১৭ জুলাই, ২০১৮ ১৬:১৯

বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর পদে তিন ভাই-বোন

একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিলর পদে তিন ভাই-বোন

বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুনা। এবং পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তার ছোট ভাই এবং ১১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জিয়া।

সাধারণত সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর-এই তিন পদে। আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একই পরিবারের তিন সহোদর ভাই-বোন নির্বাচন করছেন এই তিন পদে। বড় ভাই বশির আহম্মেদ ঝুনু মেয়র প্রার্থী। মেজ বোন আয়শা তৌহিদ লুনা সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ছোট ভাই মারুফ আহম্মেদ জিয়া সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী। এরই মধ্যে লুনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে, ২ বার সংরক্ষিত কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। তৃতীয়বার সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার পর অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর একজনের মনোনয়ন বাতিল এবং আরেকজনের প্রত্যাহারের পর তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিন ভাই-বোনের রাজনৈতিক মতাদর্শ  আবার ভিন্ন। বড় ভাই ঝুনু জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা শাখার সভাপতি। মেজ বোন লুনা মহানগর বিএনপি’র মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। ছোট ভাই জিয়া মহানগর যুবলীগের সদস্য। তিনটি বড় রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সংগঠক একই পরিবারের তিন ভাই-বোন আবার মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের প্রতিদ্বন্দ্বী। অর্থাৎ একের মধ্যে তিন। 

ঝুনু জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) মেয়র প্রার্থী। লুনা ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর ছোট ভাই জিয়া ১১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী।

মেয়র প্রার্থী বড় ভাই ঝুনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৯ বছর ধরে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছেন। বরিশালে জাতীয় পার্টির তৃনমূল নেতাকর্মীদের দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচিত হতে পারলে তিনি পার্সেন্টেজমুক্ত সিটি করপোরেশন গড়ার পাশাপাশি দুর্নীতি ছুঁড়ে ফেলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত এবং ক্যাথলিক চার্জের ধর্ম যাজকদের সিটি ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর আয়শা তৌহিদ লুনা বলেন, তিনি এর আগে দুইবার সংরক্ষিত কাউন্সিলর ছিলেন। গতবার তিনি ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৮ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। জনগনের দাবীর প্রেক্ষিতে এবার তিনি আবার সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন। এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল এবং আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। ছোট ভাই জিয়া সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে পারলে দুই ভাই-বোন সমন্বয়ের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নসহ ওয়ার্ডবাসীর সেবা করার কথা বলেন লুনা। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বড় ভাই ঝুনুর পক্ষে ভোট চাইছেন না দাবী করে কাউন্সিলর প্রার্থী ছোট ভাই জিয়ার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান তিনি। 

 

                                           মেয়র পদে বশির আহম্মেদ ঝুনু গণসংযোগ করছেন।

ছোট ভাই ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মারুফ আহম্মেদ জিয়া বলেন, তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাদের পরিবারের সকলেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার কোন ইচ্ছে না থাকলেও এলাকার উন্নয়নে বিদায়ী কাউন্সিলরের ব্যর্থতার কারণে জনগনের চাপে এবার কাউন্সিলর প্রার্থী হতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে জনগন ভোট দিতে পারলে নির্বাচিত হওয়ার আশা করেন তিনি। 

একই পরিবারের তিন ভাই-বোনের মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বরিশাল প্রেসক্লাব এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম ইকবাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার রাখে। তিন ভাইবোনের মধ্যে ইতোমধ্যে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। অপর দুই জনের মধ্যে জনগণ যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারে। এটা ভোটারদের বিষয়। বিষয়টি নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রবীণ আইনজীবী এসএম ইকবাল। 

এদিকে শুধু তিন ভাই বোনই নয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংরক্ষিত কাউন্সিলর লুনার স্বামী তৌহিদুল ইসলামও একজন রাজনীতিক এবং জনপ্রতিনিধি। তৌহিদ পটুয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয়বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। একই সাথে তিনি পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি। 


বিডি-প্রতিদিন/১৭ জুলাই, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর