সুধীর বরণ মাঝি, সাবেক শিক্ষক
ড. মালিকা কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা
প্রস্তুতি চতুর্থ অধ্যায়
১। গর্ভধারণ কী? অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা কর।
ভূমিকা : শরীরের যেসব অঙ্গ সন্তান জন্মদানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সেসব অঙ্গের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়কে প্রজনন স্বাস্থ্য বলে। প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি অংশ হলো গর্ভধারণ।
গর্ভধারণ : গর্ভধারণ হচ্ছে একটি মেয়ের শরীরের বিশেষ পরিবর্তন। সন্তান গর্ভে এলেই শুধু শরীরের এই বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। যৌনমিলনের সময় পুরুষের শুক্রাণু যখন মেয়েদের ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয়, তখনই মেয়ের গর্ভে সন্তান আসে অর্থাৎ সে গর্ভধারণ করে। গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাসে মেয়েদের শরীরে কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা যায়। যেমন :
১। মাসিক বন্ধ হওয়া।
২। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৩। মাথা ঘোরা।
৪। বারবার প্রস্রাব হওয়া।
৫। স্তন ভারী ও বড় হওয়া।
অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের পরিণতি :
১। অপরিণত বয়সে মা হওয়ার মতো শারীরিক পূর্ণতা ও মানসিক পরিপক্বতা থাকে না।
২। কম বয়সে বিয়ে হলে যেসব মেয়েরা মা হয় তারা নানা রকম জটিলতায় ভোগে।
৩। কারণ এ বয়সে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন সম্পূর্ণ হয় না।
৪। অপরিণত বয়সে একটি মেয়ের সন্তানধারণ ও জন্মদান সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণা থাকে না।
৫। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করলে শুধু যে মেয়েটিই শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়; সদ্যোজাত শিশুটির জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৬। পরিবার ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যবনিকা : উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় উন্নতির স্বার্থে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ রোধ করতে হবে।
২। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ফলে সৃষ্ট সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা কর।
ভূমিকা : ১৮ বছরের আগে যদি কোনো মেয়ে গর্ভধারণ করে অর্থাৎ গর্ভবতী হয় তাকে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ বলে।
অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ফলে সৃষ্ট সমস্যা : অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ফলে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন :
১। স্বাস্থ্যগত সমস্যা : অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ফলে গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, শরীরে পানি আসা, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, অকাল গর্ভপাত প্রভৃতি ঘটে থাকে। মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। জন্ম থেকেই নানারকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।
২। শিক্ষাগত সমস্যা : বিদ্যালয়ে পড়াকালীন কোনো মেয়ে বিয়ের পর গর্ভধারণ করলে সে লজ্জায় আর বিদ্যালয়ে যায় না। সে মানসিক অশান্তিতে ভোগে এবং একপর্যায়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।
৩। পারিবারিক সমস্যা : অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের ফলে মেয়েরা সুস্থভাবে ঘরের কাজকর্ম করতে পারে না। ঘনঘন অসুস্থ হওয়ার কারণে পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি হয়।
৪। আর্থিক সমস্যা : গর্ভধারণের পুরো সময়টা ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলতে হয়। পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। ডাক্তার, ওষুধপত্র ও খাদ্যদ্রব্যের জন্য বেশ অর্থের প্রয়োজন হয়, যা একটি পরিবারকে আর্থিক সমস্যায় ফেলে দেয়।
৫। গর্ভপাতজনিত সমস্যা : একটি মেয়ের গর্ভে যখন সন্তান আসে, তখন প্রথম অবস্থায় জরায়ুর ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটে। ভ্রূণের বৃদ্ধি অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে যদি জরায়ু থেকে ভ্রূণ বের হয়ে যায়, তখন গর্ভপাত ঘটে। প্রসূতির প্রবল জ্বর , খিঁচুনি, রক্তক্ষরণ প্রভৃতি কারণে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
বানিকা : পরিশেষে বলতে পারি অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ও গর্ভপাত রোধ করতে পারলে এসব অকাল মৃত্যু থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
৩। প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ধারণা/তোমার ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর। অথবা সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জন আবশ্যক- বর্ণানা কর।
ভূমিকা : বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার কারণে তারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক জটিলতার সম্মুখীন হয়। ছেলে- মেয়েদের নিজেদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যের সুরক্ষা অন্যতম প্রধান শর্ত। তাছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকেরই প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। প্রজনন স্বাস্থ্য শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই।
প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ধারণা : একটি শিশু যখন পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, তখন থেকে সে ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে ওঠে এবং বয়সের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে। শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পণকালে তার শারীরিক ও মানসিক নানা রকম পরিবর্তন ঘটে। এ সময়টা হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকাল। এরপর তার যৌবনে অভিষিক্ত হওয়ার সময়। একটি ছেলে বা মেয়ের যৌবনকালে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম বিকাশ সাধন হয়। শরীরের যে সব অঙ্গ সন্তান জন্মদানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সেগুলো সুস্থভাবে গঠিত ও বিকশিত হয়। প্রজনন হচ্ছে সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়া।
প্রয়োজনীয়তা : আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিরাপদ জন্ম ও সুস্বাস্থ্য এবং বর্তমান প্রজন্মের সার্বিক সুস্বাস্থ্য প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। প্রজনন স্বাস্থ্য হচ্ছে মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি বিশেষ অংশ। অতএব, প্রজনন স্বাস্থ্য প্রজননতন্ত্রের কাজ ও প্রজনন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ বা অসুস্থতার অনুপস্থিতিকে বুঝায় না। এটা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণকর এক সুস্থ অবস্থার মধ্যদিয়ে প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পাদনের একটি অবস্থা। তাই নিরাপদ ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেকেরই প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকা জরুরি।