মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেন্সর নয়, ফিল্ম গ্রেডেশন বোর্ড দাবি

চলচ্চিত্রকারদের দীর্ঘদিনের দাবি— ‘ফিল্ম সেন্সর বোর্ড নয়’, ‘ফিল্ম গ্রেডেশন বোর্ড’ চাই। সরকার একাধিকবার এই দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ব্যাপারে সিনিয়র চলচ্চিত্রকাররা আবারও এই দাবি জানিয়েছেন। দাবির পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

সাইফুল ইসলাম চৌধুরী

[সভাপতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি]

বিশ্বের কোথাও চলচ্চিত্রের সনদপত্র প্রদানের ক্ষেত্রে সেন্সর বোর্ড নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আছে গ্রেডেশন বোর্ড। এটি সময় উপযোগী ব্যবস্থা। আমাদের দেশে এখনো সেই মান্ধাতার আমলের সেন্সর বোর্ড রয়ে গেছে। স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্বের সব ধরনের ছবি দেখছে দর্শক। এ অবস্থায় কেন তারা সেন্সর করা মানে চাপিয়ে দেওয়া ছবি দেখবে। চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধস নামার এটিও একটি কারণ। নিয়ম-নীতি মেনে আধুনিক ব্যবস্থায় ছাড়পত্র দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

আরেকটি বিষয় হলো বর্তমানে সব দেশে ছবি সেন্সরের আগে ওয়েব সাইট ও ইউটিউবে ছবির গান, ট্রিজার চলে আসছে। আমাদের এখানে এখনো সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার আগে পোস্টার, ফটোসেট, গান, ট্রেইলর প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্র লাভের পর প্রচারের জন্য খুব অল্প সময় পায়। ব্যাপক প্রচারের সুবিধার্থে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক।

 

সুচন্দা

[অভিনেত্রী, প্রযোজক, পরিচালক]

আমিও ছবি ছাড়ের ক্ষেত্রে সময় উপযোগী নীতিমালা চাই। সেন্সর নয়, গ্রেডেশন পদ্ধতির দাবি করছি। বয়সভেদে দর্শকের জন্য নানা গ্রেডের ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এ নিয়ম সব দেশে চলছে। এখানে কেন সেন্সর নামের অসম্মানজনক ও পুরনো পদ্ধতি এখনো চালু আছে তা  বুঝতে পারছি না।

আমার কথা হলো রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম, জাতির জন্য ক্ষতিকর হয় এমন বিষয় পরিহার করে এবং যাতে কোনো অশ্লীল ব্যাপার না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ছবির ছাড়পত্র দেওয়া দরকার। স্যাটেলাইট ও ডিভিডির মাধ্যমে আমাদের দর্শক পৃথিবীর সব ধরনের ছবি দেখছে। তাহলে সেন্সরের নামে কেন আমাদের ছবিকে কাটছাঁট করা হবে। এই নিয়ম অবিলম্বে বাতিল করা হোক।

চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে উদ্বুদ্ধ করা যায়। তাই আধুনিকতার মাধ্যমে এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করা  হোক। যেন আমরা আমাদের ছবি নিয়ে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে পারি।

 

সোহেল রানা

[অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক]

সেন্সর শব্দটিই অসম্মানজনক। কেন এখনো সেন্সরের মাধ্যমে ছবি ছাড় করাতে হবে। এই পদ্ধতি মানে চলচ্চিত্রকারদের অসম্মান করা। পৃথিবীর কোথাও এই নিয়ম নেই। এখন উন্মুক্ত বিশ্ব ও খোলা আকাশের যুগ। ঘরে বসে দর্শক বিশ্বের সব ধরনের ছবি দেখছে। গ্রেডিং পদ্ধতিতে ক্যাটাগরি ভাগ করে বাইরের দেশগুলো ছাড়পত্র দিচ্ছে। আর এখানে এখনো  সেন্সরের কারণে আধুনিকতার পথে এগোনো যাচ্ছে না।

রোমান্টিক দৃশ্যে একটু বেশি ক্লোজআপ শর্ট, ফাইটিংয়ের ক্ষেত্রে অ্যাকশন সামান্য বেশি হলেই তাতে কাঁচি চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গল্পের প্রয়োজনে যদি সঠিকভাবে দৃশ্য উপস্থাপন করা না যায় তাহলে দর্শক সেই ছবি দেখবে কেন। সেন্সর বোর্ডের পরিবর্তে গ্রেডেশন বোর্ডের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। গ্রেডেশন পদ্ধতি দাবির অর্থ এই নয় যে আমরা যা খুশি দেখাতে চাচ্ছি। আধুনিক নিয়মের পথে হেঁটে আমাদের ছবিকে বিশ্বমানে উন্নীত করতেই এই দাবি করে আসছি।

 

কাজী হায়াৎ

[চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা]

বহুদিন আগে চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে মিছিল করে সেন্সর বোর্ডের সামনে গিয়েছিলাম। আমাদের দাবি ছিল সেন্সর নয়, গ্রেডেশন অথবা অন্য যে কোনো নাম চাই। সেন্সর বোর্ডের পুরনো নিয়ম-নীতির পরিবর্তন চাই। সেন্সর শব্দটি কোনো স্বাধীন দেশের নাগরিকের কাম্য নয়। প্রাচীন গ্রিসে ম্যাজিস্ট্রেসি বা শাসক নিয়োগ করা হতো। তাদের সেন্সর বলা হতো। সেন্সর মানে শাসন করা। ইংরেজদের দখলদারিত্বের পর তারা মিডিয়াসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরকে শাসন করতে সেন্সরশিপ প্রথা আরোপ করেছিল। এই সেন্সর প্রথা চলচ্চিত্রের ওপর প্রয়োগ করা মানে চলচ্চিত্রকারদের অসম্মান করা।

বারবার সরকারকে বলেছি, নীতিমালা পরিবর্তন না করলেও সেন্সর বোর্ড নামটি বদলে চলচ্চিত্র সনদ বিভাগ বা অন্য যে কোনো নাম দিয়ে সেন্সর শব্দের মতো অসম্মানজনক ব্যবস্থা থেকে চলচ্চিত্রকারদের মুক্তি দেওয়া হোক। কেন জানি না আমাদের এই দাবি এখনো উপেক্ষিত হয়ে আছে।

সর্বশেষ খবর