রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
ভিসির চোখে উচ্চশিক্ষা

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে দরকার সঠিক ও আধুনিক শিক্ষানীতি

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে দরকার সঠিক ও আধুনিক শিক্ষানীতি

 দেশের উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সঠিক উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে করণীয় কি এবং শিক্ষার্থীরা কীভাবে তাদের আধুনিক প্রতিযোগিতায় লড়ার লক্ষ্যে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারেন এসব নিয়ে কথা বলেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. এম রিজওয়ান খান

প্রশ্ন : বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন আছে। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?

উত্তর : উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কম-বেশি বিতর্ক আছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে সঠিক ও আধুনিক শিক্ষা নীতির অভাবও এর কারণ। উন্নত মানের উচ্চ শিক্ষার জন্য  মানসম্মত কারিকুলাম, পর্যাপ্ত গবেষণা ও গুণগত শিক্ষক নিয়োগদান নিশ্চিত করতে হবে।

প্রশ্ন : দেশে গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত না হওয়ার পেছনে প্রধান অন্তরায় কি?

উত্তর : উচ্চশিক্ষার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মানের নিম্নগতি। দেশে প্রতি বছরই এসএসসি ও এইচএসসিতে পাসের হার বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী মান বাড়ছে না বলে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় দেখা গেছে, জিপিএ-৫ পাওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব এবং অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে চেষ্টার অভাব রয়েছে যা উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের পথে অন্তরায় বলে মনে করি।

প্রশ্ন : সময়োপযোগী ও মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

উত্তর : এক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি এবং অন্যান্য ভৌত সুবিধাদি নিশ্চিত করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এসব নিশ্চিত করতে গিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের খরচের পরিমাণ বেশি পড়ে যায়। চূড়ান্তভাবে এর ধাক্কা গিয়ে লাগে শিক্ষার্থীদের ওপর। যারা দুর্বল পরিবারের শিক্ষার্থী তারা সবরকম সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তারা তুলনামূলক কম খরচ পড়ে এমন বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে বাধ্য হয়। এর ফলে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শুরু থেকেই তারা পিছিয়ে পড়ছে।

প্রশ্ন : হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া দেশের বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুণগত শিক্ষা প্রদান করতে পারছে না। বিশেষ করে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ থেকে উত্তরণে করণীয় কি?

উত্তর : বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা মন্ত্রণালয় থেকে অধিক নজরদারির প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এ লক্ষ্যে সরকার ইতিমধ্যেই Accreditation গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে এসবের পাশাপাশি শিক্ষকদের উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে উচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

 প্রশ্ন : দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। নিজস্ব ও সুপরিসর ক্যাম্পাসের অনুপস্থিতি কি মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায়?

উত্তর : উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান নিশ্চিত করতে হলে সুপরিসর নিজস্ব ক্যাম্পাস জরুরি। দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাবরই তাদের তাড়া দিচ্ছে। তবে নিজস্ব ক্যাম্পাসই শিক্ষার মানের একমাত্র মাপকাঠি নয়।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীরাও চাকরি লাভের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সবার করণীয় কি?

উত্তর : চাকরি লাভের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা লাভের পাশাপাশি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান কি চায়, অর্জিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশের সাবলীলতা ইত্যাদি জরুরি। এজন্য একদিকে  শিক্ষার মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, অন্যদিকে চাকরির বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে।

প্রশ্ন : চাকরিবাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিত?

উত্তর : বর্তমান বিশ্বের চাকরিবাজারে টিকে থাকতে হলে কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন যেমন : (১) ইংরেজি ভাষার ওপর দখল, (২) বিশ্লেষণমূলক দক্ষতা অর্জন, (৩) সততা ও নিষ্ঠা ও (৪) কম্পিউটারবিষয়ক ব্যবহারিক জ্ঞান।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হাল আমলের ছাত্ররাজনীতি কি গুণগত উচ্চশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায়?

উত্তর : দেশে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির যে ধারা চলছে তা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে আমি মনে করি। এ থেকে উত্তরণে যথাযথ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা উচিত। ছাত্ররাজনীতি হওয়া উচিত ছাত্র ও প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এ বিষয়টি বুঝতে হবে।

প্রশ্ন : গুণগত ও মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে আপনার প্রতিষ্ঠান কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

উত্তর : মানসম্মত উচ্চশিক্ষার জন্য যথোপযুক্ত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মননশীলতা ও নেতৃত্ব প্রদানের (লিডারশিপ) উত্কর্ষতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালু জরুরি। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রতিষ্ঠান ইউআইইউ শুরু থেকেই উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান করে আসছে। সেইসঙ্গে ডিরেক্টরেট অব স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেস্টারের মাধ্যমে শিক্ষা এবং পেশা সহায়ক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলশ্রুতিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা ও নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করছে যা তাদের চাকরিক্ষেত্রে সফলতা লাভে সহায়তা করছে।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি?

উত্তর : বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তাদের ইংরেজি দক্ষতা বাড়াতে হবে। ইংরেজি ভাষা জানা ছাড়া শুধু বিদেশ নয়, এখন দেশেও ভালো চাকরি লাভ সম্ভব না। সেইসঙ্গে তাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন নানা ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলা ও অন্যান্য লিডারশিপ বিষয়ক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, যোগ্যতা ও দক্ষতা ছাড়া আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকা কঠিন।

সর্বশেষ খবর