মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা: বাংলা প্রথমপত্র

ফারুক আহম্মদ

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা: বাংলা প্রথমপত্র

কিশোর কাজি

আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১। রমজান টাকার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। সেখানে পরিশ্রম করে যে টাকা সে উপার্জন করে তা প্রতি মাসে তার বিশ্বস্তবন্ু্ল আরজান আলীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে আরজান আলী ওই টাকা দিয়ে ব্যবসা করে ফুলে-ফেঁপে উঠতে লাগল। পাঁচ বছর পর রমজান দেশে ফিরে আরজানের কাছে যায় টাকা ফেরত নিতে। কিন্তু আরজান টাকার কথা অস্বীকার করে। ফলে নিঃস্ব হয়ে রমজান বাসায় ফিরে আসে।

ক. আলী কোজাই এর বন্ধুর নাম কী?

খ. নাজিম কীভাবে মোহরের দেখা পেল?

গ. উদ্দীপকের আরজান আলীর সঙ্গে ‘কিশোর কাজি’ গল্পের নাজিম চরিত্রের সাদশ্য তুলে ধর।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘কিশোর কাজি’ গল্পের সমগ্র বিষয়বস্তু ফুটে ওঠেনি- এর স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

ক. উত্তর: আলী কোজাই এর বন্ধুর নাম নাজিম।

খ. উত্তর: নাজিমের স্ত্রী জলপাই খেতে চাইলে কলসির জলপাই নিতে গিয়েই নাজিম মোহরের সন্ধান পেল। নাজিমের স্ত্রীর জলপাই খেতে ইচ্ছা করলে নাজিম আলীর রেখে যাওয়া কলসি থেকে কিছু জলপাই আনতে যায়। কিন্তু কলসির মুখ খুলে দেখে যে, উপরের সব জলপাই পচে গেছে। নিচের দিকে জলপাই ভালো থাকতে পারে এই ভেবে নাজিম কলসিটি উপুড় করে ঢেলে দিলে কলসি থেকে মোহর বেরিয়ে আসে। এভাবেই নাজিম মোহরের দেখা পেল।

গ. উত্তর : উদ্দীপকের আরজান আলী এবং ‘কিশোর কাজি’ গল্পের নাজিম চরিত্রের সাদৃশ্য হলো তারা উভয়েই তাদের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

একজন সৎ মানুষকে সকলেই বিশ্বাস করে। মানুষটি সকলের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠে। কিন্তু এই প্রকৃত বন্ধুই যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন তা আর প্রকৃত বন্ধু থাকে না, আমরা উদ্দীপক ও ‘কিশোর কাজি’ গল্পের উভয়ই চরিত্রেই এই দিকটি দেখতে পাই।

‘কিশোর কাজি’ গল্পে আলী কোজাই নামে একজন বণিক বাস করত। বন্ধুদের দেখে তার মক্কায় হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছা হলো। ফলে আলী তার সারা বছরের সঞ্চিত মোহরগুলো বন্ধু নাজিমের কাছে কলসিতে ভরে উপরে জলপাই রেখে জমা রেখে যায়। পরে নাজিম কলসিতে মোহরের সন্ধান পেয়ে মোহরগুলো সিন্ধুকে তুলে জলপাই ভর্তি কলসি আলীকে ফেরত দেয়। অর্থাৎ আলীর বিশ্বস্ত বন্ধু নাজিম আলীর  সাথে  বিশ্বাসঘাতকতা  করে।  উদ্দীপকে  আমরা  দেখতে  পাই  নাজিমের  মতো  আরজান  আলী  তার  বন্ধুর  সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কেননা  রমজান টাকার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। টাকা আয় করে বন্ধু আরজান আলীর কাছে পাঠিয়ে দেয়, এই টাকা দিয়ে আরজান  ব্যবসা করে ধনী হয়ে উঠে। তাই রমজান বিদেশ থেকে ফিরে এসে টাকা ফেরত চাইলে আরজান তা অস্বীকার করে। তাই বলা যায়, বিশ্বাস ভঙ্গের দিক দিয়ে উদ্দীপকের আরজান আর ‘কিশোর কাজি’ গল্পের  নাজিম চরিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উত্তর: উদ্দীপকটিতে ‘কিশোর কাজি’ গল্পের সমগ্র বিষয়বস্তু ফুটে উঠেনি- কারণ শুধু নাজিম চরিত্রের বিশ্বাস ঘাতকতাই নয়, বালকের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা এই গল্পের বিষয়বস্তু।

