বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সপ্তম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র

মেহেরুন্নেসা খাতুন, সিনিয়র শিক্ষিকা

সৃজনশীল মডেল টেস্টের উত্তর

খ অংশ : কবিতা

১. ক) ‘সাম্য’ কবিতায় কঠোর কর্মের মাধ্যমে জীবন মহীয়ান হয়।

খ) ‘সংগ্রামে সাহসে প্রজ্ঞা’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে এই তিনটির সম্মিলনে পৃথিবী আলোকিত হয়।

সুফিয়া কামালের ‘সাম্য’ কবিতায় মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনের কথা বলা হয়েছে। এই সম্প্রীতি ও মেলবন্ধন গড়ে ওঠে কর্মের মাধ্যমে। অসীম সাহস, গভীর জ্ঞান, সম্মিলিত সাধনা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষ এই পৃথিবীকে আলোকিত করে নিজের বিজয় ঘোষণা করেছে।

গ) অমিত সাহেবের চরিত্রে ‘সাম্য’ কবিতার বৈসাদৃশ্যের দিকটি হলো তিনি পারস্পরিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী নন।

‘সাম্য’ কবিতায় বলা হয়েছে যেকোনো বড় কাজ কেউ একক প্রচেষ্টায় করতে পারে না। সে জন্য দরকার হয় অনেক মানুষের মিলিত অংশগ্রহণ। পৃথিবীর সব দেশে সব কালে সবাই সমুন্নত হয়েছে ঐক্যব"ভাবে কাজ করার ফলে। অর্থাৎ ঐক্যব" শক্তিতেই পৃথিবীর বহু দেশ উন্নত হয়েছে। এই বিপুল, বিশাল পৃথিবীর প্রসারিত পথে যাত্রীরা কর্মের উদ্দীপনায় এগিয়ে চলেছে সেই অনন্তকাল থেকে। এই মানবজীবন কঠিন কর্মের মধ্য দিয়েই মহীয়ান হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকের অমিত সাহেবের মানসিকতায় ঐক্যব নয়, এককভাবে কাজ করার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। অমিত সাহেব কারও সহযোগিতা ছাড়া একটা পাঠাগার স্থাপন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও এককভাবে সেই বিশাল কর্ম সম্পাদনে তিনি অক্ষম। অমিত সাহেবের চরিত্রের এই দিকটি ‘সাম্য’ কবিতার সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ) ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণি নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার বোধ সৃষ্টি করাই হচ্ছে ‘সাম্য’ কবিতার উদ্দেশ্য, যা উদ্দীপকেরও মূলভাব।

‘সাম্য’ কবিতায় সম্মিলিত শক্তির কথা বলা হয়েছে, যে শক্তি বলে মানুষ অসাধ্য সাধন করে চলেছে। কোনো কাজ কেউ একা করতে পারে না। সে জন্য দরকার হয় অনেক মানুষের মিলিত অংশগ্রহণ। সবাইকে নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে পৃথিবীর বহু দেশ উন্নত হয়েছে। পৃথিবীর অনেক মহৎকাজের পেছনেই ছিল মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। অসীম সাহস, সম্মিলিত সাধনা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মানুষ এই পৃথিবীতে তার বিজয় ঘোষণা করেছে। এ জন্য ধর্ম, বর্ণ, গোত্রশ্রেণিভেদে সব মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

উদ্দীপকের অমিত সাহেবের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পাঠাগার স্থাপনের মতো বিশাল কাজটি তিনি এককভাবে করতে পারছিলেন না। পরে গ্রামের সব শ্রেণির মানুষের সার্বিক সহযোগীতায় যখন পাঠাগারটি স্থাপিত হয়, তখন সবাই পাঠাগার থেকে বই সংগ্রহ করে জ্ঞান আহরণের সুযোগ পায়।

উদ্দীপকের এবং ‘সাম্য’ কবিতার উপর্যুক্ত বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে কোনো মহৎ কর্মের পেছনে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্মিলিত শক্তির দরকার। তাই বলা হয়েছে উদ্দীপকের মূলভাব যেন ‘সাম্য’ কবিতারই প্রতিরূপ।

