সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আমি পেশাদার অভিনেতা হতে চেয়েছিলাম

আমি পেশাদার অভিনেতা হতে চেয়েছিলাম

একাধারে মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের তুখোর অভিনেতা, চিত্রশিল্পী এবং বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা আফজাল হোসেন। দীর্ঘদিন পর তিনি আবার চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। সম্প্রতি দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির শুটিংয়েও তিনি অংশ নিয়েছেন। এই ছবিতে তিনি পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে অভিনয় করছেন। সবমিলিয়ে আজ তার ইন্টারভিউ। তার সঙ্গে কথা বলেছেন— আলী আফতাব

 

 

অনেকটা সময় অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। আবার হঠাত্ অভিনয় শুরু করেছেন। কেমন লাগছে?

আমি একটা সময় শুধু অভিনয় নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। মানে পেশাদার অভিনেতা হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশে সে পরিস্থিতি নেই। তাই অন্য কাজে ব্যস্ততা বাড়িয়েছি। কিন্তু আমারটা আমাকে সব সময়ই টানে। আর অনেকটা সময় পর অভিনয় করছি অনেক ভালো লাগছে। নিঃসন্দেহে ভালো লাগার ব্যাপার আছে।

কিন্তু হঠাত্ করে চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে কেন?

অনেকটা অনুরোদের ঢেঁকুর গিলতে গিয়েই এই ছবিতে কাজ করা। ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে যে চরিত্রের কথা বলা হচ্ছে, এটার জন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গা ও দায়িত্বশীল মহল থেকে আমার কাছে অনুরোধ এসেছে। মর্যাদাপূর্ণ চরিত্রকে মর্যাদার জায়গায় দেখার জন্য নির্মাতা-প্রযোজক বা ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সবাই চাইছেন যেন আমি চরিত্রটা করি। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও মনে হয়েছে, আচ্ছা ঠিক আছে, করি তাহলে। আমি শেষ যে ছবিতে শুটিং করেছি, সেটি আফসানা মিমির রান। অবশ্য ছবিটির কাজ এখন থেমে আছে।

বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা কেমন বলে আপনার মনে হয়?

শুরু চলচ্চিত্রের কথা বলব কেন? আমার মনে হয় এখন মিডিয়ার কোনো কিছুর অবস্থাই তেমন ভোলো না।  চলচ্চিত্র, গান, নাটক কোনো কিছুর অবস্থাই কেমন যেন খাপছাড়া হয়ে গেছে। সেখান থেকে উত্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে। যাদের উদ্যোগ আর তাড়না আছে, তারাই চেষ্টা করছেন। আবার সামগ্রিকভাবে যারা চেষ্টা করছেন, তাদের পেছনে যে সবাই দাঁড়ায়, সেটার উদাহরণও আমার কাছে নেই।

একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করতে যাচ্ছেন?

সবাই জানে আমি অভিনয়ে নিয়মিত না । কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কথা আমি কোনো সময় ফেলতে পারি না। তার মধ্যে নঈম ইমতিয়াজ একজন। এ জন্য আমি টুকটাক নাটকে কাজ করি। বাক্সবন্দী ধারাবাহিক নাটকের শেষ পর্বে একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আমি কাজ করছি।

চিত্রশিল্পী হওয়ার ইচ্ছেটা হলো কী করে?

আমার বয়স যখন ১১ কী ১২, তখন থেকেই ছবি আঁকি। আমার বাবা পেশায় ছিলেন চিকিত্সক। বাবার একটা শখ ছিল। হাতের কাছে কাগজ-কলম থাকলে কথা বলতেন আর সেই কাগজে ছবি আঁকতেন। পরে আমি মনোযোগ দিয়ে তার আঁকা ছবিগুলো দেখতাম। নিজে নিজে সেগুলো আঁকতে চেষ্টা করতাম। কিছু একটা আঁকতে পারলেই সবাই খুব প্রশংসা করত। বেশ ভালো লাগত সে সময়। এভাবেই আঁকার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল।

তার মানে পরিবারের সম্মতি নিয়েই এই জগতে প্রবেশ করেছেন?

প্রথম অবস্তায় আমার পরিবারের কোনো সম্মতিই ছিল না এতে। আমি যখন মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোলাম। এরপর ভাবলাম আর্ট কলেজে ভর্তি হব। কিন্তু পরিবার থেকে সম্মতি দেয়নি। তবু আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম, ছবিই আঁকব। ছবি আঁকব বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলাম। তারপর মা-বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন, আমি যা চাইছি, তা-ই হবে। ভর্তি হলাম আর্ট কলেজে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনোর পর নাটক-থিয়েটার করা শুরু করলাম। অভিনয়েই অনেকটা সময় পার করেছি। ছবি আঁকায় আর তেমন মনোযোগ দিতে পারিনি। এরপর অনেক দিন আর তেমন করে আঁকা হয়ে ওঠেনি।

চিত্রশিল্পী হওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়েছেন। কিন্তু একটা সময় আর তার নিয়মিত করতে পারেননি। কষ্ট হয় না।

এই কষ্টবোধটা আমাকে সব সময় তাড়া করে বেড়িয়েছে।  আক্ষেপ তৈরি হলো, যা একসময় ভালোবেসে করতে চেয়েছি, যার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছি, তার সঙ্গে আর যুক্ত নেই আমি। অনেক দূরে সরে গেছি। দীর্ঘ বিরতির পর আবার শুরু করাটা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু আঁকার নেশা মনের মধ্যে ছিল বেশ ভালোভাবেই। তাই আবারও শুরু করেছি।

ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কাজে যেমন পূর্ণ সময় দিতে হয়, সেটা দিতে পারি না। তবু চেষ্টা করছি নিয়মিত ছবি আঁকতে।

সর্বশেষ খবর