বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যায়

আলাউদ্দীন মাজিদ

বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যায়

বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ দর্শক। দিনের পর দিন বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা বেড়েই চলছে। আর তাই টিভি চ্যানেলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দর্শক। আগে শুধু অভিযোগ ছিল টিভি অনুষ্ঠান নিয়ে। এখন বিজ্ঞাপনের অত্যাচারে দর্শক অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন না। বিদেশি চ্যানেলে সবাই ঝুঁকছেন। আগে দর্শক বিদেশি অনুষ্ঠান দেখে দেশি খবর দেখতেন। কিন্তু এখন খবরও দেখা যাচ্ছে না। বিজ্ঞাপনের চাপে দর্শক খবর দেখায়ও মনোযোগ রাখতে পারছেন না। সব মিলিয়ে দর্শক এখন দেশীয় টিভি চ্যানেল নিয়ে খুবই বিরক্ত। এ বিষয়ে সাধারণ দর্শকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গ্রিন হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোলাম আকবর মহিউদ্দীন বলেন, বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় অনুষ্ঠান দেখা ছেড়েই দিয়েছি। তবে নিয়মিত খবর দেখতাম। এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এখন এখানেও রয়েছে বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা। কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম বলেন, টিভিতে লাইভ সংগীতানুষ্ঠান সম্প্রচার হয়। এক সময় এগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিল। কারণ দর্শক-শ্রোতারা ফোনকলের মাধ্যম সরাসরি এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। কিন্তু এখন বিজ্ঞাপনের আধিক্যের কারণে অনুষ্ঠান শেষ হতে এত বেশি সময় লাগে যে দর্শক শুধু লাইভ নয়, খবরসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ব্যাংকার, শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও বিজ্ঞাপন যন্ত্রণায় অস্থির বলে বিরূপ মত প্রকাশ করেছেন।

প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত বলেন, ‘আগে বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা বলা হতো। কিন্তু এখন এটা রোগে পরিণত হয়েছে। আর দর্শকের কাছে বিজ্ঞাপন বিষয়টি এখন আতঙ্কের নাম। টিভিই দেখা যাচ্ছে না। দর্শক তো আর বসে থাকবে না, তারা চলে যাচ্ছেন বিদেশি চ্যানেলে। আবার খুব অবাক লাগে, চ্যানেল ঘুরালেই দেখি শুধু বিজ্ঞাপন চলছে। মানে বিজ্ঞাপন প্রচার করাই যেন চ্যানেলগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে। আর যারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তাদের রুচিবোধ নিয়েও প্রশ্ন জাগছে। তারা কি বুঝতে পারছেন, তাদের বিজ্ঞাপন দেখে দর্শক বিরক্ত হচ্ছে। এতে পণ্যের প্রচার নয়, অপপ্রচারই বেশি হচ্ছে। এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান মুন্নী সাহা বলেন, টিভি অনুষ্ঠানে বিশেষ করে সংবাদে বিজ্ঞাপন আধিক্যের বিষয়টি আমাকেও ভাবায়। আমার অবস্থান থেকে বলতে গেলে বলব বিজ্ঞাপন না থাকলে টিভি চ্যানেলগুলো চলবে কী করে। আর একজন দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হয়, ‘৪ মিনিট অনুষ্ঠান আর ৮ মিনিট বিজ্ঞাপন’-এই অবস্থায় ধৈর্য থাকবে কী করে অনুষ্ঠান দেখার। সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রেও একই কথা। এটি আমাদের চ্যানেলের জনপ্রিয়তা হারানোর প্রধান কারণ। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলোই পারে সমাধান দিতে। তারা বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় কমিয়ে রেট বাড়ালে অবস্থার উন্নতি হবে। যা ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর ক্ষেত্রে হচ্ছে। ফলে তাদের চ্যানেলগুলো সহজেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যত ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণ হোক না কেন অবস্থার উন্নতি হবে না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে অনুষ্ঠানের কোয়ালিটির মূল্যায়ন করে না প্রায় বিজ্ঞাপন এজেন্সি। কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। না হলে আমিতাভ রেজা, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বা হাসান আবিদুর রেজার মতো ক্রিয়েটিভ নির্মাতারা বরাবরই হতাশ হবেন। উন্নত মানের অনুষ্ঠান করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ভালো অনুষ্ঠান প্রচার, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় গিয়ে দেশ এবং মানুষের বিনোদন দেওয়া ও কল্যাণ করার জন্য টিভি চ্যানেলগুলোকে সরকার লাইসেন্স দেয়। কিন্তু বিজ্ঞাপন এজেন্সির এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের কারণে চ্যানেলগুলো তাদের উদ্দেশ্য সব সময় বাস্তবায়ন করতে পারে না। আরও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এসব এজেন্সি সব চ্যানেলকে সমহারে বিজ্ঞাপনের রেট দেয় না। তা ছাড়া দেশীয় চ্যানেলের চেয়ে ভারতের চ্যানেলে আমাদের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে রেট অনেক বেশি দেয়। অনেক সময় তারা ভারতীয় চ্যানেলকে উচ্চ রেটে বিজ্ঞাপন দিলেও দেশীয় চ্যানেলের জন্য নাকি তাদের কোনো ফান্ড থাকে না। যা সত্যিই দুঃখজনক। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে টিআরপির ক্ষেত্রেও কোয়ালিটিকে মূল্য দেওয়া হয় না। এভাবে চলতে থাকলে টিভি চ্যানেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই আমি শঙ্কিত। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে একসঙ্গে বসে এসব সমস্যার সমাধান করতেই হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর