা ও কোমরে দড়ি পরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের সম্পর্কে সরকার কঠোর হবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর