শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মঞ্চবিমুখ তরুণ শিল্পীরা

শোবিজ প্রতিবেদক

মঞ্চবিমুখ তরুণ শিল্পীরা

বাংলাদেশের মঞ্চ নাটককে বলা হয় ‘অভিনয় শিক্ষার আঁতুড়ঘর’। কিন্তু সেই মঞ্চ নাটক থেকেই দূরে থাকছেন তরুণ অভিনয়শিল্পীরা। তারা পুরোপুরিই মঞ্চবিমুখ। বরং টেলিভিশনপ্রীতি তাদের প্রচণ্ড। আগে টেলিভিশনে অভিনয়ের ক্ষেত্রে মঞ্চ-কর্মীদের বেশ প্রাধান্য ছিল। বাংলাদেশের সব নামকরা অভিনয়শিল্পীই মঞ্চ থেকে এসেছেন। তাই কেউ অভিনয় করতে চাইলে প্রথমে মঞ্চে কাজ করতেন। ভালো অভিনয় করে নজর কাড়লে টেলিভিশন নাটকে সুযোগ পেতেন। কিন্তু এখন আর সেই প্রক্রিয়া নেই। কেউ চাইলে সরাসরি টেলিভিশন নাটকে কাজ করতে পারছেন। ফলে মঞ্চ নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তরুণ অভিনয়শিল্পীরা। এতে টেলিভিশন নাটকেও অভিনয়ের মান কমেছে আগের তুলনায় বহুগুণে।

মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে জনপ্রিয় অভিনেতা তারিক আনাম খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’ দর্শকরা যেমন টেলিভিশনের দিকে ঝুঁকছেন, তেমনি অভিনয়শিল্পীরাও এখন টেলিভিশন নাটকে বেশি আগ্রহী। টেলিভিশন নাটকে দ্রুত পরিচিতি পাওয়া যেমন সম্ভব তেমনি অর্থ উপার্জনও। বাণিজ্যিক কারণেও মঞ্চ নাটক পিছিয়ে পড়েছে। অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘মঞ্চ নাটক কখনোই অর্থ উপার্জনের জায়গা ছিল না। যারা মঞ্চে অভিনয় করেন তারা নিজের আবেগ এবং তাগিদ থেকেই অভিনয় করেন। কিন্তু সেটা আর কত দিন চলবে?’

একটি নাটক মঞ্চস্থ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, শুধু টিকিট বিক্রি থেকে তা উঠে আসে না। তাই অনেক অভিনয়শিল্পী মঞ্চে কাজ করার চেয়ে টেলিভিশন নাটকে কাজ করতে আগ্রহী। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এখনই শেষ সময়। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মঞ্চ নাটক আরও বিস্তৃত হবে। মঞ্চ নাটকের জন্য সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মঞ্চের অভিজ্ঞ মানুষ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মঞ্চ নাটকের কিছু আধুনিক অডিটরিয়াম গড়ে তুললে মঞ্চ নাটককে মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু টেলিভিশনের এই যুগে নতুনরা মঞ্চের প্রতি কতটা ঝুঁকবে তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে’।

বাংলাদেশে এখন বহু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৪০টির মতো নাটক প্রচার হচ্ছে। সে জন্য প্রচুর অভিনয়শিল্পীর চাহিদা তৈরি হয়েছে। তারা অভিনয়ও করছেন, টাকাও পাচ্ছেন। কিন্তু অভিনয়ের মান থাকছে না। মঞ্চ নাটকে অনাগ্রহের কারণে দক্ষ অভিনয়শিল্পী তৈরি হচ্ছে না বলে নির্মাতারা মনে করেন। অর্থাৎ মঞ্চ নাটকের সংকট টেলিভিশন নাটককে প্রভাবিত করছে। এ বিষয়ে কথা হয় শামীম শাহেদের সঙ্গে। তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় দলে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। পাশাপাশি টিভি নাটকেও কাজ করেছেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলাভিশনে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘অভিনয় মানেই শুধু ডায়ালগ বলা নয়, অভিনয় মানে চরিত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিশে যাওয়া। ডায়ালগ থেকে আচরণ— সবকিছুতে চরিত্র হয়ে ওঠা। মঞ্চ থেকে যেসব অভিনয়শিল্পী আসেন তারা চরিত্রের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারেন। এখন যারা অভিনয় করছেন তাদের অনেকেই চরিত্রের সঙ্গে মিশতে পারেন না। সে জন্য একজন ব্যক্তি অনেক নাটক করলেও সেখানে চরিত্র ফুটে ওঠে না। এসব নাটকে ব্যক্তিকেই দেখা যায়, চরিত্র দেখা যায় না। তবে কেউ কেউ সরাসরি টিভি নাটকে অভিনয় করেও ভালো করছেন। এটা ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা।’

তরুণদের মঞ্চের প্রতি আগ্রহ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি মত দিয়েছেন নাট্যবোদ্ধারা। তারা মনে করেন, টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয়ে কেউ আগ্রহী হলেও তরুণদের মঞ্চে কাজ করা উচিত। এতে তার অভিনয় প্রতিভা আরও শাণিত হবে। একজন দক্ষ অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে মঞ্চের বিকল্প নেই। ড. ইনামুল হক বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম সবকিছু দ্রুত পেতে চায়। পরিশ্রমের বিনিময়ে কিছু পেতে চায় না তারা। সেই মনোভাব অভিনয়েও চলে এসেছে। কিন্তু এভাবে ভালো অভিনয়শিল্পী হওয়া যাবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর