রসুলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্রের গুণাবলি অনেক ব্যাপক এ যেন মহাসাগর। যার বিস্তারিত বর্ণনা করা কঠিন ব্যাপার। তাঁর চারিত্রিক অসাধারণ গুণাবলির সামান্য কিছু অংশ তুলে ধরা হলো :
পূর্ণতার শ্রেষ্ঠতম আদর্শ এই সুন্দর মানুষের পরিচয় এই যে, তিনি মানবতার সর্বোচ্চ চূড়ায় সমাসীন ছিলেন। তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল কোরআনেরই প্রতিফলন। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী (সুরা কালাম-২)। যুবাইর বিন নুফাইর (রা.) বলেন, আয়েশা (রা.) কে যখন রসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তখন তিনি বললেন, কোরআন করিমই তাঁর মহান চরিত্রের পরিচয় (আবু দাউদ, নাসাঈ আহমাদ)।
রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন, সবার চেয়ে বেশি ন্যায় পরায়ণ পাক চরিত্র, সত্যবাদী এবং বিশিষ্ট আমানতদার। নবুয়ত লাভের আগেই মক্কায় তাঁকে আল-আমিন উপাধি দেওয়া হয়েছিল। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে তাঁর নিকট বিচার ফয়সালার জন্য বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই হাজির হতো। রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বাধিক দানশীল ও সাহসী। জাবের (রা.) বর্ণিত তিনি বলেন, কখনই এমন হয়নি যে, কেউ তাঁর কাছে কিছু চেয়েছেন অথচ সে বা তারা খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন বা রসুল (সা.) অসম্মতি জ্ঞাপন করেছেন (সহিহ বুখারি)। আনাস (রা.) বর্ণিত; তিনি বলেন, একদা মদিনায় বিরাট গন্ডগোলের আওয়াজ শোনা যায়। তখন সবাই সেখানে ছুটে যায়, গিয়ে দেখেন রসুল (সা.) গলায় তরবারি ঝুলানো অবস্থায় সবার আগে সেখানে উপস্থিত হয়ে আছেন। কোলাহল থামানোর জন্য সবাইকে বলেছিলেন তোমরা ভয় পেও না, তোমরা ভয় পেও না (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
রসুল (সা.) স্বভাবগতভাবে গম্ভীর প্রকৃতির এবং চুপচাপ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন। তিনি ছিলেন সর্বাধিক সত্যবাদী। অর্থপূর্ণ বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন যদিও আরবের সব ভাষাই তিনি জানতেন। তাঁর প্রকাশভঙ্গি ছিল সুস্পষ্ট এবং অপ্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি যখন কথা বলতেন তখন মনে হতো যেন মুখ থেকে মুক্তা ঝরছে। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন সবাই মনোযোগ সহকারে তা শুনতেন। কারও ব্যাপারে কোনো অপ্রিয় কথা তাঁর কাছে পৌঁছলে সেই লোকের নাম উল্লেখ করে তাকে বিব্রত করতেন না বরং এভাবে বলতেন, কিছু লোক এভাবে বলাবলি করছে। স্বভাবগতভাবে তিনি কখনো অশ্লীল কথা বলতেন না এবং কাউকে অভিশাপ দিতেন না। রসুল (সা.) এমন কথাই শুধু মুখে আনতেন, যে কথায় সওয়াব লাভের আশা থাকত। রসুল (সা.) ছিলেন সর্বাধিক কোমল প্রাণের অধিকারী এবং নিরহংকারী। বিনয় ও নম্রতায় রসুল (সা.) ছিলেন অতুলনীয়। তিনি ছিলেন সর্বাধিক লাজুক প্রকৃতির।
কারও চেহারার প্রতি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন না। লজ্জাশীলতা ও আত্মসম্মান এত প্রবল ছিল যে, দৃষ্টি সর্বদা নিচু করে রাখতেন। আবু সঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত; নবী করিম (সা.) ছিলেন পর্দানশীল কুমারী মেয়ের চেয়ে অধিক লজ্জাশীল। কোনো কিছু তাঁর পছন্দ না হলে চেহারা দেখে বোঝা যেত (সহিহ বুখারি)। তিনি দরিদ্র ও অসহায়দের সেবা করতেন। সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে সাধারণ মানুষের মতোই বসতেন। আত্মীয়স্বজনদের প্রতি অতিমাত্রায় খেয়াল রাখতেন।
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, প্রিয় নবী কখনো নিজের জন্য কারও কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি; তবে আল্লাহর সম্মান ক্ষুণ্ণ করা হলে তিনি আল্লাহপাকের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন (সহিহ বুখারি)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে পাকের সুরা আহজাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম নমুনা/আদর্শ।” হে আল্লাহ আমাদের তুমি তোমার প্রিয় নবীর সুন্নাতের ওপর পুরোপুরি চলার এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের জান্নাতে প্রবেশের তৌফিক দান কর। আমিন।
♦ লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক