রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
ভিসির কথা

ছাত্রজীবনকে শুধু শিক্ষাগ্রহণে নিয়োজিত কর

ছাত্রজীবনকে শুধু শিক্ষাগ্রহণে নিয়োজিত কর

দেশের অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উচ্চশিক্ষা দানের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি [বাউয়েট], কাদিরাবাদ, নাটোর। প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএইচএম শহীদউল্লাহ, পিএসসি (অব.)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে কী কী প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে, পড়াশোনার খরচ কেমন, দেশের উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নয়নে করণীয় কী এসব নিয়েই কথা বলেছেন তিনি।

 

প্রশ্ন : বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ানিং অ্যান্ড টেকনোলজি [BAUET] সৃষ্টির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু বলুন।

উপাচার্য : তুলনামূলকভাবে অনগ্রসর এলাকায় সহনীয় খরচে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কোর্স চালু করা, যাতে এসব অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা মানসম্পন্ন জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে বাউয়েট স্থাপন করা হয়েছে।

প্রশ্ন : বাউয়েটকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাইওনিয়ার টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বা বিশ্ববিদ্যালয় বলার কারণ কী?

উপাচার্য : সেনাবাহিনীর তিনটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় একই সঙ্গে চালু করা হয়েছে। বাউয়েট ছাড়াও কুমিল্লা ও সৈয়দপুর সেনানিবাসে আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে বাউয়েটকে আমরা পাইওনিয়ার মনে করছি এ কারণে যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিংটি কাদিরাবাদ সেনানিবাসে অবস্থিত। এটা সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারদের একটি মিলন কেন্দ্র। এটাকে উপলক্ষ বা কেন্দ্র করেই বাউয়েট এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাছাড়া বাউয়েটের উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রিধারী। এসব কারণে এটাকে পাইওনিয়ার মনে করা হয়। তাছাড়া ইউজিসির চাহিদা অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন : আপনার প্রতিষ্ঠানে সব বিভাগে পাঠদানের মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজি। ব্যাপারটিকে শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিচ্ছে?

উপাচার্য : যদিও ব্যাপারটা ছাত্রদের পক্ষে কিছুটা কঠিন তথাপি তারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতেও পারদর্শী হয়ে উঠবে যা তাদের জন্য একটা অতিরিক্ত প্রাপ্তি। তারা এটাকে ভালোভাবেই নিচ্ছে।

প্রশ্ন : শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে আপনার প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভূমিকা রাখছে?

উপাচার্য : শিক্ষার মান সমুন্নত রাখার জন্য আমরা শুধু সিলেবাসভিত্তিক শিক্ষাই দান করছি না, সেই সঙ্গে বাস্তব ক্ষেত্রে যেন সে জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর এখানে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। তত্ত্বীয় শিক্ষাদানের জন্য যেমন অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত বিশেষজ্ঞ শিক্ষক রয়েছেন, তেমনি ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশের নাম করা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমমানের ল্যাবরেটরি স্থাপন করে সর্বাধুনিক পদ্ধতির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোর্স কারিকুলাম পরিপূর্ণভাবে বাউয়েটে চালু করা হয়েছে।

প্রশ্ন : বাউয়েটে বর্তমানে কী কী প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে? পড়াশোনার খরচ কেমন?

উপাচার্য : বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে CSE, EEE, CE, ICE, BBA এবং English এ প্রোগ্রামগুলো পরিচালিত হচ্ছে। বছরে দুইটি সেমিস্টারের মাধ্যমে (সামার এবং ফল) এখানে শিক্ষাদান চলে। শিক্ষার মান অনুযায়ী এখানে পড়াশোনার খরচ বেশি নয়। ধার্যকৃত খরচের মধ্যে শিক্ষার্থীর সব একাডেমিক খরচ অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন : বাউয়েটে কী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ছেলেমেয়েদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়? দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে কি?

উপাচার্য : সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো অগ্রাধিকার নেই। তবে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়েভার এবং মেধাবীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রশ্ন : বাউয়েটে বর্তমানে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে?

উপাচার্য : তিন সেমিস্টারে বর্তমানে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এ সংখ্যা ধাপে ধাপে সর্বোচ্চ ২,৫০০ এ উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে।  শিক্ষার্থীরা এখান থেকে উন্নত কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

প্রশ্ন : দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন আছে। এ থেকে উত্তরণে করণীয় কি বলে আপনি মনে করেন?

উপাচার্য : শিক্ষার মান নিয়ে বিতর্ক আছে, এটা অনস্বীকার্য। শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রকৃত জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষাদান এবং গ্রহণ করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কিছুটা সম্ভব। বাউয়েটের শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাত ১ : ১৫। নিজস্ব শিক্ষক এবং রুয়েট/ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার মানের অবনতির সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণের প্রতি একাগ্রতা এবং সাধনার অভাব আছে যা কেবল অধ্যবসায় এবং নিরলস অধ্যয়নের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : আপনার শিক্ষা বা পেশাগত জীবনের কোনো মধুর স্মৃতি আমাদের বলুন।

উপাচার্য : বুয়েটে আমি বেশ সতর্কতার সঙ্গে এবং গভীরভাবে পড়াশোনা করেছি। ওই সময়ের স্মৃতিগুলোই আমার মধুর বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া দেশ-বিদেশে নতুন নতুন বিষয়ে মাস্টার্স করেছি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল জীবনে এত শিক্ষার কি প্রয়োগ হবে? তবে বাস্তবতা হচ্ছে যে, প্রতিটি বিষয়ে বিশেষায়িত শিক্ষা আমার বাস্তব জীবনে কাজে লেগেছে এবং এটা করতে পেরে আমার তৃপ্তি এসেছে। পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। কাজেই এ ব্যাপারে সবাইকে যত্নবান হতে হবে।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?

উপাচার্য : ছাত্র জীবনকে শুধু শিক্ষা গ্রহণে নিয়োজিত করা আবশ্যক। জীবনে ভোগ-বিলাসের অনেক সুযোগ আসবে, কাজেই ছাত্রাবস্থায় এ থেকে বিরত থাকতে হবে। আজকের তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়ায় জ্ঞান অর্জন অত্যন্ত সহজ হয়েছে। এর পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করে নিজের এবং দেশের অগ্রযাত্রায় অবদান রাখা উচিত। তোমাদের মনে রাখতে হবে নিজের দেশকে নিজেদেরই উন্নত করতে হবে। অন্য কারও ভরসায় বসে থাকলে চলবে না। কোনো কিছু প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করলে চলবে না। নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা করতে হবে, যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম উপকৃত হয়।

সর্বশেষ খবর