মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নবম ও দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা

মো. জিল্লুর রহমান

নবম ও দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা

১. আইন বলতে কী বোঝ?

উত্তর : আইন বলতে সমাজ স্বীকৃত ও রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত নিয়ম-কানুনকে বোঝায়, যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আইন মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রণয়ন করা হয়। আইনের দ্বারা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির, ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্র বা সার্বভৌম কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়।

 

২. আইনের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তর : আইনের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :

ক. আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ ও কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন আইনবিরোধী কোনো কাজের জন্য শাস্তি পেতে হয়। শাস্তির ভয়ে মানুষ অপরাধ থেকে বিরত থাকে।

খ. সমাজের যেসব নিয়ম রাষ্ট্র অনুমোদন করে, সেগুলো আইনে পরিণত হয়। অন্য কথায়, আইনের পেছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব থাকে। রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ও স্বীকৃতি ব্যতিরেকে কোনো বিধি-বিধান আইনে পরিণত হয় না।

 

৩. সরকারি আইন বলতে কী বোঝ?

উত্তর : ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যেসব আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়, তাকে সরকারি আইন বলে। সরকারি আইনকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-ফৌজদারি আইন ও দণ্ডবিধি, প্রশাসনিক আইন ও সাংবিধানিক আইন।

 

৪. ফৌজদারি আইন কী?

উত্তর : রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কাজ পরিচালনার জন্য ফৌজদারি আইন প্রণয়ন করা হয়। কোনো কারণে ব্যক্তির অধিকার ভঙ্গ হলে এ আইনের সাহায্যে তার অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

 

৫. বেসরকারি আইন বলতে কী বোঝ?

উত্তর : ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষার জন্য যে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়, তাকে বেসরকারি আইন বলে। যেমন— চুক্তি ও দলিলসংক্রান্ত আইন। এ ধরনের আইন সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন।

 

৬. আন্তর্জাতিক আইন বলতে কী বোঝ?

উত্তর : এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক রক্ষার জন্য যে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়, তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। বিভিন্ন রাষ্ট্র পরস্পরের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে, এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে, কিভাবে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান করা হবে তা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।

 

৭. প্রথা কী?

উত্তর : দীর্ঘকাল ধরে কোনো নিয়ম সমাজে চলতে থাকলে তাকে প্রথা বলে। রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে প্রথার মাধ্যমে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ হতো। রাষ্ট্র সৃষ্টির পর যেসব প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে, সেগুলো আইনে পরিণত হয়। যুক্তরাজ্যের অনেক আইন প্রথার ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে।

 

৮.  ধর্ম কীভাবে আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে?

উত্তর : ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মগ্রন্থ আইনের অন্যতম উৎস। সব ধর্মের কিছু অনুশাসন রয়েছে, যা ওই ধর্মের অনুসারীরা মেনে চলে। এসব অনুশাসন সমাজজীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। ফলে এসব ধর্মীয় অনুশাসনের অনেক কিছুই পরবর্তী সময় রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয়। যেমন মুসলিম আইন, হিন্দু আইন প্রভৃতি। আমাদের দেশে পারিবারিক ও সম্পত্তি আইনের অনেকগুলো উপরোল্লিখিত দুটি ধর্ম থেকে এসেছে।

 

৯. আইনের শাসন বলতে কী বোঝ?

উত্তর : আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে-কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সবাই আইনের অধীন। অন্য কথায় আইনের চোখে সবাই সমান। আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রাপ্তির সুযোগকে আইনের শাসন বলে। সবার ওপরে আইনের অর্থ আইনের প্রাধান্য। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এর অর্থ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-পেশা নির্বিশেষে আইনের সমান আশ্রয় লাভ করাকে বোঝায়। এর ফলে ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল সবাই সমান অধিকার লাভ করে।

 

১০. স্বাধীনতা বলতে কী বোঝ?

উত্তর : সাধারণ অর্থে স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো কাজ করাকে বোঝায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা বলতে এ ধরনের অবাধ স্বাধীনতাকে বোঝায় না। কারণ, সীমাহীন স্বাধীনতা সমাজের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, কাউকে ইচ্ছামতো সব কিছু করার স্বাধীনতা দিলে সমাজে অন্যদের ক্ষতি হতে পারে, যা এক অশান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। তাই পৌরনীতিতে স্বাধীনতা ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ অর্থে, অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করাই হলো স্বাধীনতা।

সর্বশেষ খবর