রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
শিক্ষকের কথা

মূল্যবোধের শিক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা হয়ে উঠে না

মূল্যবোধের শিক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা হয়ে উঠে না

বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজটি ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্যার আযিযুল হকের নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে। স্যার আযিযুল হক অবিভক্ত বঙ্গে একজন বিশিষ্ট শিক্ষা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনিসহ তৎকালীন সময়ের বেশকিছু শিক্ষানুরাগীর কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজারেরও বেশি। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক র্যাংকিংয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা কলেজগুলোর একটি হিসেবে উঠে এসেছে। কলেজের এই সফলতার গল্প, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে করণীয় কী, সহ-শিক্ষাকার্যক্রম শিক্ষার্থীদের  মানবিক গুণাবলির বিকাশে কীভাবে ভূমিকা রাখে এসব নিয়েই কথা বলেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ সামস-উল আলম জয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া আবদুর রহমান টুলু

 

 

প্রশ্ন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রথমবারের মতো দেশের সব কলেজের র্যাংকিং প্রকাশ করেছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অধ্যক্ষ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। কলেজগুলোর র্যাংকিং করার মাধ্যমে স্ব স্ব কলেজ তার একাডেমিক অবস্থান জানতে পেরেছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের মাধ্যমে কলেজগুলো নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে। এর ফলে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

প্রশ্ন : কলেজ র্যাংকিংয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে আপনার প্রতিষ্ঠান সেরা দশটির একটি। আপনার প্রতিষ্ঠানের এই সফলতার পেছনে কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন?

অধ্যক্ষ : কলেজ র‌্যাংকিংয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি আযিযুল হক কলেজের অবস্থান সন্তোষজনক। তবে আরও ভালো করার জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা এবং একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল থাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি তার সম্মানজনক অবস্থান ধরে রেখেছে। তাছাড়া রাজনৈতিক কলহমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি বলেই এই সাফল্য বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন : বিগত বছরগুলোয় বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে আপনার প্রতিষ্ঠানের সফলতার কারণ কী?

অধ্যক্ষ : সব সময়ই সরকারি আযিযুল হক কলেজ বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠানের একটি। এই কলেজে পড়ালেখার মানের ব্যাপারে কোনো আপস করা হয় না। যথানিয়মে ক্লাস শ্রেণি পরীক্ষা, ছাত্রদের পারফর্মেন্স বিষয়ক অভিভাবক সমাবেশ এবং নিবিড় মনিটরিং এই সফল ফলাফলের জন্য কাজ করেছে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন : শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : সরকারি আযিযুল হক কলেজে শিক্ষার গুণগত মানের ওপর নিরঙ্কুশ প্রাধান্য দেওয়া হয়। এটিকে আরও এগিয়ে নিতে তথ্য ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি আযিযুল হক কলেজ ইতিমধ্যে পাঠদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। আমি মনে করি এই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে এই অনুষদগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রশ্ন : দেশের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। মান বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সবার করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : গুণগত শিক্ষা— এই প্রসঙ্গটির ব্যাখ্যা ব্যাপক। গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আগে প্রয়োজন গুণগত মানের শিক্ষক। নানা কারণে সব প্রতিষ্ঠানে সমানসংখ্যক মানসম্মত শিক্ষক নেই। দায়িত্বশীল ও গুণগত শিক্ষকই পারে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে। এ বিষয়ে আমাদের কাজ করা উচিত।

প্রশ্ন : শিক্ষার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকরা কি ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : কেবল মানসম্মত শিক্ষকই পারে শিক্ষার মান বাড়াতে। মানসম্মত ও গুণগত মানের শিক্ষা প্রদানের জন্য পদ্ধতিগত ধাপ অনুসরণের মাধ্যমে প্রশাসনের দক্ষ নজরদারি এবং ডিজিটাল উপাদান ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করলে শিক্ষার মান বাড়ানো যাবে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন : শিক্ষকদের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

অধ্যক্ষ : সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ হয় বিসিএসের মাধ্যমে। তাই সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মান নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন উত্থাপিত হতে দেখা যায়। আমি মনে করি শিক্ষক নিয়োগের জায়গায় স্বচ্ছতা থাকলে শিক্ষকের মান নিয়ে বর্তমানের এই প্রশ্নটি থাকবে না। এ-বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রায়োগিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। 

প্রশ্ন : মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন সমাজের সর্বস্তরে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন? আপনার প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

অধ্যক্ষ : সরকারি আযিযুল হক কলেজের শ্রেণিকক্ষগুলোতে ক্লাসিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির বিষয়েও উদ্বুদ্ধ করা হয়। মূল্যবোধের শিক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা হয়ে উঠে না। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকারি আযিযুল হক কলেজ মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষায় অগ্রসর হতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা করে থাকে।

প্রশ্ন : সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশের ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখে?

অধ্যক্ষ : সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। সুস্থ মানসিক বিকাশই মানবিক মূল্যবোধের জায়গাগুলোকে প্রসারিত করে। শিক্ষাকে বহুমাত্রিকভাবে শিক্ষার্থীর জীবনে ফলপ্রসূ করতে সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিকল্প নেই। মেধা-মননের পরিশীলনে সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব ও সর্বোপরি আত্মিক উন্নতির জায়গাকে বিস্তৃত করে।

প্রশ্ন : আপনার শিক্ষাজীবনের কোনো মধুর স্মৃতি থাকলে বলুন।

অধ্যক্ষ :     মুধুর স্মৃতি অনেক। শিক্ষার্থীরাই আমার বড় স্মৃতি। সামনে আরও স্মৃতি জমা হবে। আমার একটি উপদেশ শিক্ষার্থীদের প্রতি তা হলো বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত হতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধকে শাণিত করার জন্য ইতিবাচক চিন্তার জায়গাগুলো প্রসারিত করতে হবে। কেবল শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বমাত্রিক হওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর