শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
শিক্ষকের কথা

শিক্ষকের যোগ্যতার প্রশ্নটি শিক্ষার মানোন্নয়ন না হওয়ার জন্য দায়ী

শিক্ষকের যোগ্যতার প্রশ্নটি শিক্ষার মানোন্নয়ন না হওয়ার জন্য দায়ী

যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত নওগাঁ জেলা শহর। ১৮৭৭ সালে নওগাঁ তৎকালীন মহকুমা গঠিত হওয়ার পর নওগাঁ শহরের উত্পত্তি। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর নওগাঁ জেলার একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নওগাঁ সরকারি কলেজ’। প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। কলেজের আয়তন ১১ একর। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর এস এম জিল্লুর রহমান। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট  বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি  কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নওগাঁ প্রতিনিধি—  বাবুল আখতার রানা

 

প্রশ্ন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো দেশের সব কলেজগুলোর র্যাংকিংস প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অধ্যক্ষ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশে স্নাতক (পাস) সম্মান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আনুমানিক ২,১২৫টি কলেজ রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো কলেজ র্যাংকিংস করা হয়েছে। বিষয়টিকে আমি শতভাগ অভিনন্দন জানাই।

প্রশ্ন : কলেজ র্যাংকিংয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে আপনার প্রতিষ্ঠান সেরা দশটির একটি। এ সফলতার পেছনে কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন?

অধ্যক্ষ : অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষকের সংখ্যা, শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীর সংখ্যা এ রকম প্রায় ৩১টি সূচকের ভিত্তিতে র্যাংকিংস করা হয়েছে। সবগুলো সূচকেই আমরা ভালো স্কোর পেয়েছি।

প্রশ্ন : শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা একটি আপেক্ষিক বিষয়। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত যেমন- মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতি, পড়ার টেবিল বা লাইব্রেরিতে সময় দেওয়াসহ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মনমানসিকতা ফ্রেশ করা ইত্যাদি বিষয় চর্চা করলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন সম্ভব।

প্রশ্ন : দেশের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। মান বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সবার করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : আসলে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে জনমনে যে ধারণার জন্ম হচ্ছে তার যথেষ্ট সত্যতা বা বাস্তবতা রয়েছে। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইদানীং প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরে পাসের শতকরা হার বাড়ানোর একটি প্রবণতা সংশ্লিষ্ট মহলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। শতভাগ পাস করতে হবে, কিংবা কাউকে ফেল করা যাবে না কিংবা খাতায় যে যা লিখুক কাছাকাছি উত্তর হলে পুরো নম্বর দিতে হবে এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রশ্ন : শিক্ষার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা কী?

অধ্যক্ষ : শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিনের পাঠ্য বিষয় ক্লাসে আদায় করে নেওয়া, শিক্ষার্থীরা পাঠ্যগ্রহণে মনোযোগী কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া, অপেক্ষাকৃত কম মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীরা কতটা সময় শিক্ষার পিছনে ব্যয় করে তা পর্যবেক্ষণ করার ভূমিকা শিক্ষকরাই গ্রহণ করতে পারেন।

প্রশ্ন : শিক্ষকদের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

অধ্যক্ষ : শিক্ষকের মান বা যোগ্যতার প্রশ্নটি শিক্ষার মান উন্নয়ন না হওয়ার জন্য অনেকখানি দায়ী। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া ভিন্ন হওয়ার কারণে এ সমস্যা বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারি পর্যায়ে শিক্ষক নির্বাচন পদ্ধতি সন্তোষজনক হলেও বেসরকারি পর্যায়ে তা আমোদপ্রদ নয়। প্রতিষ্ঠানে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে স্থানীয় বা জাতীয় প্রভাবে যোগ্য প্রার্থীর জায়গায় অপেক্ষাকৃত কম মেধার শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমপর্যায়ভুক্ত হলে এ অবস্থার উত্তরণ সম্ভব। 

প্রশ্ন : মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন সমাজের সর্বস্তরে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?

অধ্যক্ষ : মূল্যবোধের বিষয়টি নৈতিকতা/ধর্মীয় অনুভূতি বা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা আমাদের সন্তানদের দুনিয়াবী/বৈষয়িক উন্নয়নের জন্য সন্তানদের প্রতি যতটা যত্নবান থাকি, নৈতিকতার উন্নতি বা মূল্যবোধের বিষয়ে ততটা যত্নবান থাকি না। কাজেই সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে চাইলে নৈতিক চর্চা বা ধর্মীয় শিক্ষাসহ সৎ সামাজিক গুণাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করাতে হবে।

প্রশ্ন : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী?

অধ্যক্ষ : সংস্কৃতিতে একটি প্রবাদ আছে ‘ছাত্রনং অধ্যনং তপঃ’। এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের চরম প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় যে জিতবে, বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের ভাষায় সেই সমাজে জায়গা করে নিবে। তাই শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান নয়, এর বাইরে গিয়ে যারা সর্ববিদ্যায় বিশারদ হতে পারবে  তারাই জীবনে সাফল্য লাভ করবে।

প্রশ্ন : সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার মান উন্নয়নে  কীভাবে ভূমিকা রাখে?

অধ্যক্ষ : সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্জিত কালের বিকাশ নৈতিক ও ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা তথা সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের একত্রে মেশার সুযোগের ফলে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে এতে সত্গুণের দ্বারা অন্যজন প্রভাবিত হতে পারে আবার কারও বদগুণ বা খারাপ অভ্যাস থাকলে সেগুলো বাদ দিয়ে সুন্দর জীবন গঠনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

সর্বশেষ খবর