সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিনেমা হল নয়, সিনেপ্লেক্স দাবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমা হল নয়, সিনেপ্লেক্স দাবি

সিনেমা হল নয়, সিনেপ্লেক্স দাবি চলচ্চিত্রকার এবং দর্শকের। তাদের কথায় বিশ্বের সব জায়গাতেই এখন সিনেপ্লেক্স কালচার চলছে। যানজটসহ নানা কারণে সিনেমা হলে যেতে এখন আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না দর্শক। পরিবেশ এবং কারিগরি মান নিম্নগামী হওয়ায় নির্মাতারও ছবি প্রদর্শন করতে চায় না সিনেমা হলে। ফলে সিনেপ্লেক্সের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। শুধু ঢাকায় কয়েকটি সিনেপ্লেক্স থাকলেও তাতে দেশীয় ছবি কম প্রদর্শন হয়। এ কারণে সারা দেশে সিনেপ্লেক্স চায় নির্মাতা-দর্শক।

সরকার সম্প্রতি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ ও সিনেমা হল সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও এর কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানায় চলচ্চিত্রকাররা।

এদিকে কোনোভাবেই কাটছে না সিনেমা হলের দৈন্যদশা। পরিবেশের অভাবে সবশ্রেণির দর্শক ছবি দেখতে যেতে পারছে না। সিনেমা হলে।

প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা এবং প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের বাজার মন্দ হওয়ার অন্যতম কারণ প্রেক্ষাগৃহের মন্দ পরিবেশ। অবশ্য এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পাইরেসি, নেট ও ইউটিউবে মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে ছবি প্রাপ্তি, নকল গল্প, ভালো ছবির অভাব এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলে অবাধে ছবি প্রদর্শন।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মানসম্মত ছবি নির্মাণ হয় না। তাই সিনেমা হল দর্শকশূন্য। এ অবস্থায় এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কতটা সম্ভব তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, এমনিতেই ছবির অভাবে ব্যবসা চলে না তার ওপর সিনেপ্লেক্স নির্মাণের মতো অর্থ কোথায়। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, প্রেক্ষাগৃহের মন্দ পরিবেশ ছবি ব্যবসা সফল না হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলেও মানসম্মত ছবি না পাওয়ার কারণেই মূলত এই ব্যবসা শংকার মুখে পড়েছে। সিনেমা হল সংস্কার করার মতো অর্থ আয় না হলে তা কীভাবে সম্ভব।  তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পরিবেশ ও ভালো ছবির অভাবে দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহ চালাতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন মালিকরা। এই কারণে ঢাকায় যমুনা, ডায়না ও মেঘনা সিনেমাসহ অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া দেশের আরও দুই ডজন সিনেমা     হল প্রায় এক বছরে বন্ধ হয়েছে। এখন দেশে রয়েছে মাত্র ৩০০টিরও কম সিনেমা হল।

মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, হাতে গোনা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া বাকিগুলোতে পরিবেশের অভাবে দর্শক যেতে পারে না। আসলে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নির্মাতারা ভালো ছবি দিতে পারে না বলে দর্শক আসে না। তাই লোকসানি প্রতিষ্ঠান সংস্কারে টাকা আসবে কোথা থেকে। সরকার প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার ও নির্মাণের জন্য অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।

আনন্দ সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক শামসুল ইসলাম বলেন, ভালো ছবির অভাবে ব্যবসা মন্দ। তাই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে মধ্য ও উচ্চবিত্তের দর্শক এখানে পরিবার নিয়ে আসতে চায় না।  দেশের অন্য প্রেক্ষাগৃহেরও একই চিত্র।

একটি সূত্র জানায় দেশের ৮০ ভাগ সিনেমা হল চালায় কর্মচারীরা। তাদেরকে হলগুলো ভাড়া দিয়ে দিয়েছে মালিকরা। তারাও হল চালাতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছে। আয় নেই। কিন্ত প্রতি মাসে মেনটেইনেন্স খরচ, বেতন, বিদ্যুত্ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অনেকে দর্শক টানতে কাটপিস জাতীয় এবং অশ্লীল ছবি প্রদর্শন করছে। অনেক সিনেমা হলে আবার পতিতা দিয়ে দর্শক আনার অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশেই এই অবক্ষয় চলছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সবই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে বলেও অভিযোগে জানা গেছে।

এদিকে মাল্টিপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহের দাবি চলচ্চিত্রকার ও দর্শকের দীর্ঘদিনের। কিন্তু দেশে মাত্র তিনটি সিনেপ্লেক্স রয়েছে এবং সবকটি রাজধানীতে। এগুলো হলো বসুন্ধরা শপিং মলে স্টার সিনেপ্লেক্স, শ্যামলী ও যমুনা শপিং মলে ব্লক বাস্টার সিনেমাস। চলচ্চিত্রকার ও দর্শকের কথায়, এখন সিনেপ্লেক্সের যুগ। কিন্তু আমাদের দেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। এই অবস্থায় চলচ্চিত্রের ব্যবসা ভালো হবে কীভাবে।

সরকার বিষয়টি জরুরিভাবে গ্রহণ করলে কিছুটা হলেও দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরত বলে জানায় চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমান, সোহানুর রহমান সোহান, ছটকু আহমেদ, মতিন রহমান, বজলুর রাশেদ প্রমুখরা। তবে প্রদর্শকদের কথায় শুধু সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করে কী হবে। মানসম্মত ছবি কোথায়।

ইংরেজি  ছবি চালিয়ে আর কত দর্শক টানার চেষ্টা করব। আগে চলচ্চিত্রকারদের ভালো ছবি দিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রদর্শক বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভালো ছবিও দিতে পারছে না আবার বিদেশি ছবিও আনতে দিচ্ছে না। এই অবস্থায় সিনেমা হল মালিকরা বাঁচবে কীভাবে। তাই গরু কেনার আগে গোয়াল ঘর মানে ভালো ছবি নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে সব উদ্যোগই ভেস্তে যাবে।

সর্বশেষ খবর