ফারুক আহম্মদ, সহকারী শিক্ষক
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা।
বইপড়া
—প্রমথ চৌধুরী
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর :
১। বিশিষ্ট শিল্পপতি রায়হান সাহেব ঢাকায় বাস করলেও গ্রামের মানুষের প্রতি তার সহানুভূতি ছিল অনেক। তাই তিনি গ্রামের মানুষকে আধুনিক ও সচেতন করে তোলার জন্য গ্রামে যান। গ্রামের প্রতি রবিচন্দ্র শাহ্ এর কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। রায়হান আলী একটি বিশাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করলেন এবং বিভিন্ন ধরনের বই কিনে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। ফলে গ্রামের মানুষেরা বই পড়া তথা সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী হয়ে উঠলেন।
প্রশ্ন :
ক. প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম কী?
খ. বিদ্যালয়ের কাঠামোগত জ্ঞান বলতে কী বুঝায়?
গ.উদ্দীপকে ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের কোন দিকটি নির্দেশ করে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমাজের মানুষকে আধুনিক ও সচেতন করে তোলার জন্য লাইব্রেরির গুরুত্ব অনেক- উদ্দীপক ও ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম হলো বীরবল।
খ. বিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী একঘেয়েমিভাবে যে জ্ঞানচর্চা করানো হয় সেটিকেই কাঠামোগত জ্ঞান বলা হয়।
আমাদের দেশে যে শিক্ষাব্যবস্থা তা একঘেয়েমির জন্ম দেয়। কারণ তাতে কোনো বিনোদনের উপকরণ নেই। তাছাড়া এই শিক্ষা অপরিহার্য হিসেবে ধরা হয়, যা না পড়লে পাস করা যাবে না। ফলে বাধ্য হয়ে সবাইকে তা পড়তে হয়। আর বিদ্যালয়ের এই প্রথাগত বই পড়াকে কাঠামোগত জ্ঞান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের লাইব্রেরির গুরুত্বের দিকটি নির্দেশ করে।
উদ্দীপকের প্রতি রবীচন্দ্র শাহ্ লাইব্রেরির যে গুরুত্বের কথা বলেছেন ‘বইপড়া’ প্রবন্ধেও তা প্রতিফলিত হয়েছে। কেননা লাইব্রেরি যত প্রতিষ্ঠা করা হবে সমাজের মানুষ তত সচেতন হয়ে উঠবে। কারণ লাইব্রেরিতে সব ধরনের বই থাকে। তাই লেখক বলেছেন, লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চেয়ে কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চেয়ে একটু বেশি।
সমাজের মানুষকে আধুনিকমনা ও সংস্কারমুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলেই সমাজের পরিবর্তন সম্ভব। আর এর জন্য প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষা। আর শিক্ষার জন্য প্রয়োজন বইপড়া। আর বই পড়ার জন্য সবচেয়ে উত্কৃষ্ট জায়গা হলো লাইব্রেরি। কেননা লাইব্রেরিতে সব ধরনের বই থাকে এবং ইচ্ছা অনুযায়ী যে বই দরকার সে বই পড়া যায়। তাই সমাজে সাহিত্যচর্চার জন্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যা উদ্দীপক ও ‘বইপড়া’ প্রবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘বইপড়া’ প্রবন্ধের লাইব্রেরির গুরুত্বের দিকটি নির্দেশ করে।
ঘ. সমাজের মানুষকে আধুনিক ও সচেতন করে তোলার জন্য লাইব্রেরির গুরুত্ব অনেক- মন্তব্যটি যথার্থ।
সমাজের মানুষের মানসিক পরিবর্তনের জন্য লাইব্রেরির গুরুত্ব অনেক। কেননা লাইব্রেরি ছাড়া অসভ্য জাতিকে কখনো সভ্য করা যায় না। ধর্মচর্চার জন্য যেমন প্রয়োজন মসজিদ-মাদ্রাসা, চিকিৎসার জন্য যেমন প্রয়োজন হাসপাতাল, ঠিক তেমনিভাবে মনের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সাহিত্যচর্চা। আর সাহিত্যচর্চার জন্য প্রয়োজন লাইব্রেরির।
আমাদের দেশে বিদ্যালয়ে প্রথাগত জ্ঞান অর্জনের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। ফলে এদেশের মানুষ শিক্ষা লাভ করেও সুশিক্ষিত হতে পারে না। কারণ তারা সিলেবাসের বাইরের বই পড়ে না। শুধু প্রথাগত বই মুখস্থ করে পাস করে। তাই বলা যায়, পাস করে বিদ্যা অর্জন আর শিক্ষিত হওয়া এক নয়।
যে কোনো জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। কেননা যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। আর এই উন্নয়নের পিছনে লাইব্রেরি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। লাইব্রেরির গুরুত্ব হাসপাতালের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বরং স্কুল-কলেজের চেয়ে একটু বেশি। কারণ লাইব্রেরিতে লোকজন স্বাধীনভাবে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়। ব্যক্তির ইচ্ছা অনুসারে মনের খোরাক মেটাতে পারে। ফলে লোকজন সচেতন ও আধুনিক হয়ে ওঠে। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজের মানুষকে আধুনিক ও সচেতন করে তোলার জন্য লাইব্রেরির গুরুত্ব অনেক।