বাগদাদের বণিক আলী কোজাই মক্কায় হজ করতে যাওয়ার সময় বন্ধু নাজিমের কাছে মোহরগুলো গচ্ছিত রেখে যায়, ফিরে এসে তা ফেরত না পেয়ে খলিফার কাছে বিচার প্রার্থনা করে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে আলী তার মোহর ফেরত পেল না।  এই ঘটনা সারা শহর ছড়িয়ে পড়ে। এক রাতে খলিফা ছদ্মবেশে ঘুরতে বেরোলে দেখতে পান একদল বালকেরা আলী ও নাজিমের বিচারকার্য নিয়ে অভিনয় করছে। খেলার ছলে হলেও একজন বালক কাজি সেজে  সুন্দরভাবে বিচার কার্যসম্পন্ন করল এবং আলীর মোহর ফেরত দিল। বালকের বুদ্ধিমত্তা ও বিচারক্ষমতা দেখে খলিফা আশ্চর্য হলেন এবং পরদিন দরবারে বালকদের এনে বিচারকার্য বসালেন। ঠিক একইভাবে অভিনয়ের মাধ্যমে বালকটি  আলী ও নাজিমের বিচারকার্য সম্পন্ন করে নাজিমকে দোষী সাব্যস্ত করে। ফলে নাজিম আলীর মোহরগুলো ফেরত দিল।

কিন্তু উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই শুধু নাজিমের মতো আরজান আলীর বিশ্বাসঘাতকতা ফুটে উঠেছে। কেননা রমজান বিদেশ থেকে আরজান আলীর কাছে টাকা পাঠাতো, রমজান বিদেশ থেকে ফিরে এসে আরজানের কাছে টাকা চাইতে গেলে আরজান তা অস্বীকার করে। ফলে রমজান নিঃস্ব হয়ে বাসায় ফিরে আসে।

উদ্দীপকে শুধু আরজান আলীর বিশ্বাসঘাতকতাই ফুটে উঠেছে, কিন্তু ‘কিশোর কাজি’ গল্পে শুধু নাজিমের বিশ্বাসঘাতকতাই নয় বালকের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা এই গল্পের বিষয়বস্তু। তাই আমরা সঠিক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, উদ্দীপকে ‘কিশোর কাজি’ গল্পের সমগ্র বিষয়বস্তু ফুটে উঠেনি।

২। বিপদে পড়ে রিয়ান, মজনুর কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, কিন্তু টাকা ধার দেওয়ার সময় মজনু শর্ত দেয় তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে রিয়ানের শরীর থেকে এক কেজি মাংস কেটে নেওয়া হবে। সেই শর্তে রিয়ান টাকা নেয়, কিন্তু টাকা শোধ দিতে না পারায় মজনু আদালতে বিচার দেয়, বিচারে রায় হয় মজনু, রিয়ানের শরীর থেকে এক কেজি মাংস  কেটে নেবে। এমন সময় হাজির হয় এক তরুণ উকিল। তিনি বিচারকের কাছে অনুমতি নিয়ে মজনুকে বলেন, শর্তানুযায়ী আপনি এক কেজি মাংস পাবেন, কিন্তু মনে রাখবেন মাংস কাটার সময় যেন এক কেজির বেশি বা কম না হয়। দ্বিতীয়ত, শরীর থেকে যেন কোনো রকম রক্ত না ঝরে। শুনে বজ্রাহত পথিকের মতো দাঁড়িয়ে রইল মজনু।

ক.   বাগদাদের খলিফার নাম কী?

খ.   আলী কোজাই কলসিটি বন্ধু নাজিমের কাছে রাখল কেন?

গ.   উদ্দীপকটি ‘কিশোর কাজি’ গল্পের কোন দিকটির ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ.   উদ্দীপকের তরুণ উকিল ‘কিশোর কাজি’ গল্পের বালক কাজিরই প্রতিনিধি-  উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ কর।

ক.উত্তর : বাগদাদের খলিফার নাম হারুনর রশিদ।

খ. উত্তর : আলী কোজাই তার মোহরগুলো নিরাপদে রেখে হজ করতে যাওয়ার জন্য মোহরগুলো কলসিতে ভরে বন্ধু নাজিমের কাছে আমানত রাখল।

বাগদাদ শহরে আলী কোজাই নামে একজন বণিক বাস করত। তার কয়েকজন প্রতিবেশী হজ করতে যাবে শুনে তারও মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা হলো।  

কিন্তু তার সমস্যা হলো সঞ্চিত মোহরগুলো নিয়ে। তাই তিনি একটি কলসি কিনে তার মধ্যে মোহর ভরে মোহরের উপর জলপাই রেখে কলসিটি  বন্ধু নাজিমের কাছে রেখে আসল। মূলত মোহরগুলো নিরাপদে রেখে হজ করতে যাওয়ার জন্যই তিনি কলসিটি বন্ধু নাজিমের কাছে রাখল।

গ. উত্তর : উদ্দীপকটি ‘কিশোর কাজি’ গল্পের বালকের বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার দিকটির ইঙ্গিত বহন করে।

‘কিশোর কাজি’ গল্পের আলী কোজাই তার সমস্ত মোহর নাজিমের কাছে রেখে হজে যায়। হজ থেকে ফিরে প্রমাণের অভাবে আলী তার মোহর ফেরত পেল না, এমনকি নাজিমকে দোষী সাব্যস্ত করতেও পারল না। এই সংবাদ সারা শহরে ছড়িয়ে পড়লে একদল বালক বিচক্ষণতা আর বুদ্ধি দিয়ে নাজিমকে দোষী প্রমাণ করল। একজন বালক কাজি সেজে একজন জলপাই ব্যবসায়ীকে ডাকতে বলল। জলপাই ব্যবসায়ী এলে কাজি তাকে জিজ্ঞাসা করল, এখানে যে জলপাই আছে তা কতদিনের হবে। ব্যবসায়ী বলল, বড়জোর ছয় মাস। এতেই বালকদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় ফুটে উঠল।

তেমনিভাবে উদ্দীপকেও আমরা দেখতে পাই তরুণ উকিলের বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তা। যখন মজনু রিয়ানের শরীর থেকে এক কেজি মাংস কেটে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, ঠিক এমন সময় দেবতার মতো হাজির হলেন একজন তরুণ উকিল। তিনি লোকটিকে বললেন, শর্তানুযায়ী আপনি শুধু এক কেজি মাংস পাবেন। কিন্তু দেখবেন যেন মাংসের পরিমাপ এক কেজির বেশি বা কম না হয়। আর শরীর থেকে এক বিন্দু রক্তও যেন না ঝরে। এই কথা শুনে মজনু বজ াহত পথিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কেননা মাংস কাটলে শরীর থেকে রক্ত তো ঝরবেই ফলে সে আর রিয়ানের শরীর থেকে মাংস কাটতে পারল না। সুতরাং উদ্দীপকের তরুণ উকিলের বিচক্ষণতা ‘কিশোর কাজি’ গল্পের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার দিকটির ইঙ্গিত বহন করে।  ঘ. উত্তর : উদ্দীপকের তরুণ উকিল ‘কিশোর কাজি’ গল্পের বালক কাজিরই প্রতিনিধি-  উক্তিটি যথার্থ। কেননা উভয় চরিত্রে বিচক্ষণতা ফুটে উঠেছে। শিক্ষার কোনো শেষ নেই। কোনো কোনো সময় বড়রা ছোটদের কাছ থেকেও শিক্ষা নিতে পারে। কেননা অনেক সময় যেটা বড়রা করতে পারে না, সেটা ছোটরা পারে। আবার যেটা ছোটরা পারে না, সেটা বড়রা পারে। উদ্দীপক ও ‘কিশোর কাজি’ গল্পে আমরা সে দিকটিই দেখতে পাই। প্রমাণের অভাবে আলী তার মোহর ফেরত পায় না। এমনকি খলিফার দরবারে নালিশ করেও কোনো ফল পায়নি। এই সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে একদল বালকের বিচক্ষণতাই আলী তার মোহর ফেরত পায়। কেননা আলী যে জলপাই দুই বছর আগে কলসিতে রেখেছিল তা পচে যাওয়ার কথা। কিন্তু নাজিম আলীকে তাজা জলপাইসহ কলসটি ফেরত দেয়। আর তাতেই বালকদের সন্দেহ হয় নাজিম মিথ্যা বলছে। ফলে বালকরা বুদ্ধি করে একজন জলপাই ব্যবসায়ী ডেকে আনে আর তাতেই প্রমাণিত হয় যে, নাজিম মোহরগুলো নিয়ে তাজা জলপাই দিয়ে কলসিটি ভর্তি করে রেখেছে।

অন্যদিকে উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই তরুণ উকিলের বিচক্ষণতার ফলে রিয়ান মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়। কেননা টাকা ফেরত না পেয়ে মজনু যখন তার শরীর থেকে এক কেজি মাংস নিতে প্রস্তুত। ঠিক এমন সময় দেবতার মতো হাজির হলেন একজন তরুণ উকিল। তিনি লোকটিকে বললেন, শর্তানুযায়ী আপনি শুধু এক কেজি মাংস পাবেন।

সর্বশেষ খবর