সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্র

মুহম্মদ আজিজুল হক আমান

অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্র

সমাস

সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপণ। অল্পকথায় মনোভাব প্রকাশ করতে পারা একটি বিশেষ গুণ। রচনায় সমাসের ব্যবহারের ফলে এ গুণ প্রকাশ পায়। তাছাড়া সমাসের ফলে বাক্য সরস, মধুর এবং অনেক সময় ছন্দময় হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠনের একটি প্রধান উপায় হলো সমাস। অতএব, দুই বা ততোধিক পদযুক্ত হয়ে এক পদ হিসেবে গণ্য হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।

সমাস গঠন : যে সব পদ নিয়ে সমাস তৈরি হয় তাদের মধ্যে অর্থের মিল থাকতে হয়। অর্থের এই বিবেচনায় সমাসে ব্যবহৃত পদ পারস্পরিকভাবে অর্থ সঙ্গতি পূর্ণ হতে হবে। যেমন, ঘি মাখানো ভাত= ঘি ভাত, এই উদাহরণে ঘি মাখানো ভাত কথাটিতে অর্থের দিক থেকে সামঞ্জস্য রয়েছে। অর্থযুক্ত পদ নিয়েই সমাস। যেসব পদের একত্রীকরণের মাধ্যমে সমাস গঠিত হয়, তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ সম্পর্ক থাকা দরকার। কখনো কখনো পদগুলো মিলে একটি পদ হয়ে মূল পদসমূহের অর্থই ব্যক্ত করে। আবার কখনো কখনো ভিন্ন অর্থ প্রকাশিত হয়। তবে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করলেও মূল পদগুলোর সঙ্গে অর্থের সঙ্গতি লক্ষ্য করা যাবে।

সমাসের প্রয়োজনীয়তা : সমাস বহু পদকে একপদে পরিণত করে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

(ক) বাক্য সংক্ষেপণ : সমাস শব্দের অর্থই হলো সংক্ষেপণ। অর্থাৎ সমাস বাক্যের সংক্ষেপণ সাধন করে। সমাসবদ্ধ পদ ব্যবহারে বাক্য সংক্ষিপ্ত হয়। কাজেই বাক্য বা বাক্যাংশের সংক্ষেপণে সমাস বিশেষ প্রয়োজনীয়। যেমন- মাস্টার সাহেবের ঘরে আশ্রিত জামাই বাষ্প দ্বারা চালিত যানে ঢাকা গেলেন। এ বৃহৎ বাক্যটিকে সমাস সাধিত পদ ব্যবহার করে আমরা বলতে পারি, মাস্টার সাহেবের ঘর জামাই বাষ্পযানে ঢাকা গেলেন। অনুরূপ, যার পিতা-মাতা নেই= পিতৃমাতৃহীন।

(খ) নতুন শব্দ গঠন : নতুন নতুন শব্দ গঠনে ভাষার প্রকাশ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সমাস সে উদ্দেশ্য সাধিত শব্দ। যেমন- জায়া ও পতি= এ দুটো শব্দের মিলনে সমাস সাধিত শব্দ দম্পতি।

(গ) শব্দের শ্রুতিমাধুর্য বর্ধন : সমাস শব্দের শ্রুতিমাধুর্য বৃদ্ধি করে। এতে বক্তব্য সুন্দর করে পেশ করার সুবিধা হয়। বাংলা ভাষার সমাস মনিহার স্বরূপ। মনিহার ভাষাকে শ্রুতিমধুর প্রাঞ্জল ও ছন্দময় করে তোলে। যেমন- ঢেঁকি দ্বারা ছাটা চাল বললে উক্তিটি শ্রুতিমধুর হয় না, সে ক্ষেত্রে ঢেঁকি ছাটা চাল বললে সাধিত শব্দটি শুনতে খুব ভালো শোনায়।

(ঘ) পরিভাষা গঠন : পরিভাষা গঠনে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন- ‘চার বাহু দ্বারা রচিত ক্ষেত্র’ না বলে যদি ‘চতুর্ভুজ’ বলা হয়, তাতে নতুন পরিভাষাও তৈরি হয়।

(ঙ) সহচর শব্দ গঠন : সহচর শব্দ গঠনেও সমাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। যেমন- পুঁথি ও পুস্তক = পুঁথিপুস্তক।

(চ) বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ গঠন : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিশেষ করে বহুব্রীহি সমাস নিষ্পন্ন পদ সর্বদা বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- পীত অম্বর যাহার = পীতাম্বর (কৃষ্ণ) (বিশেষণ)। না অতিদীর্ঘ = নাতিদীর্ঘ (বিশেষণ)। হাতে পরিবার ঘড়ি = হাতঘড়ি (বিশেষ্য)

(ছ) তুলনাকরণ : দুপদের মধ্যে তুলনা বোঝাতেও সমাস ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- বিষাদরূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু।

(ঞ) শব্দ গঠন : সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- সোনা ও রূপা = সোনা-রূপা।

(ঝ) ভাষা শক্তিশালীকরণ : সমাস ব্যবহারে ভাষা শক্তিশালী হয়। শালীন চমৎকার শব্দ সৃষ্টিতে সমাসের ভূমিকা অনন্য।

সুতরাং বাক্যকে শ্রুতিমধুর, গাঢ়বদ্ধ, গৌষ্ঠবময় ও ঐশ্বর্যমন্ডিত করে মনোভাব প্রকাশের নিমিত্তে সমাসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

সর্বশেষ খবর