শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সপ্তম শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

মেহেরুন্নেসা খাতুন

সপ্তম শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র

আদুভাই : আবুল মনসুর আহমদ

সৃজনশীল প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : আনিস পড়াশোনায় খুব ভালো না হলেও প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠা পর্যন্ত সব বিষয়ে পরীক্ষায় পাস করেছে। কিন্তু এ বছর বার্ষিক পরীক্ষায় সে অঙ্ক, বিজ্ঞান ও ইংরেজিতে পাস করতে পারেনি বলে অষ্টম শ্রেণিতে প্রমোশন পায় না। অষ্টম শ্রেণিতে প্রমোশনের জন্য অনেকে তাকে শিক্ষকদের অনুরোধ করতে বললেও আনিস তা করে না। কারণ তার মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ ছিল প্রবল। সে মনে করে, নিজের চেষ্টায় একদিন সে সফল হবে।

ক.   ‘আদুভাই’ গল্পটি কে রচনা করেছেন?

উত্তর : ‘আদুভাই’ গল্পটি আবুল মনসুর আহমদ রচনা করেছেন।

খ. আদুভাই কীভাবে সপ্তম শ্রেণির অবিচ্ছেদ্য ও স্বাভাবিক অঙ্গে পরিণত হয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : লেখক আদুভাইয়ের সহপাঠী হয়ে জানতে পারলেন যে আদুভাই পরীক্ষায় ফেল করে করে সপ্তম শ্রেণির পুরনো আসবাবপত্রের মতোই বহু পুরনো ছাত্র, যা তার জন্য স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘আদুভাই’ গল্পের আদুভাই ক্লাস সেভেনে পড়তেন। ঠিক পড়তেন না বলে পড়ে থাকতেন বলাই ভালো। কারণ ওই বিশেষ শ্রেণি ছাড়া আর কোনো শ্রেণিতে তিনি কখনো পড়েছেন কিনা, পড়ে থাকলে ঠিক কবে পড়েছেন, সে কথা ছাত্ররা কেউ জানত না। শিক্ষকরাও অনেকে জানতেন না বলে লেখকের মনে হয়েছে। শিক্ষকরাও অনেকে তাকে ‘আদুভাই’ বলে ডাকতেন। কারণ তারাও নাকি এককালে আদুভাইয়ের সহপাঠী ছিলেন এবং সবাই নাকি ক্লাস সেভেনেই আদুভাইয়ের সঙ্গে পড়েছেন। লেখক যখন আদুভাইয়ের সহপাঠী হলেন, ততদিনে আদুভাই ওই শ্রেণির পুরনো টেবিল-ব্ল্যাকবোর্ডের মতোই অবিচ্ছেদ্য এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক অঙ্গে পরিণত হয়েছে।

গ.   উদ্দীপকের আনিসের সঙ্গে ‘আদুভাই’ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : উদ্দীপকের আনিসের সঙ্গে ‘আদুভাই’ গল্পের ‘আদুভাই’ চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। ‘আদুভাই’ গল্পের আদুভাই কতকাল ধরে ক্লাস সেভেনে পড়েছেন, তা অনেকের মতো লেখকও জানতেন না। বছরের পর বছর পরীক্ষায় ফেল করে তিনি একই শ্রেণিতে পুরনো টেবিল-ব্ল্যাকবোর্ডের মতোই অবিচ্ছেদ্য ও স্বাভাবিক অঙ্গে পরিণত হয়ে গিয়েছেন। আদুভাইয়ের এই অসাফল্যে আর যে-ই যত হতাশ হোক, আদুভাইকে কেউ কখনো বিষণ্ন দেখেনি কিংবা নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কখনো কোনো শিক্ষক বা পরীক্ষককে অনুরোধ করেননি। যদিও কখনো কোনো বন্ধু আদুভাইকে যে কয় বিষয়ে নম্বর শর্ট আছে, তা বাড়িয়ে নিতে বলেছে; তিনি তখন গম্ভীরভাবে জবাব দিয়েছেন, সব সাবজেক্টে পাকা হয়ে ওঠাই ভালো। কোন কোন সাবজেক্টে শর্ট এবং পাকা হওয়ার প্রয়োজন আছে, তা কেউ জানত না। আদুভাইও জানতেন না, জানবার আগ্রহও যে তার আছে, তাও বোঝার উপায় ছিল না; বরং তিনি মনে করতেন ও রকম আগ্রহ প্রকাশ করাই অন্যায় ও অসঙ্গত। তিনি বলতেন, যেদিন তিনি সব সাবজেক্টে পাকা হবেন, প্রমোশন সেদিন তার কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। সে শুভদিন যে একদিন আসবেই, সে বিষয়ে আদুভাইয়ের এতটুকু সন্দেহ কেউ দেখেনি। উদ্দীপকের আনিসও কোনো বছর পরীক্ষায় ফেল না করলেও সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার সময় তিন বিষয়ে ফেল করে। তখন অনেকে তাকে অষ্টম শ্রেণিতে প্রমোশন দেওয়ার জন্য শিক্ষকের কাছে অনুরোধ করতে বলে; কিন্তু আনিস তা করে না। সে মনে করে নিজের চেষ্টায় সে একদিন সফল হবে। উদ্দীপকের আনিসের এই দৃষ্টিভঙ্গি ‘আদুভাই’ গল্পের আদুভাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ.   উদ্দীপকটি ‘আদুভাই’ গল্পের আংশিক ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র। মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

উত্তর : উদ্দীপকের আনিসের নিজের চেষ্টায় সফল হওয়ার ইচ্ছা পোষণের দিকটির সঙ্গে ‘আদুভাই’ গল্পের আদুভাইয়ের সাদৃশ্যের অতিরিক্ত বক্তব্যও গল্পে নিহিত বলে উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে। ‘আদুভাই’ গল্পের আদুভাই বছরের পর বছর ক্লাস সেভেনে থাকলেও অর্থাৎ লেখাপড়ায় ভালো না হলেও তার চালচলন, আচার-ব্যবহার, আদব-কায়দা ছিল সবার উপরে। বিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন তিনি সব সময় মেনে চলতেন। যে আদুভাই প্রমোশনের জন্য কোনো দিন কারও কাছে আবেদন করেননি, সেই আদুভাই-ই একদিন প্রমোশনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। কারণ সে বছর তার ছেলেও ক্লাস সেভেনে প্রমোশন পেয়েছে। তার স্ত্রীর আপত্তির কারণে তিনি প্রমোশন পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। কারণ সব বিষয়ে তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল খুবই খারাপ। পরবর্তী সময় লেখক জানতে পেরেছিলেন যে আদুভাই কঠোর পরিশ্রম করে দিন-রাত পড়াশোনা করে অষ্টম শ্রেণিতে প্রমোশন পেয়েছিলেন, কিন্তু অতিরিক্ত খাটুনির ফলে তার শরীরে শক্ত রোগ বাসা বাঁধে। ফলে কিছুদিন পরই আদুভাই মারা যান।

উদ্দীপকে শুধু আনিসের পড়াশোনা করে পরীক্ষায় পাসের তীব্র ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে। এর অতিরিক্ত কোনো বক্তব্য নেই। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, ‘আদুভাই’ গল্পের আদুভাই চরিত্রের ইতিবাচক দিক, পাসের জন্য তার কঠোর অনুশীলন এবং অবশেষে মৃত্যু— এই দিকগুলো না থাকায় উদ্দীপকটি আংশিক ভাব ধারণ করেছে- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

সর্বশেষ খবর