শনিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বহুদূরের পথে পা...

আলাউদ্দীন মাজিদ

বহুদূরের পথে পা...

ববি

‘মেয়েটা চপলা-চঞ্চলা। দেখুন তো বড় পর্দায় কেমন জড়তা ছাড়াই হেঁটে বেড়াচ্ছে। মুখটাও বেশ মায়াবী। এ মেয়ে দেখছি পর্দায় আগুন লাগিয়েই ছাড়বে।’

মাহির প্রথম ছবি ‘ভালোবাসার রঙ’ দেখতে গিয়ে মুগ্ধ নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুর কথা আসলেও সত্যি হলো। প্রথম ছবিতেই বাজিমাৎ করলেন মাহিয়া মাহি। ছবির নির্মাতা ছিলেন শাহীন-সুমন। তাদের হাতে নতুন এই নায়িকাকে তুলে দেয় নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। ২০১১ সালে জাজের ‘ভালোবাসার রঙ’ দিয়ে দর্শক মন রাঙিয়ে দিলেন এই চপলা-চঞ্চলা হরিণী মাহি। তারপর তো শুধুই ভালোবাসা আর সাফল্যের অবারিত পথে হেঁটে যাওয়া মাহির। তার এই পথচলা থামাবে এমন সাধ্য কার। কারণ অভিনয়ের স্বর আর ব্যঞ্জনবর্ণ তার ঠোঁটস্থ। মাহির সহজ-সরল চলার পথে যদি আর কারও নাম বলতে হয় তাহলে সাত-পাঁচ না ভেবেই বলা হয়ে যায় ববির নাম।

পর্দা যাত্রার বয়স কষলে মাহির চেয়ে  একবছর এগিয়ে আছেন ববি।

২০১০ সালে মুক্তি পায় ববির প্রথম ছবি ‘খোঁজ- দ্য সার্চ’। পাশ্চাত্য আর বাঙালিয়ানার মিশেলে তার অভিনয় যেন নতুন মাত্রায় প্রাণযুক্ত। দর্শক মুগ্ধ। এখনো দর্শক মন জয় করে চলেছেন এই দুই হূদয়কাড়া নায়িকা।

 দর্শক আর নির্মাতা বলছেন ঢালিউডে এখন এই দুই নায়িকাই ভরসা। অপু বিশ্বাসের পাশাপাশি তারাই এখন ঢালিউডের রুপালি  পর্দার ঝলমলে আলো। তাদের সঙ্গে বা পরে অনেকেই চলচ্চিত্রে এসেছেন। ঢাক-ঢোলও কম পেটাননি। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’ অথবা ‘খালি কলস বাজে বেশি’। ঢাক-ঢোল পেটানোদের বেলায় তাই হয়েছে। কারণ অভিনয় নয় তারা চলচ্চিত্রে এসেছেন অন্য কিছু পেতে। তাই তাদের অস্তিত্ব ক্ষণভঙ্গুর— বলছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। অপুর পর ঢালিউডের নায়িকা দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই টিকে আছেন মাহি আর ববি। চলচ্চিত্র দুনিয়ার মানুষ বলছেন সত্যি সত্যি অভিনয় করার স্বপ্ন দুচোখে মেখে এসেছেন বলে পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়েছেন এই দুই স্বপ্নীল নায়িকা।

মাহি আর ববির পর্দা অভিষেকের আগের দৃশ্যপটে ফিরে গেলে দেখা যায় ২০০০ সালের শুরুতে যখন মৌসুমী, শাবনূর, পপি আর পূর্ণিমা ব্যক্তিগত কারণে একটু একটু করে বড় পর্দা থেকে দূরে সরতে শুরু করেছেন তখন ঢালিউডে দেখা দেয় প্রবল নায়িকা সংকট। দর্শক হতাশ।

নির্মাতারা হাপিত্যেশ করছেন। এমন খরায় ২০০৬ সালে ঝলমলে আলো হয়ে বড় পর্দায় এলেন মিষ্টি মেয়ে অপু বিশ্বাস। জয়ের পর জয় দিয়ে একাই বড় পর্দায় হেঁটে চলেছেন তিনি। একজনের পক্ষে কী বিশাল ঢালিউডের ভার একা বহন করা সম্ভব? শিডিউল পেতে নির্মাতারা গলদঘর্ম হচ্ছেন। দিবানিশি অবিরত ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে গিয়ে ক্লান্তির ঘামে নেয়ে-ধুয়ে একাকার অপু। শিল্পের অবস্থা যখন এমনই নাজুক তখনই অপুর উত্তরসূরি হয়ে ঢালিউডে আগমন মাহি আর ববির। নিজ গুণে এখনো টিকে আছেন তারা।

মাহির মধ্যে অনেক নির্মাতা আবার শাবনূরের ছায়া দেখতে পান বলে জানান। সেটা কেমন? এ প্রশ্নে বেশ কজন নির্মাতা বলেন, সংলাপ প্রক্ষেপণের ধরন, অভিনয়ের ধারা আর কাজের ক্ষেত্রে শাবনূরের সঙ্গে বেশ মিল আছে মাহির। যেমন ধরুন তার বিপরীতে নায়ক কে থাকছে,এ ব্যাপারে মাহি কিন্তু খুবই কনসাস আর চুজি। নব্বই দশকে নিজের বিপরীতে নায়ক নির্বাচনের বিষয়টি নিজেই তদারকি করতেন শাবনূর। এ জন্য শাবনূরের মতো মাহিকেও বেশ পাওয়ারফুল অভিনেত্রী বলছেন নির্মাতারা।

অন্যদিকে ববির মধ্যেও আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। যেমন গল্প,নির্মাতা আর কো আর্টিস্ট পছন্দ না হলে কাজ করেন না এই অভিনেত্রী।

বেছে কাজ করেন বলে একদিকে তার জনপ্রিয়তার পারদ যেমন ঊর্ধ্বমুখী তেমনি রয়েছে অল্প হলেও মানসম্মত ছবি। ববির কথায় ‘হালে গা ভাসিয়ে লাভ কী? না দর্শকের মনে জায়গা হবে, না এই জগতে নিজের অস্তিত্ব থাকবে।’ অকাট্য যুক্তির পথে হাঁটছেন বলেই এখনো জনপ্রিয়তায় ছেদ পড়েনি ববির। নির্মাতারা এখনো এ দুই অভিনেত্রীকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলেছেন বড় পর্দায়। একদিকে দর্শক আরেকদিকে নির্মাতাদের ভরসার প্রতীক হয়ে আছেন মাহি আর ববি। এগিয়ে যাবেন বহুদূর...।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর