বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে সংঘর্ষে শত শত মৃত্যুর পাশে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন। অধিকাংশেরই অবস্থা গুরুতর। জীবন বাঁচাতে অনেকের হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। চোখ হারিয়েছেন অনেকে। গুলির ক্ষতে পচন নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছেন। সরকার আহতদের চিকিৎসা-ব্যয় বহন করবে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে আন্দোলনে আহত চিকিৎসাধীনদের কাছ থেকে কোনো বিল না নিতে বলা হয়েছে। অথচ এই কঠিন দুঃসময়ে স্বাস্থ্য খাতে চলছে চরম অচলাবস্থা। দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতাই এজন্য দায়ী। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর যখন দেশ একটা সংকটময় অবস্থা পার করছে, চিকিৎসক নেতা আর কর্মকর্তারা তখনো দলাদলিতে ব্যস্ত। রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের বেশির ভাগই অনিয়মিত, কালেভদ্রে তাদের দেখা যাচ্ছে। তরুণ চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা অসংখ্য মুমূূর্ষু রোগীর সেবা দিতে হিমশিম। তাদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কঠিন ক্রান্তিকালে স্বাস্থ্য খাতের এমন নাজুক অবস্থা দুর্ভাগ্যজনক। অথচ বদলি পদায়নের তুঘলকি কারবারটা ঠিকই চলছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন কালো ছায়া ফেলেছিল স্বাস্থ্য খাতেও। স্বাস্থ্য প্রশাসনে দুর্নীতির অভিযোগ পুরনো। চিকিৎসকরা বিভক্ত ছিলেন দলীয় বিভাজনে। রোগীর সেবার চেয়ে দলবাজি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সরকার সমর্থকরা সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন; বঞ্চিত হয়েছেন বিরোধী পক্ষ। ফলে সরকার পতনের পর এক পক্ষ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন; অন্য পক্ষ মাঠ দখলের পাঁয়তারায়। সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থা চলছে স্বাস্থ্য খাতে। চিকিৎসাধীনরা প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য পাচ্ছেন না। তাদের নিয়ে বিপন্ন, বিব্রত, গলদঘর্ম স্বজনরা। স্বাস্থ্য খাতে এরকম বিশৃঙ্খল অবস্থা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ খাতে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার নয়, চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর মন-মানসিকতারও সংস্কার প্রয়োজন। আর চাই কঠোর জবাবদিহিতা। দলমতনির্বিশেষে চিকিৎসকদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে শতভাগ পেশাদারি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটাই তাদের এ মহান পেশার পবিত্র শপথ।