বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর মধ্যে তিস্তা অন্যতম। এ নদীর ওপর নির্ভরশীল উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা পরিণত হয় ধুধু বালুচরে। আর বর্ষা মৌসুমে পানি ধারণক্ষমতা না থাকায় বন্যার কবলে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ। অভিন্ন নদীতে উজানের মতো ভাটির দেশের মানুষের অধিকার আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত। কিন্তু আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটি এ ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার ক্ষেত্রে বরাবরই কার্পণ্য দেখিয়েছে। বিগত সরকারের প্রথম দিকে ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তার পানির সমবণ্টনে দুই দেশ চুক্তিবদ্ধ হবে এমন প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির অজুহাতে সফরকালে চুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ভারত। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে পরবর্তী ১৩ বছরে এ বিষয়ে শুধু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিই রয়েছে, সমাধানের পথে হাঁটেনি ভারত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শুরু থেকেই অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সম্মানজনক সমাধানের জন্য সরব হয়েছে। সর্বশেষ বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন যাবৎ অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকায় কোনো দেশেরই লাভ হচ্ছে না। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, আলাপ-আলোচনা করেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর নির্দিষ্ট অধিকার সমুন্নত রাখতে চাওয়ার অধিকার থাকার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা আমাদের অধিকার চাই। তিস্তা নদী বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার অনুষঙ্গ। এ নদীর পানিতে দেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ উদ্যোগই দেখতে চান দেশবাসী। একই সঙ্গে গঙ্গাসহ অভিন্ন সব নদীর পানিবণ্টনেও উদ্যোগী হতে হবে।