২। ক) শিশুরা নীল আকাশে রং কুড়িয়ে বেড়ায়।

খ) কবি আহসান হাবীব ‘আলোর পাখি’ বলতে সূর্যকে বুঝিয়েছেন।

কবি আহসান হাবীব তাঁর ‘মেলা’ কবিতায় প্রকৃতি রাজ্যের নানা মেলা যেমন ফুলের মেলা, গাছে গাছে পাখির মেলা, আকাশজুড়ে তারার মেলা, সকালে রঙের মেলা ও সাত সাগরে ঢেউয়ের মেলার কথা বলেছেন। রাতের আকাশে তারকারাজি যে দীপ জ্বেলে দেয়, তেমনি প্রতিদিন সকালে সূর্য যেন আলোর পাখি হয়ে তা সমস্ত প্রকৃতি রাজ্যে ছড়িয়ে দেয়।

গ) বাংলা শিক্ষকের বক্তব্যে ‘মেলা’ কবিতার প্রকৃতি জগতের চিত্রটি ফুটে উঠেছে।

‘মেলা’ কবিতার কবি যে প্রকৃতিকে এনেছেন, তাতে রয়েছে ফুল, পাখি, আকাশ, তারা, সূর্য, সাগর সবই। পৃথিবীর চারদিকে যদি আমরা দৃষ্টি দিই, তবে দেখতে পাই বাগানে নানা রকম ফুলের মেলা, গাছে গাছে পাখির মেলা, রাতের আকাশজুড়ে তারকারাজির মেলা, রোজ সকালে সূর্যের আলোয় নানা রঙের মেলা আর সাত সাগরে অসংখ্য মেলা। এসব নিয়েই যেন প্রকৃতি রাজ্য এক মেলা বসিয়েছে।

এ সম্পর্কে উদ্দীপকের বাংলা শিক্ষক স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে বলেন, একাত্তর সালে দীর্ঘ ৯ মাস যুগের পর আমরা যে বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ড পেয়েছি তার আকাশ-বাতাস মুক্ত, আর ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় এই দেশ। উদ্দীপকের এই দিকটিই ‘মেলা’ কবিতার উপর্যুক্ত বক্তব্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ) প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে ‘মেলা’ কবিতার মূল সুর মানুষের মধ্যে সমতার চেতনা জাগ্রত করার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

‘মেলা’ কবিতায় কবি বলেছেন যে প্রকৃতি জগতের মেলার মতো পৃথিবীর শিশু-কিশোরদের রয়েছে একটা আলাদা জগৎ। এটিও একটি মেলার মতো। আকাশের নীলের মধ্যে যে উদারতা রয়েছে তার সবই পেয়েছে শিশু-কিশোররা। প্রতিদিন আকাশ নিংড়ে যে রোদ ওঠে, সেখান থেকে তারা নেয় জীবনের উত্তাপ, সাত-সাগরের বুক থেকে তারা নেয় ভালোবাসার ঢেউ। এই নবীন প্রাণের আশার আলো আবার তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। কচি-সবুজ ভাই-বোনদের হাসি-খুশির মধ্যে লাখ লাখ সবুজ মনের স্নেহ-প্রীতির প্রকাশ ঘটেছে, দেশ-কালের সীমানা ভেঙে তারা অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে গড়তে চাইছে একটি সুন্দর জগৎ, সাজানো বাগানের মতো সুন্দর পৃথিবী। এ পৃথিবী হবে সব মানুষের জন্য একটা অভিন্ন পৃথিবী।

এ সম্পর্কে উদ্দীপকের প্রধান শিক্ষক মহোদয় বলেন যে আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ, জাতি ও সারা বিশ্বের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা।

উপর্যুক্ত বক্তব্য থেকে তাই সহজেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে পৃথিবীর সব মানুষকে একতাব" করে একটি স্নেহ-ভালোবাসাপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার মধ্যে ‘মেলা’ কবিতার মূল বক্তব্য মানুষে মানুষে সমতা সৃষ্টির কথাই ফুটে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর