রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
শিক্ষকের কথা

মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে

মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে দেশের ৬৮৫টি কলেজের একটি র্যাংকিংস প্রকাশ করেছে। এ র্যাংকিংয়ে রংপুর বিভাগের সেরা দশটি কলেজের একটি হয়েছে ‘দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজ।’ প্রতিষ্ঠানটির এই সফলতার রহস্য, দেশের শিক্ষার সামগ্রিক মান, শিক্ষকদের মান উন্নয়নে করণীয় কী, সহ-শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিক ও  মানবিক গুণাবলির বিকাশে কীভাবে ভূমিকা রাখে এসব নিয়েই কথা বলেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ প্রফেসর আনজুমান আখতার। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের দিনাজপুর প্রতিনিধি —রিয়াজুল ইসলাম

 

প্রশ্ন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রথমবারের মতো দেশের সব কলেজের র্যাংকিংস প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অধ্যক্ষ : এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ যা কলেজগুলোর মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।

প্রশ্ন : কলেজ র্যাংকিংয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে আপনার প্রতিষ্ঠান সেরা ১০টির একটি। এই সফলতার পেছনে কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন?

অধ্যক্ষ : নিয়মানুবর্তিতা, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন নানা ধরনের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে পদক্ষেপ গ্রহণ, সার্বিক তদারকি ইত্যাদি বিষয়গুলো এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন : বিগত বছরগুলোয় বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে আপনার প্রতিষ্ঠানের সফলতার কারণ কী?

অধ্যক্ষ : এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে যেমন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ, সৃজনশীল প্রশ্ন-কাঠামো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিতকরণ, ক্লাস টেস্ট, প্রি-টেস্ট গ্রহণ ইত্যাদি।

প্রশ্ন : শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : নিয়মানুবর্তিতা হচ্ছে প্রথম শর্ত যা ছাত্রী-শিক্ষক-কর্মচারী সবাইকে বাধ্যতামূলক মেনে চলতে হবে। পর্যাপ্ত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের প্রেরণা দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন নিয়মিত উপস্থিতির জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ, ফলাফলের জন্য পুরস্কার ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন : দেশের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। মান বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সবার করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে না। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কোচিং বন্ধ করতে হবে। বাস্তবভিত্তিক, বিজ্ঞানসম্মত ও ধর্ম-সমাজ-মূল্যবোধ-ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রশ্ন : শিক্ষার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকরা কি ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যিক চিন্তা বাদ দিতে হবে। নিয়মিত নিজে ক্লাসে উপস্থিত থকতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থী ও সমাজবান্ধব সিলেবাস প্রণয়নে কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিতে হবে। ক্লাস টেস্ট নিয়মিত নিতে হবে। ভুল ও অসঙ্গতিগুলো শিক্ষার্থীদের ধরিয়ে দিতে হবে। নৈতিকভাবে দৃঢ় হতে হবে। দায়িত্বশীল মনোভাব পোষণ করতে হবে।

প্রশ্ন : শিক্ষকদের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

অধ্যক্ষ : কার্যকর প্রশিক্ষণ, মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর বিষয় উপস্থাপনের জন্য প্রতিটি ক্লাসে যাতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে করা যায় তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক সৃজনশীল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

প্রশ্ন : মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন সমাজের সবস্তরে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন? আপনার প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

অধ্যক্ষ : শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আলোচনা, সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশীয় সংস্কৃতি, ধর্মীয় চেতনা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সমাজকে অবহিতকরণের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা দরকার। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে এক ধরনের সচেতনতা বাড়বে।

প্রশ্ন : সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশের ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখে?

অধ্যক্ষ : সহশিক্ষা কার্যক্রম যেহেতু সিলেবাসভিত্তিক কার্যক্রম নয়, তাই সহজেই এটি সবাইকে আকৃষ্ট ও আগ্রহী করে। সুতরাং সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা সহজ। মুক্ত আলোচনা, বিতর্ক সেমিনার, গান-কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে স্বদেশ প্রেম, নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা প্রদান করা যায়।

প্রশ্ন : স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী?

অধ্যক্ষ : শিক্ষার্থীদের শুধু সনদপত্র ও ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়াশোনা করলে চলবে না। বরং দেশ ও জাতিকে সেবাদানের জন্য জ্ঞানবান ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার লক্ষ্যেই তাদের পড়তে হবে, জানতে হবে এবং শিখতে হবে। তাহলেই জীবনে সফল হওয়ার পাশাপাশি তা দেশ, জাতি ও নিজের জন্য কল্যাণকর হবে। পড়াশোনার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নানা বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর