ইসলাম ধর্মের মৌলিক কাজ পাঁচটি। এই পাঁচটি বিষয়কে ইসলামের ভিত্তি বলা হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের ওপর; আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও তার রসুল এবং নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ আদায় করা ও রোজা পালন করা। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) একজন মুমিন মুসলমানের কাছে ইমানই সবচেয়ে বড় মহা মূল্যবান সম্পদ। ইমান লাভ করা ও মুসলমান হতে পারা একটি সৌভাগ্যের বিষয়, ইহকালে সফলতা, কবরে শান্তি, পরকালের মুক্তি এবং সবশেষে চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাতের নিশ্চয়তা। রসুলুুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর এর ওপর তার মৃত্যু হবে সে জান্নাতে যাবে। (সহিহ বুখারি)
ইমানের প্রথম অংশ হলো- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, অদ্বিতীয়। তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। ইমানের দ্বিতীয় অংশ মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল। তিনি সর্বশেষ নবী। মানবজাতির হেদায়েতের জন্য তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে। এ কথা স্বীকার করা ও মনেপ্রাণে তা বিশ্বাস করা। এই ইমানের ওপরেই মানুষের ইহ ও পরকালীন জীবনের ব্যর্থতা এবং সফলতা নির্ভর করে। ইমানবিহীন আমলের কোনো মূল্য নেই।
আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘শপথ সময়ের, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান গ্রহণ করে ও সৎকর্ম করে। পরস্পর সত্যের উপদেশ দেয় এবং ধৈর্যের উপদেশ দেয়। (সুরা আসর)। যারা ইমান গ্রহণের পাশাপাশি নেক আমল করে তাদের প্রতি অনেক সুসংবাদও রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্য আছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ১০৭-১০৮)। ইমানের মূল বিষয় হলো- আল্লাহর একত্ববাদের ওপর অবিচল থাকা, অটুট ও দৃঢ়বিশ্বাস রাখা এবং আল্লাহর প্রেরিত রসুল ও তাঁর প্রদত্ত দীনের আনুগত্য করা। ইমানের শিখর খুবই মজবুত ও সুদৃঢ়। ইমানের পরিধি অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। ইমানের শাখা-প্রশাখা অন্তহীন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমানের সত্তরোর্ধ শাখা-প্রশাখা রয়েছে। প্রধান হলো- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এর সবচেয়ে ছোট শাখা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ইমানের একটি বিশেষ শাখা।’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম) রসুলুল্লাহ (স.) ইমানের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা থেকে তিনটি বস্তু আমাদের জন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইমানের যাবতীয় শাখা-প্রশাখা কোরআন-হাদিসে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। যাদের সাধ্য আছে তারা কোরআন-হাদিস থেকে অথবা বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন তা নিজের জীবনে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করা। ইহ ও পরকালে ইমানের সুফল লাভের জন্য ইমানের প্রতিটি শাখা জীবনে বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা করতে হবে। সৎ আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া এবং সৎকর্মের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তৃপ্তি লাভ করা ও ইমানের স্বাদ অনুভবের জন্য ইমান সুদৃঢ় করার বিকল্প নেই। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে সে ইমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে। এক. আল্লাহ ও তাঁর রসুল তার কাছে সব কিছু অপেক্ষা অধিক প্রিয়। দুই. কাউকে যে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে ও আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করে। তিন. ইমান থেকে প্রত্যাবর্তন করা তার কাছে আগুনে নিক্ষেপিত হওয়ার মতো অনীহা হয়। (সহিহ বুখারি, মুসলিম)। একজন প্রকৃত ইমানদারের জীবনে ইমানের প্রভাব পড়বে। যার কাছে ইমান আছে তার কাজকর্ম, কথা, আমল ও আচার আচরণে ইমানের প্রভাব প্রতিফলিত হবে। ইমান হলো আন্তরিক বিশ্বাসের প্রতিফলন। আর যে ব্যক্তি কাজেকর্মে এই বিশ্বাসের প্রতিফলন বাস্তবায়ন করেন তিনি হলেন মুমিন-মুসলমান। একজন ইমানদার ও সত্যিকার মুসলমানের প্রভাব তার সহচর, প্রতিবেশী, সমাজ ও পরিবেশের ওপর বিস্তার করবে, ইমানদার কখনো ইসলাম বিবর্জিত কোনো আদর্শে প্রভাবিত হবে না। ইমানের ফলশ্রুতিতে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.) আনুগত্যের প্রতি তার স্পৃহা বেড়ে যাবে। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.) প্রতি ইমানদারদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। ইমানদার অপর মোমেনের প্রতি সহনশীল ও কল্যাণকামী হবে। তাদের মধ্যে পরস্পর আন্তরিকতার বন্ধন সৃষ্টি হবে। খোদাদ্রোহী একত্ববাদ পরিপন্থি কাজের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবে। ইমানের যাবতীয় শাখা-প্রশাখা নিজের জীবনে বাস্তবায়নের জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তারাই ইমানের প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করবে। অর্জন করবে ইহ ও পরকালে অফুরন্ত শান্তি। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইমান গ্রহণ কর।’ (সুরা আন নিসা-১৩৬) আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা