দুনিয়াতে ছাদ না থাকলে আমরা বাতি, পাখা ইত্যাদি লাগাতে পারি না। আল্লাহপাকও আসমানকে ছাদ বানিয়ে তাতে সূর্য, চন্দ্র, তারকা, গ্রহ-উপগ্রহ দিয়েছেন। তিনি মানুষের আরামের জন্য বরফকে ওপরে রেখেছেন। যখন প্রয়োজন হয় তখন তিনি বাতাসের মাধ্যমে সারা দুনিয়া শীতল করে দেন। এরপরও যদি শীতল না হয় তখন তিনি তা বাতাসের মাধ্যমে দুনিয়াতে ছেড়ে দেন। বরফগুলো বিশাল আকারের বিধায় তিনি বাতাসের সাহায্যে পাহাড়ে ছাড়েন। যদি তা টুকরো টুকরো করে ফেলতেন তাহলে দুনিয়ার মানুষের জন্য সমস্যার কারণ হতো।
মানুষের ছাদের মধ্যে খুঁটি দিতে হয় কিন্তু আল্লাহর ছাদের মধ্যে খুঁটি নেই। তিনি নিজেই বলেছেন, তোমরা যা দেখছো তা আমি খুঁটিবিহীন তৈরি করেছি। আসলেই কি আসমান খুঁটিবিহীন? এই প্রশ্নের উত্তরে মুফাসসিরগণ বলেন, আমরা তা জানি না। বস্তুত আসমানের খুঁটি আছে কি নেই সে ব্যাপারে চূড়ান্ত মত পেশ করা সম্ভব নয়। কারণ আমরা তা দেখি না। তবে দেখা না গেলে যে থাকতে পারবে না এটা জ্ঞানপ্রসূত কথা নয়। যেমন আত্মা আমরা দেখি না; তাহলে কি আমরা আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করব?
আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আসমান, জমিন ও খুঁটিবিহীন ছাদ নিয়ে যদি চিন্তা করতে না পারো তাহলে অপর একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করো। তা হলো- তিনি একমাত্র আল্লাহ যিনি তোমাদের অর্ধহাতের মধ্যে দুটি চোখ, ছিদ্রওয়ালা নাক, কান, বত্রিশ দাঁত সৃষ্টি করেছেন। এগুলো নিয়ে তুমি একটু চিন্তা করো যে, তিনি কত মহান।
আল্লাহপাক মানুষকে হাত দিয়েছেন তার দ্বারা সে ঠান্ডা, গরম বুঝতে পারে। চোখের দ্বারা ভালো-মন্দ দেখতে ও বুঝতে পারে। জিহ্বার দ্বারা মিষ্টি, ঝাল ইত্যাদি স্বাদ অনুভব করতে পারে। আর মস্তিষ্ক তো জ্ঞানের মহা ভান্ডার। কয়েক বছর আগে সংঘটিত বিষয় আমরা কীভাবে বলি? মালামাল সব গোডাউনে স্টক করা থাকে, সেখান থেকে বের করে পেশ করি। মানুষের সবকিছুর বুঝ ব্রেনে জমা আছে। সেখান থেকে প্রত্যেক অঙ্গে সাপ্লাই হয়। হাকিমুল ইসলাম কারি তৈয়্যব সাহেব (রহ.) একজন উঁচু দরজার বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। তিনি বলতেন, ভাই! দেমাগ হলো আলেমদের আবাসস্থল। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সেখান থেকে কর্মের ক্রিয়া সংগ্রহ করে। এই আলেমরা কোনো দিনও ঝগড়া করেন না। কান কখনো বলে না যে, আমি দেখার কাজ করব। পা কোনো দিনও বলে না যে, আমি ধরার কাজ করব, হাত কোনো দিন বলে না যে, আমি হাঁটার কাজ করব, চোখ কোনো দিনও বলে না যে, আমি চিবানোর কাজ করব, অর্থাৎ একজনের দায়িত্বে অপরজন হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু বাহ্যিক দুনিয়ার জ্ঞানী যারা তারা এই নীতি মেনে চলতে পারে না।
এক আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, তোমরা তোমাদের চেহারা নিয়ে চিন্তা করে দেখো যে, আমি তা কত নিপুণভাবে সৃষ্টি করেছি। এত কিছুর পরও তোমরা কেমন করে আমার কুদরতকে অস্বীকার করো? আমি তো তোমাদের পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টি হতে সবচেয়ে সুন্দর করে বানিয়েছি। আল্লাহপাক মানুষের চেহারাতে এমন সৌন্দর্য দিয়েছেন যা পৃথিবীর অন্য কোনো সৃষ্টির মধ্যে নেই। অপর এক জায়গায় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দর ও সুঠাম অবয়বে।
আল্লাহপাক এমন কুদরতওয়ালা যে, তাঁর সৃষ্টিতে কোনো খুঁত নেই। বর্তমানে পৃথিবীতে সাত শ কোটিরও অধিক মানুষ আছে, কিন্তু একজনের চেহারার সঙ্গে অপরজনের চেহারার মিল নেই। অর্ধহাত জায়গাতে তিনি এমন অমিল দিয়ে যেভাবে সৃষ্টি করলেন, এটা তাঁর কুদরত ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহপাক আমাদের বেশি বেশি তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তৌফিক দান করুন!
♦ লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