কোরআন ও হাদিস তথা ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক সাধারণ মানুষের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকেরও বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাটের যে কোনো প্রতিবন্ধকতা দূর করে পথিককে নির্বিঘ্নে নিরাপদে পথচলা নিশ্চিত করার প্রতি ইসলাম উদ্বুদ্ধ করে। যা প্রতিটি মানুষের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বও বটে। পথেঘাটে মানুষকে বাধা দেওয়া, কোনো কিছু ফেলে পথিককে চলার পথে বিঘ্নতা সৃষ্টি করা ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পথিককে চলার পথে কষ্ট দেওয়ার বিরুদ্ধে হাদিস শরিফে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এ নীতির আলোকে ইসলামের আরেকটি বিধান হলো- কোনো পথিকের হারানো অর্থসম্পদ কোথাও পাওয়া গেলে তা অতি যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে মালিককে খুঁজে বের করে তার আমানত তার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া। উপস্থিত সাক্ষীর মোকাবিলায় প্রকৃত মালিকের যথার্থ যাচাইবাছাই করে নিশ্চিত হয়ে নিঃস্বার্থভাবে তার হাতে সমর্পণ করা। সন্তোষজনক ও পর্যাপ্ত খোঁজাখুঁজির পর ব্যাপক ঘোষণা ও প্রচারের পর যদি প্রকৃত মালিককে না পাওয়া যায় এ ক্ষেত্রে যদি প্রাপক নিঃস্ব ও দরিদ্র মানুষ হয়, তাহলে সে নিজেই তা ভোগ করতে পারবে। অন্যথায় ফকির মিসকিনদের মধ্যে তা দান করে দিতে হবে এবং উভয় ক্ষেত্রেই এই সম্পদের প্রকৃত মালিকের পক্ষেই তা দান বলে গণ্য হবে এবং মালিকই এর সওয়াব প্রাপ্ত হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যদি কোনো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু তুলে নেয়, সে যেন এ বিষয়ে দুজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখে। সে যেন বিষয়টি কোনো অবস্থাতেই গোপন না রাখে এবং কোনো প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন না করে। এরপর যদি মালিক এসে যায়, তাহলে সে-ই সেটার অধিকারী। আর যদি মালিক না আসে তাহলে সেটা আল্লাহর সম্পদ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করবেন (ইবনে হিব্বান)। হজরত খালেদ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি প্রিয় নবীজিকে হারিয়ে যাওয়া জিনিস পাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, তখন তিনি বললেন, তুমি তার থলে এবং তার বাঁধন ভালো করে চিনে রাখবে, তারপর এক বছর পর্যন্ত তার ঘোষণা দেবে, এ সময়ের মধ্যে যদি এর মালিক আসে, তবে তাকে তা দিয়ে দেবে। অন্যথায় তা তোমার ইচ্ছাধীন। তারপর সে ব্যক্তি হারানো ছাগল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, তিনি বললেন তা তোমার জন্য অথবা তোমার অন্য কোনো ভাইয়ের জন্য অথবা নেকড়ের খাবারের জন্য, তারপর সে হারানো উট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, তিনি বললেন এ নিয়ে তোমার ভাবনা কী? তার সঙ্গে তো আছে পানির মশক এবং জুতার মতো পায়ের পাতা, মরুভূমিতে সে নিজেই পানি পান করবে এবং গাছের পাতা খেয়ে হাঁটতে থাকবে, যতক্ষণ না তার মালিক তাকে পেয়ে যায়। (মুসলিম শরিফ) অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো পথহারা প্রাণীকে আশ্রয় দেয়, সে যদি বিষয়টি গোপন রাখে ও প্রাণীটির মালিক বনে যায়, তাহলে সে নিজেই ভ্রষ্ট লোক বলে বিবেচিত হবে (মুসলিম)। অন্য হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো হারানো বস্তু প্রাপ্তি সম্পর্কে, তিনি বলেন, তা তুমি এক বছর পর্যন্ত প্রচার করবে, এর মধ্যে যদি এর মালিক কে জানা না যায়, তবে এর থলে ও বন্ধন চিনে রাখবে, তারপর তুমি তা খেতে পারবে, তারপর যদি তার মালিক তোমার কাছে আসে, তবে তা তাকে অবশ্যই দিয়ে দেবে (মুসলিম)। অতএব কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুটি যদি মূল্যের দিক থেকে ১০ দিরহামের কম হয় তাহলে কিছুদিন বিভিন্ন স্থানে এর ঘোষণা দেবে। আর যদি ১০ দিরহামের বেশি হয় তাহলে এক বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘোষণা ও প্রচার করবে। মালিককে খুঁজে না পাওয়া গেলে তা সদকা করে দেবে ওই মালিকের নামে। প্রাপ্ত বস্তুর উদ্ধারকারীর জন্য কখনো উচিত হবে না ওই বস্তু নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা। উদ্ধারকারী যদি আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো বস্তু বা প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ ব্যয় করে, তাহলে সে স্বেচ্ছা দানকারী বলে গণ্য হবে। কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের যদি কোনো বৃদ্ধি বা লাভ হয়, তাহলে তাও প্রকৃত মালিককে দিয়ে দিতে হবে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু, সম্পদ বা প্রাণীর পেছনে অর্থ ব্যয় করলে বিক্রি করার পর নিজ পাওনা বাদে অবশিষ্ট অর্থ প্রকৃত মালিককেই দিয়ে দিতে হবে (হেদায়া)। আল্লাহ আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা কোরআন হাদিস মোতাবেক আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা