সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী প্রস্তুতি বাংলা

শফিকুল ইসলাম, শিক্ষক

পূর্বে প্রকাশের পর

ফলে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাক সরকার ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ১৪৪ ধারা জারি করে। সেদিন প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান নিয়ে রাজপথে বেরিয়ে পড়ে। বর্বর পাক সরকার এ মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে শহীদ হন রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে। একপর্যায়ে পাক সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

শহীদ মিনার : বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ভাষাশহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৬২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৈরি হয়েছে শহীদ মিনার। এখানেই শহীদ হয়েছিলেন আবুল বরকত। প্রতিবছর একুশে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তা ছাড়া দিনব্যাপী চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা : ইটের মিনার ভেঙেছে ভাঙুক।

একটি মিনার গড়েছি আমরা

চার কোটি কারিগর বেহালার সুরে,

রাঙা হৃদয়ের বর্ণলেখায়। (স্মৃতিস্তম্ভ : আলাউদ্দিন আল আজাদ)

১৯৫২ সালে ভাষাকে কেন্দ্র করেই বাঙালি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। একুশে চেতনা সেদিক থেকে একটি মূল্যবোধ, জীবনাদর্শ, যা আমাদের প্রতিবাদী করে তোলে এবং সর্বপ্রকার নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে স্বকীয় সত্তাস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হওয়ার আহ্বান জানায়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাঙালির একার নয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে সারা বিশ্বে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। পৃথিবীর সব জাতির মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এ দিনটি।

উপসংহার : বাংলাই পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যা এসেছে রক্তের বিনিময়ে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশে ফেব্রুয়ারি তাঁরা জীবন দিয়েছিলেন বলেই আজ আমরা প্রাণের ভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি। তাই একুশের চেতনা আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে লালন করতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

আমার পোষা প্রাণী

ভূমিকা : মানুষ সমাজে বাস করে। সমাজে বসবাসের ফলে মানুষে-মানুষে যেমন স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তেমনি অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের মমত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। হৃদয়ের সেই মমত্ববোধ থেকেই মানুষ আদিম কাল থেকেই বিভিন্ন গৃহপালিত জীব, প্রাণী-পাখি ইত্যাদি পুষে থাকে। মানুষ কখনো গৃহস্থালি প্রয়োজনে গরু, ঘোড়া , মহিষ, ছাগল, কুকুর, বিড়াল হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন পাখি পুষে থাকে। কিন্তু তার পরও সেই প্রাণীর প্রতি তার এক ধরনের মমতা জন্মে। তবে শুধু মনের আনন্দে কোনো প্রাণী লালন-পালন করলেই তাকে পোষা প্রাণী বলে। আমার পোষা প্রাণীর নাম কুকুর।

পোষা প্রাণীর বর্ণনা : আমার পোষা কুকুরটিকে আমি খুব ছোট অবস্থায় আমাদের বাড়ির গেটের সামনে পাই। আমাকে গেট খুলে ভিতরে ঢুকতে দেখে ওটিও আমার পেছন পেছন চলে আসে। আমি তখন কুকুরছানাটিকে একটা সরু দড়ি দিয়ে বারান্দায় থামের সঙ্গে বেঁধে রাখি। তারপর ওটাকে বাটিতে করে দুধ খেতে দিলে একটু একটু করে সবটাই খেয়ে ফেলে। কুকুরটির পেট ভরে যাওয়ায় ওটি আমার দিকে চেয়ে আনন্দে লেজ নাড়তে থাকে। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিই ওটাকে পোষার। ছানাটির গায়ের রং ছিল একেবারে বাদামি, তাই আমি আদর করে কুকুরছানাটির নামও রাখি ব্রাউনি। ব্রাউনির থাকার জন্য একটা টেলিভিশনের বাক্সদিয়ে ঘর বানিয়ে দিই।

খাদ্যাভ্যাস : আমার ব্রাউনি কুকুরছানাটি আস্তে আস্তে বড় হলে ওর খাদ্যাভ্যাসও আমি বদলে দিই। এখন ব্রাউনি আমাদের মতোই ভাত-মাছ-মাংস সবই খায়। একটা আলাদা প্লেটে আমি ওর জন্য ভাত-মাছ-মাংস মাখিয়ে সামনে ধরে ‘ব্রাউনি’ বলে ডাকলেই দ্রুত ছুটে এসে লেজ নেড়ে প্রথমে আনন্দ প্রকাশ করে, তারপর চেটেপুটে পুরোটাই খেয়ে নেয়। তবে হাড়-মাংস পেলে খুবই খুশি হয়।

কেন প্রিয় : কুকুর এমনিতেই প্রভুভক্ত জীব। আমি স্কুল থেকে বাসায় ঢোকার আগে কলিংবেল টিপলে ব্রাউনি ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। গেট খুলতে দেরি হলে একছুটে আমার মায়ের কাছে যায়। আবার দৌড়ে গেটে আসে। যতক্ষণ গেট কেউ না খোলে ততক্ষণ সে ঘেউ ঘেউ করতেই থাকে। আমি বাসায় প্রবেশ করে ওর সঙ্গে দু-একটা কথা বললে ও আনন্দে লেজ নাড়তে থাকে, কখনো বা মাটিতে হুটোপুটি খেতে থাকে। এ ছাড়া ব্রাউনি বাসায় অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দেখলে অনবরত ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। আমরা ঘুমালেও ব্রাউনি সারা রাত বাসা পাহারা দেয়। একটা খুটখাট শব্দেও সে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। ফলে বাসা থেকে কোনো কিছু হারানোর ভয় আমরা করি না। এসব কারণে ব্রাউনি শুধু আমারই নয়, পরিবারের সবার প্রিয় হয়ে উঠেছে।

উপসংহার : আমার কুকুরছানাটিকে আমি নিজে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে বড় করেছি বলে ওটির প্রতি আমার গভীর মমতা জন্মেছে। ওটিকে পাড়ার কোনো দুষ্টু ছেলে ধরল কি না, কেউ মারল কি না অথবা হারিয়ে গেল কি না্তবাড়ি ফিরে যতক্ষণ ওটিকে না দেখি ততক্ষণ এসব ভাবনা হয়। ব্রাউনি আমার অবসরের সঙ্গী। ওর সঙ্গে আমি বন্ধুর মতো খেলা করি, কথা বলি, বিভিন্ন রকম খাবার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালাই। এককথায় আমি আমার পোষা কুকুরছানা ব্রাউনিকে লালন-পালন করে খুব আনন্দ পাই।          [চলবে]

সর্বশেষ খবর