কর্তৃত্ববাদের সিংহাসন ধসে পড়লেও পরিবহন চাঁদাবাজি বহাল তবিয়তে। তা বন্ধের কোনো পদক্ষেপই সফল হয়নি। কারণ ভূত তাড়াবার শর্ষেতেই ভূত। পুলিশই বরাবর শাদা পোশাকের চাঁদাবাজদের পেছনের পোশাকি শক্তি। এদেরও পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট নেতা-কর্মীরা। এই চক্রের পকেট ভরতে হয়েছে দেশের সড়কে প্রতিদিন চলা ৭০ হাজারের বেশি পণ্যবাহী যানকে। স্বাভাবিকভাবেই পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এই বাড়তি ব্যয় পুষিয়ে নিতে চাপানো হয়েছে পরিবহন করা পণ্যের ওপর। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক যে শস্য-সবজি-ফলমূল উৎপাদন করেন- সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তার ন্যায্যমূল্য পায় না। অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় ওঠে না। আবার সাত হাত ঘুরে দশ জায়গায় চাঁদাবাজির দাবি মিটিয়ে পণ্যটি যখন খুচরা বাজারে সাধারণ ক্রেতার সামনে উপস্থাপিত হয়- অযৌক্তিক অগ্নিমূল্যে ক্রেতার ক্রয়-সামর্থ্য পুড়ে যায়। যুগযুগ ধরে প্রতিকারহীনভাবে এমনটাই চলছে। গত ৫ আগস্ট দেড় দশকের স্বৈরাচার পতনের পর ছাত্র-জনতার ভয়ে কদিন পরিবহনসহ সব ক্ষেত্রের সিন্ডিকেটই ঘাপটি মেরে ছিল। বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছিল। মাসব্যাপী আন্দোলন সংগ্রাম সংঘর্ষের পর যেখানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিল সবাই, উল্টো ঘটনা ঘটেছিল। বিস্ময়করভাবে কাঁচাবাজারে অনেক পণ্যেরই দাম কমেছিল। ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি না থাকায় দাম কমেছে। কিন্তু এ ধারা এক মাসও টেকেনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সিন্ডিকেট হাতবদল হয়ে যায়। এরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকায় সেই বঞ্চনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাঁদাবাজিতে আরও মরিয়া। ফলে ফের বাড়ছে পণ্যমূল্য। কিছু পণ্যের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে বেড়েছে এর মধ্যে। এ তঞ্চকতা দ্রুত শক্তহাতে দমন করা দরকার। দস্যুতার সাইনবোর্ড বদলের জন্য জীবন দেয়নি হাজারো শহীদ। সমাজের সব ক্ষেত্রে দুষ্টের দমনে সিন্ডিকেট ভাঙুন। জনগণকে এদের পরোক্ষ রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি দেওয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নিন।