সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কৌতুক অভিনেতা সংকটে ঢালিউড

আলাউদ্দীন মাজিদ

কৌতুক অভিনেতা সংকটে ঢালিউড

ঢাকার ছবিতে কৌতুক অভিনেতা সংকট এখন চরমে। চলচ্চিত্রের অপরিহার্য অংশ কৌতুক। দৈনন্দিন নানা জটিলতায় মানুষের জীবন যখন নাভিশ্বাসে ওঠে তখন একটু হাসি এনে দেয় স্বস্তি। বিনোদনের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে মানুষকে আনন্দ দেওয়া। চলচ্চিত্র হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিনোদনের মাধ্যম। আর চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতারা এই আনন্দ দেওয়ার কাজটি করে থাকেন। শুধু ঢালিউড নয়, বিশ্বের সব চলচ্চিত্রের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে কৌতুক পর্ব। ঢালিউডের  সূচনালগ্ন থেকেই চলচ্চিত্রে কৌতুকের আয়োজন ছিল। সোনা মিয়া, ফ্যাটি মহসিন, সাইফুদ্দিন, হাসমত, পরান বাবু, মতি, বেবী জামান, ব্ল্যাক আনোয়ার, খান জয়নুল, রবিউল, আনিস, টেলি সামাদ, দিলদার, কাজল, সুরুজ বাঙালী, আফজাল শরীফ, ববি, জ্যাকি আলমগীরসহ অনেকে ঢাকার  চলচ্চিত্রে কৌতুকশিল্পীর চরিত্র রূপায়ণের মাধ্যমে দর্শক মনে ঠাঁই করে নেন। এমনকি আমজাদ হোসেন, দিলীপ বিশ্বাস, সুভাষ দত্তের মতো খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকাররা বড় পর্দায় ক্যারিয়ার শুরু করেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাকার চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতাদের অবস্থান ছিল জমজমাট। কৌতুক অভিনেতাদের এমনই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা ছিল যে, টেলি সামাদ ও দিলদারকে নায়ক করে একসময় চলচ্চিত্র  পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে এবং সেসব ছবি রীতিমতো সুপারহিট ব্যবসা করেছে। তখন অবস্থা এমন ছিল যে, কৌতুক পর্ব ছাড়া ছবি নির্মাণ অসম্ভব। আর এখন এই প্রধান বিনোদনটিই চলচ্চিত্র থেকে রীতিমতো উধাও হয়ে গেছে। নেই আগের মতো কৌতুক অভিনেতা এবং কৌতুকদৃশ্য। ফলে বর্তমানে ছবি দেখে আনন্দ না পাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে যুক্ত হয়েছে ছবিতে কৌতুকপর্ব বা কৌতুক অভিনেতা না থাকা।

কৌতুক অভিনেতা আনিস বলেন, মানুষ হাসানো খুবই কঠিন একটি কাজ। আর এই কঠিন কাজটি সূচারুরূপে সম্পন্ন করতে পেরেছি বলেই দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। এর জন্য চর্চা দরকার। যা এখন নেই। এখন অনেকে এই চরিত্রটিকে হালকাভাবে নেয় বলে দর্শকহৃদয়ে আসন গড়তে পারে না। ভাঁড়ামিতে পরিণত হয়েছে কৌতুক।

আফজাল শরীফ বলেন, আমার কাছে সবসময় মনে হয় কৌতুক অভিনেতাদের অভিনয়ের সুযোগ বেশি। একই সঙ্গে কঠিন একটি কাজ। কারণ সেকেন্ডের মধ্যে অভিনয় বের করে আনতে হয়। দুঃখজনক হচ্ছে বর্তমানের ছবিতে কৌতুকের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। আগের ছবিতে কৌতুকের একটি বিশেষ অংশই থাকত। দেখা যেত কৌতুক অভিনেতা পর্দায় আসার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক হাসতে শুরু করেছে। এখন দর্শক আর হাসে না। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে ক্যারেক্টার লিংক করতে পারলেই দর্শক হাসবে। এখন সেই অবস্থা কোথায়।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমান বলেন, চলচ্চিত্র মানে পূর্ণ বিনোদন আর বাণী। কঠিন কোনো বিষয়কে গুরুগম্ভীর না করে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারলে তা দর্শকহৃদয়ে সহজে পৌঁছয়। আবেদন স্থায়ী হয়। এ ক্ষেত্রে আমার ‘অশিক্ষিত’ ও ‘ছুটির ঘণ্টা’র কথা উল্লেখ করব। দুটি ছবির বিষয়ই মর্মান্তিক, জটিল। তা সত্ত্বেও হাস্যরসের মাধ্যমে গল্প গড়িয়েছে বলে এখনো দর্শক ছবি দুটোকে মনে রেখেছে। মানুষ বিনোদন পেতে ছবি দেখতে যায়। কৌতুক হচ্ছে বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের সময় এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতাম বলেই ওই সময়ের ছবিগুলো এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে। কৌতুক ছাড়া ছবি পূর্ণতা পেতে পারে না। নির্মাতা এফ আই মানিক বলেন, এখনকার দর্শক বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আগের মতো আলাদা করে কৌতুক দেখে না। তা ছাড়া কৌতুকের মতো কঠিন একটি কাজ সহজে সব শিল্পী আয়ত্তে আনতে পারে না। ফলে এই চরিত্রে কেউ বেশিদিন টিকতে পারে না। এখন অন্য চরিত্রের চেয়ে নায়ক-নায়িকা হওয়ার প্রতি সবার ঝোঁক বেশি।

এ ছাড়া নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে বলে অনেকে আলাদা করে কৌতুকের দৃশ্য বা কৌতুকশিল্পী নিতে চায় না। আমার মতে দর্শককে পূর্ণ বিনোদন দিতে কৌতুক বা কৌতুক অভিনেতার বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর