রবিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী প্রস্তুতি বাংলা

শফিকুল ইসলাম, শিক্ষক

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী প্রস্তুতি বাংলা

পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ১৪ নম্বরে থাকছে রচনা। প্রশ্নে চারটি বিষয়বস্তুর ওপর রচনা থাকবে, এর মধ্যে একটির উত্তর দিতে হবে। মান ১০।

গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত মডেল টেস্টের ১-১৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর ছিল গত সংখ্যায়। আজ থাকছে সর্বশেষ প্রশ্ন (১৪) অর্থাৎ রচনার উত্তর প্রশ্নের প্রতিটি রচনার সঙ্গে ইঙ্গিত কিংবা উপ-শিরোনাম দেওয়া থাকবে, সেগুলোর আলোকে ২০০ শব্দের মধ্যে রচনা লিখতে হবে।

ক. আমার মা

ভূমিকা : এই পৃথিবীতে সন্তানের সবচেয়ে আপনজন হলেন তার মা। সন্তানকে গর্ভে ধারণ, জন্মদান, তার বেড়ে ওঠা থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একজন মা-ই সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি সময় দিয়ে থাকেন। মায়ের সান্নিধ্যে থেকেই সন্তান প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। মায়ের এই স্নেহময়ী রূপের সঙ্গে আর সবার মতো আমিও পরিচিত বলে পৃথিবীতে আমার মা-ই আমার সবচেয়ে প্রিয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ।

প্রিয় মানুষের পরিচয় : আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় যাঁকে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় কাছে পাই, তিনি কিন্তু একজন মা। আমার বাবাও আমার কাছে পরম শ্রদ্ধার পাত্র, তার পরও মাকে সারাক্ষণ কাছে পাই বলে আমার যত আদর-আবদার-আহ্লাদ—সবই মাকে ঘিরে থাকে।

গুণাবলি : আমি আমার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। কিন্তু আমার ছয় বছর বয়সের সময় বাবা চাকরিসূত্রে বিদেশে যান। তিনি বছরে মাত্র এক মাসের জন্য দেশে আসেন। যদিও বাবার সঙ্গে টেলিফোনে মাঝেমধ্যেই কথা হয়, তবু মাকেই আমি সারাক্ষণ কাছে পাাই। মা এমনভাবে আগলে রেখে আমাকে বড় করে তুলেছেন যে বাবার অভাব তিনি বুঝতেই দেন না। তিনি একা ঘরে-বাইরের যাবতীয় দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে আমার দেখভাল করেন। আমার পড়াশোনার হাতে খড়িও মায়ের কাছেই। এখনো মনে পড়ে, মা আমাকে বই কিনে দেওয়ার আগে অক্ষর পরিচয়ের জন্য প্লাস্টিকের বিভিন্ন রঙের বাংলা-ইংরেজি বর্ণমালা, অঙ্ক শেখানোর জন্য প্লাস্টিকের ইংরেজি-বাংলা সংখ্যা ইত্যাদি কিনে দিতেন। ওগুলো দিয়ে খেলতে খেলতেই আমি তিন বছর বয়সের মধ্যে সব অক্ষর-সংখ্যা চিনে ফেলি। তারপর মা যখন ছড়া-ছবির বই কিনে দিলেন, সেগুলো বানান করে একা একাই পড়তে পারতাম। এখনো মা আমার পড়া তৈরিতে সাহায্য করেন। প্রতিদিন স্কুলের ডায়েরি চেক করেন। প্রয়োজনে বিষয়-শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসব দায়িত্ব পালনে এক দিনের জন্যও তাঁর শৈথিল্য দেখিনি। এ কারণে আমি কখনো পড়ালেখায় ফাঁকি দিতে পারিনি। আমার লেখাপড়ার প্রতি দায়িত্ব পালন ছাড়া মা সংসারের আরও যেসব দায়িত্ব পালন করেন, তা উল্লেখ না করলে আমার মায়ের গুণাবলির প্রকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আমার কোনো ভাই-বোন না থাকলেও আমাদের পরিবারে আমার দাদা-দাদি থাকেন। আমার মা নিজে তাঁদের সেবা-যত্ন করেন এবং আমাকেও তাঁদের সেবা-যত্ন করতে শিখিয়েছেন। আমাদের সবাইকে খাইয়ে তারপর তিনি খেতে বসেন। আমি যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ি, সে জন্য তিনি সব সময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করেন। আর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত নিরাময়ের জন্য সব রকম বিধি-ব্যবস্থা করেন।

কেন প্রিয় : আমার মা একজন দায়িত্বশীল মহিলা। তিনি সুচারুভাবে হাসিমুখে সব দায়-দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোনো দিন তাঁকে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে শুনিনি। নিজের সুখ-সুবিধার চেয়ে অন্যের সুখ-সুবিধার দিকে দৃষ্টি আমাকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। তিনি আমাকে সব সময় ভালো মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা দেন। আমার পড়ালেখায় যাতে একঘেয়েমি না আসে, সে জন্য আমার পছন্দের গল্পের বইগুলো কিনে দেন। এসব কারণে তিনি আমার প্রিয় ও আদর্শ মা হয়ে উঠেছেন।

উপসংহার : শিশুকাল থেকে মা আমাকে পরম যত্নে যেভাবে বড় করে তুলেছেন, তাঁর প্রতিদিনের কাজকর্মে সেটি আমি অনুভব করি। তাই আমিও যতটা পারি মায়ের কাজ-কর্মে সাহায্য করি। তিনি যাতে আমার কোনো কথায়-আচরণে কষ্ট না পান, সে জন্য সচেতন থাকি। আমি বিশ্বাস করি, মায়ের কথামতো চললেই একদিন সত্যিকারের মানুষ হব।

 খ. একুশে ফেব্রুয়ারি/আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ভূমিকা : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেরুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি’

(একুশের গান : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী)

বাঙালির জাতীয় জীবনের এক ঐতিহ্যবাহী দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। এটি এখন সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত। এ দিবসের সঙ্গে বাঙালির জীবনের অনেক ত্যাগ, মহিমা, আবেগ ও আনন্দ জড়িত। এদিন আমাদের জাতীয় জীবনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তোলা, বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তির প্রেরণা জোগায়। এদিনেই বাঙালি তার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা সাহসিকতা ও মনোবলের প্রকাশ ঘটায়।

ঐতিহাসিক পটভূমি : মাগো, ওরা বলে, সবার কথা কেড়ে নেবে,

তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না।

বলো মা, তাই কী হয় ?

(মাগো ওরা বলে : আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্)

১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর নানা রকম অন্যায়, নিপীড়ন ও অত্যাচার চালায়। তারা বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ জন্য তারা প্রথমেই বাঙালির মুখের ভাষার ওপর আঘাত হানে। তারা উর্দুকে এ দেশের রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টায় মেতে ওঠে। কিন্তু বাঙালি দমে যাওয়ার জাতি নয়।      [চলবে]

সর্বশেষ খবর