রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষা প্রস্তুতি

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

মো. জিল্লুর রহমান

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

সৃজনশীল প্রশ্ন

পঞ্চম অধ্যায়

উদ্দীপক : নীহারিকা যে ধর্মের লোক সেই ধর্ম ষষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার পূর্বতম প্রান্ত ত্রিপুরায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অশোকের রাজত্বকালে এ ধর্ম বাংলায় বেশি প্রসার লাভ করে। অষ্টম শতক থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত বাংলায় এ ধর্মেরই জয়জয়কার ছিল। কুমিল্লা অঞ্চলে একসময় এ ধর্মের অনেক উপাসনালয় ছিল।

ক) অতিসম্প্রতি উয়ারী-বটেশ্বর গ্রামে প্রায় কত বছরের পুরনো এক নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে?

খ) বর্ম ও সেন রাজাদের ধর্ম পালনের ব্যাখ্যা দাও।

গ) নীহারিকা যে ধর্মের লোক সে ধর্মের ধর্মীয় কাজগুলো প্রাচীন বাংলায় ধর্মীয় জীবনের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

ঘ) পাল, চন্দ্র, কান্তিদেবের বংশের লোকেরাও নীহারিকার ধর্মের লোক ছিল— বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ক)   অতিসম্প্রতি উয়ারী-বটেশ্বর গ্রামে প্রায় ২৫০০ বছরের পুরনো এক নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

খ) বর্ম ও সেন রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে একাদশ ও দ্বাদশ শতকে বৈদিক ধর্ম আরও প্রসার লাভ করে। এ দুই বংশের রাজা-প্রজারা প্রায় সবাই ব্রাহ্মণ্য ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। বৈদিক যাগযজ্ঞে পৌরাণিক দেবদেবী ও বিশেষ বিশেষ তিথি নক্ষত্রে স্নান-দান-ধ্যান ক্রিয়াকর্মের প্রচলন শুরু হয়। জাতকর্ম, নিষ্ক্রমণ, নামকরণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, উপনয়ন, সমাবর্তন, বিবাহ, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি সংস্কার এভাবে বাঙালি ব্রাহ্মণ্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।

গ) উদ্দীপকের নীহারিকা যে ধর্মের লোক, সে ধর্ম ষষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার পূর্বতম প্রান্ত ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অশোকের রাজত্বকালে এ ধর্ম বাংলায় বেশি প্রসার লাভ করে। অষ্টম শতক থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত বাংলায় এ ধর্মেরই জয়জয়কার ছিল। কুমিল্লা অঞ্চলে এক সময় এ ধর্মের অনেক উপাসনালয় ছিল। উদ্দীপকের এ ঘটনাবলি পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, ষষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার পূর্বতম প্রান্ত ত্রিপুরায় মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অশোকের রাজত্বকালেই বাংলায় বৌদ্ধ ধর্ম বেশি প্রসার লাভ করে। অষ্টম শতক থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মেরই জয়জয়কার ছিল। প্রাচীন বাংলার ধর্মজগতে বৌদ্ধ ধর্ম একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। কুমিল্লা অঞ্চলে তখন অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার ছিল। পাল বংশের আগমনের ফলে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব খুব বৃদ্ধি পায়। সুদীর্ঘ ৪০০ বছর রাজত্বকালে তাদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলায় এ ধর্ম আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। তাঁরা অনেক বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেছিলেন। এদের মধ্যে ধর্মপালের বিক্রমশীল বিহার, সোমপুর বিহার ও দন্তপুর বিহার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য।

ঘ) নীহারিকার ধর্ম ষষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার পূর্বতম প্রান্ত ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অশোকের রাজত্বকালে এ ধর্মের বেশি প্রসার ঘটে। অষ্টম শতক থেকে এগারো শতক পর্যন্ত বাংলায় এ ধর্মের জয়জয়কার ছিল। পাঠ্যপুস্তকে আমরা ষষ্ঠ শতকে বিস্তার লাভ করা একমাত্র ধর্ম হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মকেই দেখতে পাই। এ ধর্ম সম্রাট অশোকের আমলে বেশি প্রসার লাভ করে। অর্থাৎ নীহারিকা যে ধর্মের অনুসারী, তার নাম বৌদ্ধ ধর্ম। পাঠ্য বই অনুসরণে বলা যায়— নীহারিকা, পাল, চন্দ্র ও কাস্তিদেবের বংশের লোকেরাও বৌদ্ধ ছিল। কিন্তু সেন রাজাদের আগমনের পর বাংলায় শৈব ও বৈষ্ণব ধর্ম এবং প্রাচীন বৈদিক ও পৌরাণিক ধর্মানুষ্ঠান ও আচার-ব্যবহার পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হয়। সেন যুগেই বিষ্ণু, শিব, পার্বতী প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা শুরু হয় এবং বহু মন্দির নির্মিত হয়। ফলে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের পতন শুরু হয়। তারপর শেষ আঘাত আসে তুর্কি মুসলমানদের কাছ থেকে। দ্বাদশ শতকের শেষদিকে তুর্কি আক্রমণের ফলে যখন প্রথম মগধ ও পরে উত্তর বাংলায় বৌদ্ধ  মন্দিরগুলো ধ্বংস হয়, তখনই বৌদ্ধ সংঘ ভারতের পূর্ব প্রান্তের এ সর্বশেষ আশ্রয়স্থল থেকে বিতাড়িত হয়। তারা আত্মরক্ষার জন্য নেপাল ও তিব্বতে গমন করে। বৌদ্ধ সংঘই ছিল বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান কেন্দ্র।

ষষ্ঠ অধ্যায়

উদ্দীপক : মধ্যযুগের একজন সুলতান অসংখ্য ক্রীতদাস সংগ্রহ করে সেনাবাহিনী ও রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে এরাই ষড়যন্ত্র করে ওই শাসনকালের পরিসমাপ্তি ঘটায়, যা বাংলায় একটি বিশেষ শ্রেণির শাসনের সূচনা করে।

 

ক) কত খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজি নদীয়া জয় করেন?

খ) বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ও বিকাশে হুসেন শাহর ভূমিকা কী ছিল?

গ) মধ্যযুগের সুলতান কর্তৃক নিয়োগকৃত উল্লিখিত শ্রেণি ইতিহাসে কোন শাসনের সূচনা করে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ) এই বিশেষ শ্রেণির শাসনকালে এ দেশের ইতিহাস ছিল অন্যায়, অবিচার, বিদ্রোহ, ষড়যন্ত্র আর হতাশায় পরিপূর্ণ— বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ক) ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজি নদীয়া জয় করেন।

খ) বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ও বিকাশে হুসেন শাহর শাসনকাল ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে। হুসেন শাহ যোগ্য কবি ও সাহিত্যিকদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার প্রদান করতেন। এ যুগের প্রখ্যাত কবি ও লেখকের মধ্যে রূপ গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী, মালাধর বসু, বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস, পরাগল খান ও যশোরাজ খান উল্লেখযোগ্য। এ সময় মালাধর বসু ‘শ্রীমদ্ভগবৎ’ ও ‘পুরাণ’ এবং পরমেশ্বর ‘মহাভারত’ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। হুসেন শাহ আরবি ও ফারসি ভাষারও উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

গ) মধ্যযুগে বরবক শাহ কর্তৃক নিয়োগকৃত উল্লিখিত শ্রেণি তথা হাবসি ক্রীতদাস দ্বারা হাবসি শাসনের সূচনা হয়। বরবক শাহই প্রথমে হাবসি ক্রীতদাস সংগ্রহ করে সেনাবাহিনী ও রাজপ্রাসাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেন। এদের সংখ্যা ছিল আট হাজার। তিনি রাজ্যে একটি নিজস্ব দল গঠনের উদ্দেশ্যে এ হাবসিদের বাহিনী গঠন করেন ঠিকই, তবে ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনেন। বরবক শাহর ছোট ভাই হুসেইন জালালউদ্দিন ফতেহ শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সে সময় হাবসি ক্রীতদাসরা ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। একজোট হয়ে সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। প্রলোভন দেখিয়ে তারা সুলতানের বিরুদ্ধে শাহজাদা ও তার অধীনস্থ পাইকদের দলভুক্ত করে। শাহজাদা রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে ফতেহ শাহকে হত্যা করে। এর ফলে হাবসি শাসনের সূচনা হয়।

ঘ) উদ্দীপকে বিশেষ শ্রেণির শাসক বলতে বোঝানো হয়েছে হাবসি শাসনামলকে। বাংলায় এদের শাসনকাল ছিল মাত্র ছয় বছর। এ সময় এ দেশের ইতিহাস ছিল অন্যায়, অবিচার, বিদ্রোহ, ষড়যন্ত্র আর হতাশার। শাসনরত চারজন হাবসি সুলতানের তিনজনকেই হত্যা করা হয়। হাবসি নেতা সুলতান শাহজাদা ‘বরবক শাহ’ উপাধি নিয়ে প্রথম ক্ষমতায় বসেন। কয়েক মাসের মধ্যে তিনি সেনাপতি আন্দিলের হাতে নিহত হন। আন্দিল ‘সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। তিন বছর রাজত্বের পর আসেন দ্বিতীয় নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ। কিন্তু কিছুকাল রাজত্বের পর এক হাবসি সর্দার তাঁকে হত্যা করে ‘শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ’ নাম নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করে। অত্যাচারী ও হত্যাকারী হিসেবে কুখ্যাতির ফলে গৌড়ের সম্ভ্রান্ত লোকেরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে উজির সৈয়দ হোসেন যোগদান করেন এবং মুজাফফর নিহত হন। এর ফলে হাবসি শাসনের অবসান ঘটে। এ কারণেই ওই শাসনামল সম্পর্কে প্রশ্নের মন্তব্যটি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর