বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রে নায়ক সংকট কাটছে না কেন

কোনোভাবেই কাটছে না ঢাকাই ছবির নায়ক সংকট। ২০০৮ সালে মান্নার অকাল মৃত্যু আর রিয়াজের চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়ার পর থেকে মূলত এই সংকটের শুরু। তখন থেকে শাকিব খান একাই বইছেন নায়কের ভার। অন্য নায়ক থাকলেও এবং নতুন মুখ এলেও দর্শক-নির্মাতার গ্রহণযোগ্যতা লাভে ব্যর্থ তারা। বেশকটি ‘নতুন মুখের সন্ধান’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও কার্যত কোনো ফল পাওয়া যায়নি তাতে। কেন এই সংকট এবং উত্তরণের পথ কী। এ বিষয়ে কয়েকজন চলচ্চিত্রকারের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

রাজ্জাক

আমাদের সময় আমি, আলমগীর, সোহেল রানা, ফারুকসহ অনেকে ছিলাম। সবাই সমান দক্ষতায় কাজ করে দর্শক মন জয় করেছি।

দর্শক আনুকূল্য পেতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের। এফডিসি বা আউটডোরে শুটিংয়ের সময় এসি দূরে থাক, পাখা পর্যন্ত পেতাম না। বিশেষ করে আউটডোরে গেলে এখনকার মতো ভালোমানের হোটেলেও উঠতে পারতাম না। অনেক সময় শুটিংয়ের বিরতিতে মাটিতে পড়ে ঘুমিয়েছি। তারপরও এসব নিয়ে কখনো আফসোস ছিল না। কারণ চলচ্চিত্র আর অভিনয়কে ভালোবেসেই ত্যাগ স্বীকার করতে এ জগতে এসেছি। এর সুফলও পেয়েছি। তা ছাড়া আমাদের সময় অনেক জ্ঞানী-গুণী নির্মাতা ছিলেন। তারা শতভাগ কাজ আদায় করে নিতেন। এখন সে অবস্থা আর নেই। তাই যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।

 

ববিতা

চলচ্চিত্রে নায়ক সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। হাতে গোনা নায়কের ওপর নির্ভর করে চলছে ছবি নির্মাণ। এতে অভিনয় এবং ছবির মান রক্ষা করা সবসময় সম্ভব হচ্ছে না। নতুন মুখের অভাব আছে তা কিন্তু নয়। সংকট রয়েছে দক্ষ নায়কের। এতে মানসম্মত ছবি খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একজন নায়ককে যদি বছরের সিংহভাগ ছবিতে অভিনয় করতে হয় তাহলে তার পক্ষে ভালো কাজ করা কতটা সম্ভব। পৃথিবীর কোথাও এই অবস্থা নেই। মাঝে মধ্যে নতুন যারা আসছে তাদের মধ্যে অল্প পরিশ্রমে দ্রুত তারকা এবং অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার লোভ বেশি। মেধাহীনতায় ভুগছে তারা। শূন্য থাকছে ফলাফল। নির্মাতারাও নতুনদের শিখিয়ে পড়িয়ে কাজ আদায় করে নিতে পারছেন না। নির্মাতারা যদি সঠিক নির্দেশনা দেন তাহলে হয় তো এই সংকট মোচন হতে পারে।

 

 

আজিজুর রহমান

বিভিন্ন সময় অনেক প্রযোজক-পরিচালকই নতুন মুখ উপহার দেন। আস্থার সংকটে সেসব নতুন মুখ অকালেই ঝরে যায়। সংকট কাটাতে সুপার হিরো-সুপার হিরোইন নামে একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখান থেকেও নির্ভরযোগ্য কোনো শিল্পী বের হয়ে আসেনি। দু-একজন এখনো কাজ করছে বটে, কিন্তু শিল্পী হতে পারেনি। চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট কাটাতে এফডিসির উদ্যোগে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ শিরোনামে যে কার্যক্রম একসময় চালু ছিল তাও নানা জটিলতায় বন্ধ। ফলে চলচ্চিত্রে নায়ক সংকট কোনোভাবেই কাটছে না। আসলে শুধু প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম চালিয়ে লাভ নেই। এতে স্বচ্ছতা থাকতে হবে, উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। না হলে এই সংকটের সমাধান হবে না।

 

অনুপম হায়াৎ

এ সময়ে চলচ্চিত্রে নায়ক হয়ে আসেন ইমন, নিরব, আরজু, সাইমন, বাপ্পি, আমান, সাগর, নিলয়, রোজ, জায়েদ খান, আরিফিন শুভসহ অনেকে। তারা দর্শকপ্রিয়তা খুব একটা পাচ্ছেন না।

নতুনদের দক্ষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নির্মাতার। আসলে নির্মাতারা তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না বলে জ্বলে উঠতে গিয়েও বার বার নিভে যাচ্ছেন তারা। এখন অনেক ভালো নির্মাতা এলেও নানা প্রতিকূলতায় এ বিষয়ে নজর দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। তা ছাড়া ছবির ব্যবসাও ভালো নয়। দর্শক এমনিতেই সিনেমা হলে যায় না। তাহলে তাদের কাজের বিচার করবে কে? অভিনয় শেখার প্রতি নতুনদের আগ্রহ নেই। ফলে ঢাকাই ছবিতে নায়ক সংকট শুধু চলমান নয়, আগামীর জন্য তৈরি হচ্ছে চরম অনিশ্চয়তা ও বিশাল শূন্যতা।

সর্বশেষ খবর